বন্দর প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় আগামী ২৬ জুন নির্বাচন ঘোষনা করা হয়েছে।  মঙ্গলবার (২০ মে) বেলা ১১টায় বন্দর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বন্দর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি  মো: মামুন মিয়ার সভাপতিত্বে সাধারণ সস্পাদক মহিউদ্দিন সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় ২০২৩-২৫ইং অর্থ বছরের রিপোর্ট পেশ করেন অর্থ সস্পাদক মেহেদী হাসান সজীব।

ওই সময় বন্দর প্রেসক্লাব এর ২০২৫-২৭ইং এর নির্বাচনে ১৩ সদস্য কার্যনির্বাহী পদে ১৫ ও ১৬ জুন মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। ১৬জুন বিকালে বাছাই ও ১৮ জুন মনোয়নপত্র প্রত্যাহার এবং ২৬ জুন ভোট গ্রহনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

দ্বি- বার্ষিক সাধারন সভায় উপস্থিত ছিলেন বন্দর প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা জি.

এম. মাসুদ, আতাউর রহমান, সরদার মোহাম্মদ আলীম, মোঃ কবির হোসেন, সহ সভাপতি মেহেবুব হোসেন, সহ সাধারন সম্পাদক জি.এম. সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক আমির হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান রিপন, প্রচার সম্পাদক মোঃ শাহ জামাল, ক্রীড়া সম্পাদক দ্বীন ইসলাম দীপু, নির্বাহী সদস্য  জি.এম. মজনু, নূরজ্জামান মোল্লা, নাসির উদ্দিন, মাহফুজ আলম জাহিদ,ইমরান মৃধা, স্থায়ী সদস্য শহীদুজ্জামান ফিরোজ, লতিফ রানা, টুটুল প্রিন্স, ইকবাল হোসেন, মেহেদী হাসান মুন্না ও মামুনুর রহমান প্রমুখ।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

হজ, কলেরা ও কোয়ারেন্টিন

হজ পবিত্র ধর্মীয় আচার হলেও ইতিহাসে এটি বারবার মহামারির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আরব উপদ্বীপের হেজাজ অঞ্চল, বিশেষ করে মক্কা ও মদিনায়, বিভিন্ন সময়ে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যার মধ্যে কলেরা ছিল অন্যতম। এই মহামারিগুলো রোধে কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

মক্কায় মহামারি

মক্কায় মহামারির প্রথম লিখিত বিবরণ পাওয়া যায় ইবনে কাসিরের আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে। ৯৬৮ সালে ‘আল-মাশরি’ নামক একটি মহামারি মক্কায় আঘাত হানে, যার ফলে অসংখ্য হজযাত্রী এবং তাঁদের বহনকারী উটের মৃত্যু হয়। এমনকি যাঁরা হজ পালন করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁরাও অল্প সময়ের মধ্যে মারা যান। এ ঘটনা মক্কার ইতিহাসে মহামারির প্রাথমিক প্রভাবের একটি উদাহরণ।

কলেরার প্রাদুর্ভাব

ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির ফলে হজযাত্রা আরও সহজ ও ব্যাপক হয়। বাষ্পীয় জাহাজের প্রচলনের কারণে অধিক সংখ্যক হজযাত্রী স্বল্প সময়ে মক্কায় পৌঁছাতে শুরু করেন। তবে এটি সংক্রামক রোগের দ্রুত বিস্তারের সুযোগও তৈরি করে। এই সময়ে কলেরা বিশ্বব্যাপী মহামারি হিসেবে আবির্ভূত হয়, এবং হেজাজ অঞ্চলও এর প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল না।

কলেরা প্রথম ১৮১৭ সালে বাংলার যশোর অঞ্চলে (বর্তমান বাংলাদেশ) দেখা দেয় এবং দ্রুত ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৩৩ সালের মধ্যে এটি এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকায় মহামারি হিসেবে প্রভাব ফেলে, যার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আরব উপদ্বীপে কলেরার প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে ১৮২১ সালে। ১৮৩১ সালে মক্কায় এই রোগ প্রথম আঘাত হানে, যার ফলে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বা অন্তত ২০ হাজার হজযাত্রীর মৃত্যু হয়। এই মহামারি ভারতীয় হজযাত্রীদের মাধ্যমে মক্কায় ছড়ায় এবং অভূতপূর্ব দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করে। পরবর্তী সময়ে ১৮৪১, ১৮৪৭, ১৮৫১, ১৮৫৬-৫৭ ও ১৮৫৯ সালে কলেরা মক্কায় বহু হজযাত্রীর প্রাণ কেড়ে নেয়।

আরও পড়ুনবদর যুদ্ধক্ষেত্রে একটি দিন২০ জুলাই ২০২৩

কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা

তৎকালীন ওসমানিয়া সাম্রাজ্য, যারা হেজাজ অঞ্চলের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে ছিল, কলেরার বিস্তার রোধে ১৮৪০ সাল থেকে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা প্রয়োগ শুরু করে। হেজাজের সীমান্ত এবং মক্কা ও মদিনার বিভিন্ন স্থানে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হতো এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করা হতো।

ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের জন্য কোয়ারেন্টিন প্রক্রিয়া বিশেষভাবে কঠোর ছিল। এডেনে যাত্রাবিরতির পর, হজযাত্রীদের ইয়েমেনের উপকূলীয় কামারান দ্বীপে কোয়ারেন্টিন ক্যাম্পে নামানো হতো। স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত হতে পারত। কোয়ারেন্টিন শেষে জাহাজ জেদ্দায় পৌঁছাত এবং পথে ইয়ালামলাম নামক স্থানে হজযাত্রীরা ইহরাম বাঁধতেন, যা ভারতীয় উপমহাদেশের মিকাত (হজের নিয়ত ও ইহরাম বাঁধার নির্ধারিত স্থান) হিসেবে পরিচিত।

আন্তর্জাতিক কলেরা সম্মেলন

কলেরা মহামারির বিশ্বব্যাপী বিস্তার এবং ব্যাপক প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে ১৮৬৬ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো একটি আন্তর্জাতিক স্যানিটারি কনফারেন্সের আয়োজন করে, যা পরে ‘কলেরা কনফারেন্স’ নামে পরিচিত হয়। এই কনফারেন্সে ভারতীয় উপমহাদেশকে কলেরার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত থেকে আগত হজযাত্রীদের ওপর কঠোর স্বাস্থ্য নজরদারি ও কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা আরোপ করা হয়।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলেরা মক্কায় ব্যাপক প্রাণহানির কারণ হলেও ওসমানীয় সালতানাতের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় উপমহাদেশের হজযাত্রীদের মাধ্যমে কলেরার বিস্তার হলেও কোয়ারেন্টিন ক্যাম্প এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগের মাধ্যমে এর প্রভাব কমানোর চেষ্টা করা হয়।

আরও পড়ুনবিরে শিফা: একটি অলৌকিক কুয়ার গল্প০৫ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ