বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বিকে গতকাল সোমবার রাতে থানা হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁকে সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে সাইফুলসহ তিনজনকে থানা হেফাজত থেকে নিজ জিম্মায় ছাড়িয়ে নিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।

পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, আধা ঘণ্টা আগে (বেলা সাড়ে তিনটা) এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদের অনুরোধে তাঁর জিম্মায় তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁরা এ ধরনের কাজে জড়িত হবেন না, এই মর্মে মুচলেকা দিয়েছেন।

গতকাল রাতে ধানমন্ডিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয়ে সাইফুলসহ কয়েকজন পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি ছিল ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা। এরপর তিনজনকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।

বিশৃঙ্খলায় জড়িত ব্যক্তিদের থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে আসার বিষয়ে হান্নান মাসউদকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘একটু ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। সেই ভুল–বোঝাবুঝিটা নিরসন করতে আসছি। বাইরের বিভিন্ন গোষ্ঠী এটার সঙ্গে জড়িত আছে, আমরা যেটা দেখছি। মানে, আমাদের মানুষগুলোকে ব্যবহার করার চেষ্টা করতেছে বিভিন্ন জায়গায়।’

গতকাল রাতের ওই ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের এসি শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, একজন প্রকাশককে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে তাঁর বাসায় কিছু লোক ঢোকার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। পরে ওই ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে ওই প্রকাশককে গ্রেপ্তার করতে বলেন। কিন্তু ওই প্রকাশকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ কারণে তাঁকে গ্রেপ্তারে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয়ধারীরা অজ্ঞাতনামা হিসেবে প্রকাশককে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে চাপ দেন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না জানালে তাঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। আবাসিক এলাকায় বিশৃঙ্খলা হতে পারে—এমন বিবেচনায় তিনজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল।

তিনজনকে ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষে এনসিপি নেতা হান্নান মাসউদ থানা থেকে বের হলে তাঁকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করে বলেন, যাঁদের ছাড়িয়ে নিতে এসেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ ছিল। এর জবাবে হান্নান মাসউদ বলেন, ‘আমি আমাদের বৈষম্যবিরোধী (ছাত্র আন্দোলন) আহ্বায়কের মেসেজটা পেয়ে দেখতে আসছি। বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে তদন্ত করা হবে। আর যাঁদের কথা বলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে।’ কিন্তু আপনি তো তাঁদের ছাড়িয়ে নিতে আসছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে হান্নান মাসউদ বলেন, ‘এরা আসলে ব্যবহৃত হইছে। এদেরকে যারা ব্যবহার করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও অ্যাকশন নেওয়া হবে।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হতাহতের ঘটনায় ইচ্ছেমতো আসামি করে মামলা করার অনেক ঘটনা ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, আসামি করা হয়েছে চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে। আবার ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষ ও স্থানীয় বিরোধও ভূমিকা রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়, মামলা হলেই গ্রেপ্তার করা যাবে না।

২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, অতি উৎসাহী ও স্বার্থান্বেষী মহল ঢালাওভাবে মামলা গ্রহণে পুলিশের ওপর চাপ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন‘আমি বলছি, আপনি গ্রেপ্তার করেন,’ পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ানো তিনজন হেফাজতে৩ ঘণ্টা আগে

গতকালের ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) উদ্দেশে এক তরুণ বলেন, ‘আপনি কেন এইখানে কথা বলতেছেন এইভাবে। আপনি ওসি, আপনি গ্রেপ্তার করলেন না কেন? আমি বলছি, আমি বলছি.

..আপনি গ্রেপ্তার করেন।’

তখন ওসি বলেন, ‘ওনার নামে মামলা নেই ।’ তরুণ বলেন, ‘মামলা আমি করব, আপনি গ্রেপ্তার করেন।’ ওসি জবাব দেন, ‘আমার সিনিয়র (জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা) বলছেন, মামলা না থাকলে গ্রেপ্তার করা যাবে না।’ ওসি তখন তরুণদের উদ্দেশে ‘সিনক্রিয়েট’ (অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি) না করার অনুরোধ করেন। এরপরও তরুণেরা গ্রেপ্তার করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তাঁরা ওসিকে বারবার বলছিলেন, ওসি টাকা খেয়েছেন।

এরপর সাইফুল ইসলামসহ তিনজনকে থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ। আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেসবুকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, নৈতিক স্খলনের কারণে সাইফুল ইসলামকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ন ন ন ম সউদ গ র প ত র কর ধ নমন ড ত নজনক প রক শ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

আদাবরে কুপিয়ে হত্যা: তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল সেনাবাহিনী

রাজধানীর আদাবরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে রিপন সরদার (৪২) খুনের ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রিপন হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইমন ওরফে ভাইগ্না ইমন ওরফে দাঁতভাঙা ইমনকে তাঁর দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে দুটি সামুরাই উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সেনাবাহিনী জানায়, গতকাল ভোরের দিকে রাজধানীর আদাবর থানার বালুর মাঠ এলাকায় বাসায় ঢুকে রিপন নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিশোর গ্যাং এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ। পরে আহত অবস্থায় রিপনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে তিনি মারা যান।

৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গতকাল সকালে বালুমাঠ এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায় এলেক্স সবুজ, মনির ও ইমন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নির্ণয় করে অভিযান চালিয়ে ইমন ও তাঁর দুই সহযোগীকে দুটি সামুরাইসহ গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান চালানোর কিছুক্ষণ আগে সবুজ ও মনির সেই জায়গা থেকে পালিয়ে যান। তাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। বাকিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে আদাবরের ১০ নম্বরের বালুর মাঠ এলাকায় ‘বেলচা মনির’ ও ‘রাজু গ্রুপে’র মধ্যে এ মারামারি হয়। ‘বেলচা মনিরের’ লোকজন ‘রাজু গ্রুপের’ রিপনকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের মৃত্যু হয়।

আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।

আরও পড়ুনআদাবরে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারামারিতে নিহত ১১৮ ঘণ্টা আগে

তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের ছেলে ইমন সরদার গতকাল দাবি করেন, রিপন মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। রিপন পেশায় চা–দোকানি। বেলচা মনিরের লোকজনের সঙ্গে দুই দিন আগে তাঁর বাবার কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর মা আরজু বেগমও আহত হয়েছেন। তাঁদের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়।

পুলিশের ভাষ্য, নিহত রিপন সরদার মাদক কারবারি রাজুর চাচাতো ভাই। ‘রাজু গ্রুপ’ ও ‘বেলচা মনিরের’ নেতৃত্বে আদাবরের ১০ ও ১৭ নম্বর এলাকায় মাদক ব্যবসা হয়। ওই বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। নিহত রিপনের বিরুদ্ধে ভোলায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আদাবরে কুপিয়ে হত্যা: তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল সেনাবাহিনী