বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের একঝাঁক জনপ্রিয় তারকা উঠে এসেছেন যে প্ল্যাটফর্ম থেকে, সেই জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘লাক্স সুপারস্টার’ আবারও ফিরছে নতুন রূপে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে।

দীর্ঘ সাত বছর বিরতির পর আবার শুরু হয়েছে নতুন তারকা সন্ধানের যাত্রা। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতার নিবন্ধন প্রক্রিয়া, চলবে আগামী ৫ জুন পর্যন্ত। ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী আগ্রহী নারীরা আবেদন করতে পারবেন লাক্স বাংলাদেশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া লিংকে গিয়ে।

নতুন মৌসুমে প্রতিযোগিতার ফরম্যাটে আনা হয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এবার শুধু অভিনয় বা স্টাইল নয়— মূল্যায়ন করা হবে কনটেন্ট তৈরির দক্ষতাও। প্রতিযোগীরা নিজের ভেতরের শিল্পীকে যেমন ফুটিয়ে তুলবেন, তেমনি তাদের ডিজিটাল সক্ষমতাও থাকবে পরীক্ষার আওতায়।

এবারের সবচেয়ে বড় চমক বিচারক প্যানেলেই। বিচারকের আসনে রয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান, ছোটপর্দার মেহজাবীন চৌধুরী এবং তরুণ নির্মাতা রায়হান রাফী। শুধু বিচারক নয়, তারা থাকবেন মেন্টর হিসেবেও, তরুণ প্রতিযোগীদের পথ দেখাবেন স্বপ্নের ভুবনে এগিয়ে যেতে।

প্রকাশিত প্রোমোশনাল ভিডিওতে তাদের সঙ্গে দেখা গেছে সাবেক লাক্স তারকারা বিদ্যা সিনহা মিম, ইশরাত জাহিন, মুমতাহিনা টয়া এবং নীলাঞ্জনা নীলাকে। যেন পুরোনো তারকা আর নতুন সম্ভাবনার এক মিলনমেলা।

২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করা ‘লাক্স সুপারস্টার’ আয়োজনটি ২০১০ সাল পর্যন্ত নিয়মিত সম্প্রচারিত হয়। এরপর অনিয়মিতভাবে ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের আসরে বিজয়ী হন মিম মানতাসা।

শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এবারের প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবে আয়োজক প্রতিষ্ঠান। এবার কারা উঠবেন আলো ঝলমলে দুনিয়ায়, কারা হবেন আগামী দিনের ‘লাক্স সুপারস্টার’ জানার অপেক্ষায় গোটা বিনোদনপাড়া!
 

ঢাকা/রাহাত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

স্মরিব ‘কাল নিরবধি’

আমার অনেক বন্ধুবান্ধব তাঁর শিক্ষার্থী ছিলেন। আমার অনেক অগ্রজেরও শিক্ষক ছিলেন তিনি। তবু পাঁচ বছর আগে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন। যুক্তি ছিল তাঁর একটাই– তাঁর কন্যার শিক্ষককে তিনি ‘তুমি’ বলতে পারেন না। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর কন্যা রুচিরা আমার শিক্ষার্থী ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। বেনু এ নিয়ে অনুযোগ করত, “আপনি আমাকে ‘তুমি’ বলেন, আর ওকে ‘আপনি’ বলেন কেন?” স্মিতহাস্যে তিনি বলতেন, ‘তুমি হলে গিয়ে কবীর ভাইয়ের মেয়ে। তবে তুমি চাইলে তোমাকেও ‘আপনি’ বলতে পারি’। বেনু বিব্রত হতো।
বহু বলা-কওয়ার পরে স্যারের কাছে আমি ‘তুমি’ বাচ্য হলাম সাত বছর আগে ২০১৮ সালে। সে বছর বইমেলাতে প্রকাশিত আমার ‘বেলা-অবেলা’ বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন তিনি। একুশে ফেব্রুয়ারিতে রমেশ চন্দ্র মজুমদার মিলনায়তনে সে অনুষ্ঠানে অপূর্ব বলেছিলেন তিনি। সত্যি কথা বলতে, যে প্রশংসা করছিলেন তিনি আমার, তাতে আমি লজ্জাই পাচ্ছিলাম। সমালোচনা করতেও তাঁর যেমন কুণ্ঠা ছিল না, প্রশস্তি করতেও তাঁর কোনো দ্বিধা ছিল না। ২০১৮-এর ২১ ফেব্রুয়ারিতেই তাঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখা। তার ক’দিন আগে গুলশানে তাঁর বাসায় গেলে গল্প জমে উঠেছিল বেবী চাচি আর স্যারের সঙ্গে। চাচির তাড়া থাকায় উঠে গিয়েছিলেন আগেই, কিন্তু স্যারের সঙ্গে তাঁর আমার পারিবারিক গল্প হয়েছিলে অনেক। 
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের নাম প্রথম শুনি ষাটের দশকে কিশোর বয়সে। তাঁকে প্রথম দেখি ১৯৬৯ সালে বাংলা একাডেমিতে কোনো এক সভায়। তাঁর লেখা প্রথম পড়ি ১৯৭২ সালে। লেখাটির নাম– মুনীর চৌধুরী, থিয়েটার পত্রিকার ‘মুনীর চৌধুরী’ সংখ্যায় বেরিয়েছিল। ১৯৭৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার যোগদানের পরে পরবর্তী দু’বছরে তাঁর সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে। প্রতিবারে স্যার আমাকে মুগ্ধ করেছেন তাঁর পাণ্ডিত্যে, বাচনে, ব্যক্তিত্বে। তবে সে সময়ে চেনাজানা হলেও তাঁর সঙ্গে তেমন কোনো নৈকট্য গড়ে ওঠেনি।
আনিস স্যারের সঙ্গে বয়োজ্যেষ্ঠ-বয়ঃকনিষ্ঠ সহকর্মীর একটি হৃদ্যতা গড়ে উঠল আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে যখন আমি উচ্চশিক্ষা শেষে বিদেশ থেকে ফিরে এলাম। তিনটি কারণে আমরা খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলাম। এক, তাঁর ও আমার প্রায়শই যাতায়াত ছিল প্রয়াত অধ্যাপক মুশাররফ হোসেন, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ও জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর বাড়িতে। সুতরাং সেই সূত্রে গড়ে ওঠা তিনটে ক্ষেত্রতে নানান গল্প-আলোচনায় আমাদের মাঝে একটি সৌহার্দ গড়ে ওঠে।
দুই, আমার লেখালেখির কারণে আমি যখন-তখন তাঁর শরণাপন্ন হতাম। মনে আছে, একদিন বেশ রাতে তাঁকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলাম, ‘ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন’ রবীন্দ্রনাথের কোন কবিতার অংশ? বলে দিয়েছেন এক লহমায়। আরেকদিন কলা ভবনের সামনের পথে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, প্রমথ চৌধুরীর ‘রায়তের কথা’ কবে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রশ্ন শেষ করার আগেই উত্তর পেয়েছিলাম। এক জীবন্ত-চলন্ত বিশ্বকোষ ছিলেন তিনি। আর ঈর্ষণীয় ছিল তাঁর স্মরণশক্তি, যার প্রমাণ তাঁর ‘কাল নিরবধি’র প্রতিটি পাতায়। 
একদিন তাঁর বাড়িতে কথা প্রসঙ্গে বেরিয়ে গেল যে বছর আমি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি, সে বছর যশোর বোর্ডের বাংলার প্রধান পরীক্ষক ছিলেন আনিস স্যার। আমি জানালাম যে সে বছর বোর্ডে বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর ৮৪ পেয়েছিলাম। স্যার একমুহূর্ত ভেবে বললেন, “আপনি দ্বিতীয় পত্রে ‘আমি, বেবী, মঞ্জু আপা’ নামে এক গল্প লিখেছিলেন”। আমি একই সঙ্গে হতবাক ও বিব্রত। হতবাক তাঁর স্মরণশক্তিতে, বিব্রত কারণ রচনা লেখার বদলে সত্যিই এক ত্রিভুজ প্রেমের গল্প ফেঁদেছিলাম অর্বাচীন আমি। তার চেয়েও বড় কথা, গল্পের নামটি আমি চুরি করেছিলাম আমিনুজ্জামানের ‘আমি, বেবী, মঞ্জু আপা’ নামের ছোটগল্প থেকে। আমিনুজ্জামান আনিস স্যারের চাচাতো ভাই, এবং ‘বেবী’ ভাবির ডাকনাম। আমিনুজ্জামানের ছোটগল্পের ভিত্তিতে প্রয়াত সুভাষ দত্ত ‘আয়না ও অবশিষ্টের’ ‘অবশিষ্ট’ পর্বটি করেছিলেন, ‘আয়না’ পর্বটি ছিল প্রয়াত সৈয়দ শামসুল হকের ছোট গল্প ‘রোকেয়ার মুখ’ অবলম্বনে। তিন, আশির দশকে এরশাদবিরোধী সংগ্রামের কালে নানান সামাজিক আন্দোলনে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। মনে আছে, ‘নাগরিক কমিটি’ গঠিত হলে প্রয়াত অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ, আনিস স্যার ও আমি খুব কাছাকাছি থেকে কাজ করেছি। নানান সময়ে নানান বিপদাশঙ্কায় তিনি আমাকে সাবধান করে দিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে বেনুকেও ফোন করতেন। একবার ‘স্বৈরাচারের স্বরূপ’ নামে একটি লেখার কারণে আমার বিপদ হতে পারে ভেবে তিনি আমাদের এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় চলে এসেছিলেন গাড়ি নিয়ে আমাকে তাঁর বাসায় রাতে থাকার জন্য। বেনু রাজি হয়নি।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন না, কিন্তু আমার এক গুরু ছিলেন সর্ব অর্থেই। জীবন ও জগতের বহু শিক্ষা তাঁর কাছে, বহুভাবে তিনি ঋদ্ধ করেছেন আমাকে, তাঁর স্নেহধন্য হতে পেরেছিলাম। আমার শিক্ষকতার পঞ্চমুখ ছিলেন তিনি– হয়তো রুচিরার প্রভাবিত হয়ে; সপ্রশংসক পাঠক ছিলেন আমার লেখার– আমার ‘রবীন্দ্রনাথের অর্থনীতি-চিন্তা’র কথা কতজনকে যে বলেছেন; শুনতেন প্রতি পক্ষে ‘যা না বললেই নয়’ শীর্ষক আমার নিয়মিত বেতার কথিকার। যোগ্য ছিলাম না এর কোনো কিছুরই, কিন্তু স্নেহ তো অন্ধ।
আজ যখন ভাবি, কোনো একটি জায়গায় ঠেকে গেলে তাঁর পরামর্শ আর পাব না, কোনো একটি জিনিস জানতে চাইলে তাঁকে আর পাওয়া যাবে না, আমাকে সাবধান করে দেওয়ার জন্য তিনি আর নেই, তখন বড় অসহায় বোধ করি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্মরিব ‘কাল নিরবধি’