বাংলাদেশের ওষুধশিল্প সফল ও সম্ভাবনাময় খাতগুলোর একটি। এটি সাশ্রয়ী জেনেরিক ওষুধ তৈরি করে। এগুলো দেশে ও উন্নয়নশীল বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে সেবা দেয়। দেশের ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশই মেটায় এই ওষুধশিল্প খাত। ১৫০টিরও বেশি দেশে সাশ্রয়ী জেনেরিক ওষুধ রপ্তানি করে। জেনেরিক উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল উদ্ভাবক দেশে পরিণত হওয়ার প্রশ্নে বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে একটি মৌলিক প্রশ্ন উঠে আসছে: বাংলাদেশ কি আসলেই বিশ্ব ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণায় প্রকৃত উদ্ভাবক হতে পারবে?

নতুন ওষুধ তৈরি একটি জটিল প্রক্রিয়া। প্রথমেই প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণা শুরু হয়। এই গবেষণা ল্যাবরেটরি ও প্রাণীদের ওপর করা হয়। এটি মানুষের ওপর পরীক্ষা করার আগে ওষুধের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা জানা জরুরি। প্রি-ক্লিনিক্যাল ফল ভালো হলে ওষুধ ক্লিনিক্যাল গবেষণায় যায়। এর অনেক ধাপ আছে। প্রথম ধাপের পরীক্ষায় অল্পসংখ্যক সুস্থ মানুষ অংশ নেয়। এখানে মূলত ওষুধের নিরাপত্তা ও সঠিক ডোজ দেখা হয়। এই ধাপ সফল হলে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় আরও বেশি রোগী অংশ নেয়। এখানে ওষুধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা আরও ভালোভাবে দেখা হয়। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় অনেক রোগী অংশ নেয়। এখানে ওষুধের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা হয় এবং অন্য ওষুধের সঙ্গে তুলনা করা হয়। সব ধাপ সফল হলে ওষুধ প্রস্তুতকারক নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। বাংলাদেশে এই সংস্থা হলো ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। 

বর্তমানে জেনেরিক ওষুধের ওপর জোর দেওয়ায় মানুষ কম দামে ওষুধ পাচ্ছে। তবে নতুন ওষুধ আবিষ্কারের দিকে মনোযোগ দিলে স্থানীয় স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বেশি জায়গা করে নেওয়া যাবে। অর্থনীতিতে উন্নতি হবে। বিজ্ঞানী, গবেষক ও টেকনিশিয়ানদের জন্য নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে। নতুন ওষুধ তৈরি হলে পেটেন্ট করে দেশ ও বিদেশে বিক্রি করে অনেক আয় করা যাবে। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে বহুমাত্রিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ও মহামারির আশঙ্কা। এ ছাড়া বাড়ছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, যক্ষ্মা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের মতো রোগের মাত্রা। স্থানীয়ভাবে ওষুধ আবিষ্কার করলে এসব রোগের জন্য বিশেষভাবে ওষুধ তৈরি করা যাবে। এতে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো হবে এবং অন্য দেশের ওষুধের ওপর নির্ভরতা কমবে। ওষুধ উদ্ভাবনে বিনিয়োগ শুধু অর্থনৈতিক সুযোগ নয়, নৈতিক দায়িত্বও। কারণ দেশে সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের বোঝা ও ঝুঁকি অনেক বেশি। এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ও বিশ্বনেতা বানাতে পারে। এর জন্য অনেক টাকা ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ দরকার। উন্নত গবেষণাগার ও ডেটা ব্যবস্থাপনার জন্য ভালো অবকাঠামো তৈরি করতেও অনেক খরচ হবে। ওষুধ আবিষ্কারের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ বিজ্ঞানীর অভাবও একটি বড় সমস্যা। তা ছাড়া জেনেরিক ওষুধের চেয়ে নতুন ওষুধের অনুমোদন প্রক্রিয়া অনেক জটিল। 

এত সমস্যা থাকার পরেও বাংলাদেশের কিছু বিশেষ সুযোগ আছে। এ দেশের মানুষের জিনগত বৈচিত্র্য অনেক। এর ফলে রোগের কারণ ও ওষুধের প্রতিক্রিয়ার জিনগত দিক খুঁজে বের করা সহজ হতে পারে– যা ওষুধ তৈরিতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী ওষুধের জ্ঞান অনেক পুরোনো। এখানে অনেক ঔষধি গাছ আছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতা নিতে পারে। এতে অর্থ, প্রযুক্তি ও জ্ঞান পাওয়া যাবে। 

ওষুধ উদ্ভাবনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রথমেই দরকার সরকারের শক্তিশালী নীতি ও উদ্যোগ।  ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নতুন ওষুধ পরীক্ষা ও অনুমোদনের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। ওষুধ গবেষণা ও উন্নয়নে সরকারি তহবিল ও অনুদান দিতে হবে। এ খাতে বিনিয়োগকারীদের কর ছাড় দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার উন্নত করতে এবং বিশেষায়িত গবেষণা ইনস্টিটিউট তৈরি করতে হবে। ওষুধ আবিষ্কারের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ কর্মী তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে। শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। উদ্ভাবনকে উৎসাহিত এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে মেধাস্বত্ব সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ডেটা ব্যবস্থাপনার উন্নতি করতে হবে।

বেসরকারি খাতকে জেনেরিক ওষুধ তৈরির বাইরে নতুন ওষুধ আবিষ্কারের গবেষণায় আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণের সুযোগের জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের চেষ্টা করতে হবে। ওষুধ আবিষ্কারের জন্য দক্ষ কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিশেষে বলতে হয়, উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ শুধু তাদের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই অর্জন করবে না, বরং নতুন ওষুধ তৈরির বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তহবিল ও অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা থাকলেও দেশের বিশেষ সুযোগ এবং নীতিনির্ধারক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে ওষুধ উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে যেতে পারে। 

মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম: জনস্বাস্থ্য 
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র পর ক ষ র জন য সরক র র ওপর সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ