স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ
Published: 20th, May 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে মিতু আক্তার (৩২) নামে এক গৃহবধূ খুন হয়েছেন। তার স্বামী সুমন মিয়া পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে জানান, তিনি নিজেই তার স্ত্রীকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন।
সোমবার (১৯ মে) দিবাগত রাত ২ টার দিকে মিরকাদিম পৌরসভার পূর্বপাড়া এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।পরে ভোর ৫ টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেন স্বামী সুমন মিয়া (৫০)।
জানা গেছে, সুমন মিয়া মিরকাদিম পৌরসভার পূর্বপাড়ার শরিয়তউল্লা মিয়ার ছেলে। নিহত মিতু আক্তার ওই পৌরসভার নৈয়দিঘীর পাথর গ্রামের মন্টু মিয়ার মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৮ মাস আগে মিতু আক্তারকে বিয়ে করেন সুমন। মিতু আক্তারের আগে আরেকটি বিয়ে হয়েছিলো। সেখানে তিনটি সন্তান রয়েছে। সুমনেরও এটি দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ, ঝগড়াঝাটি লেগেই ছিলো। কিছুদিন আগে ঝগড়া করে মিতু তার বাবার বাড়িতে চলে গেলে গতকাল তার স্বামীর বন্ধুরা তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনে। সেদিনই রাত ২ টার দিকে বন্ধুদের সাথে মদ্যপান করে বন্ধুদের সহযোগিতায় স্ত্রী মিতুকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সুমন। পরে ভোরে স্বেচ্ছায় থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম জানান, স্ত্রীকে হত্যা করে নিজেই থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে স্বামী সুমন মিয়া। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/রতন/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ
বরিশালের আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকার উৎস ঐতিহ্যবাহী টরকী–বাশাইল খালটি করুণ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নাব্যতাসংকট, নির্বিচার দখল, দূষণ ও কর্তৃপক্ষের লাগাতার অবহেলার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের এমন পরিণতি খুবই দুঃখজনক। এটি পরিবেশের ওপর কাঠামোগত আগ্রাসনের ধারাবাহিকতারই চিত্র।
খালটি যখন প্রবহমান ছিল, তখন তা ছিল দুই উপজেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের এখন সেচের
জন্য ‘ডাবল লিফটিং’ (দুবার পানি উত্তোলন) করতে হচ্ছে। প্রথমে পাম্প দিয়ে কোনোমতে খালে পানি আনতে হয়। এরপর সেই পানি আবার পাম্প দিয়ে জমিতে দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কৃষকের সেচ খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ শতক জমিতে যেখানে খরচ হতো ৭০০ টাকা, সেখানে এখন গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে অনেক কৃষক বোরো আবাদ ছেড়ে মাছের ঘের বা পানের বরজ তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন, নয়তো আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে স্থানীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষি অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামতে বাধ্য।
এ বিপর্যয়ের মূল কারণটি অত্যন্ত স্পষ্ট—অবৈধ দখলদারত্ব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। খালের উৎসমুখ, অর্থাৎ টরকী বন্দরসংলগ্ন পালরদী নদীর মোহনা দখলদারেরা পুরোপুরি রুদ্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাকা ও আধা পাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গৌরনদী ভূমি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ‘খালের জমি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি’—এমনটা বলা হলেও দখলদারেরা কীভাবে খালের জায়গাকে ‘রেকর্ডীয় সম্পত্তি’ বা ‘ইজারা নেওয়া জমি’ দাবি করেন? এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যেই সরকারি সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ করছেন।
এই দখলদারদের দাপট এতটাই বেশি যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) গত বছর খাল খননের আবেদন পেয়েও কাজ শুরু করতে পারেনি। বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাহেদ আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, অবৈধ স্থাপনার কারণে খননযন্ত্র চালানো বা খনন করা মাটি রাখার মতো সামান্য জায়গাও সেখানে নেই। অর্থাৎ মুষ্টিমেয় অবৈধ দখলদার একটি সরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে তার আইনি দায়িত্ব পালনে পঙ্গু করে রেখেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন এই দখলদারত্বের সামনে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ কেন এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কার ইশারায় এই দখলদারত্ব এত বছর ধরে চলতে দেওয়া হলো? টরকী–বাশাইল খালকে পুনরুদ্ধার করতে এখন কি কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি আমরা এ জলধারার উৎসের পুরোপুরি মৃত্যু নিশ্চিত হতে দেখব?