চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের দ্বন্দ্বে যেভাবে খুন কলেজছাত্র, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ
Published: 22nd, May 2025 GMT
চট্টগ্রামের হালিশহরে দুটি কিশোর গ্যাংয়ের রেষারেষিতে খুন হন কলেজছাত্র ওয়াহিদুল হক। বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করা হয় তাঁকে। ক্ষতস্থান দিয়ে বেরিয়ে পড়া নাড়িভুঁড়ি হাতে চেপে দৌড়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। ঘটনার সময় ওই স্থানে থাকা তিন তরুণের বিবরণে কলেজছাত্র খুনের এই চিত্র উঠে এসেছে। এলাকার কিশোর গ্যাংকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় যুবদলের পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বেপরোয়া এসব কিশোর–তরুণ তুচ্ছ কারণে সহিংসতায় জড়াচ্ছেন। মাদক সেবন, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়ালেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।
নিহত ওয়াহিদুল হক ওরফে সাব্বির (১৮) নগরের মুরাদপুর এলাকায় শ্যামলী আইডিয়াল টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী। ১৬ মে জুমার নামাজ শেষে এক বন্ধু তাঁকে হালিশহর নয়াবাজার এলাকায় ডেকে নিয়ে যান। সেখানে চারটি অটোরিকশায় এসে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ওয়াহিদুলকে ছুরিকাঘাত করে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। ছয় দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল বুধবার তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওয়াহিদুলের বাবা মোহাম্মদ এসহাক বাদী হয়ে হালিশহর থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মিনহাজুল ইসলাম নামের এক কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। গত সোমবার মিনহাজুল আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ১০-১২ দিন আগে এলাকার এক কিশোরকে মারধরের প্রতিশোধ হিসেবে ওয়াহিদুলকে ছুরিকাঘাত করেন তাঁরা।
এ ঘটনার সময় ওই এলাকায় থাকা তিন তরুণের (নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হয়নি) সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা জানিয়েছেন, ১৬ মে দুপুরে ওয়াহিদুলকে হালিশহর নয়াবাজার পিসি পার্কের সামনে দৌড়ে আসতে দেখেন তাঁরা। তখন ওই অবস্থায় ওয়াহিদুল তাঁদের বলেন, আবিদ নামের একজন তাঁকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসার পর আতাউলসহ ৩০ থেকে ৪০ জন তাঁকে বেধড়ক মারধর ও ছুরিকাঘাত করেন। এসব বলতে বলতে ওয়াহিদুল তাঁর পেটের ক্ষতস্থানে হাত দিয়ে দৌড়াচ্ছিলেন। এ সময় আবারও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাঁকে ওই অবস্থায় লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁর পেটের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে যায়। এরপরও পেটানো বন্ধ হয়নি। মারধরের পর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা চলে গেলে ওই তিন তরুণই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান ওয়াহিদুলকে।
চট্টগ্রামের হালিশহরে খুন হওয়া কলেজছাত্র ওয়াহিদুল ‘বিংগু’ নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। একের পর এক ছুরিকাঘাতের পর জীবন রক্ষার চেষ্টায় দৌড়েও শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর।হামলাকারীদের নাম বলেছেন ওয়াহিদুল
হাসপাতালে ছয় দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়েও হার মানেন কলেজছাত্র ওয়াহিদুল হক। এ সময় তিনি হামলাকারীদের নামও বলেছেন বলে দাবি করেন ওয়াহিদুলের ভগ্নিপতি তাজুল ইসলাম। গতকাল রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর আগে আমার শ্যালক ওয়াহিদুল বলে গেছে, তাকে ছুরিকাঘাত করে আতাউল। আর বাসা থেকে ডেকে নেয় আবিদ।’
এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ স্থানীয় যুবদল নেতা আ আসলামের বিরুদ্ধে। নিহত ওয়াহিদুলের বাবা মো.
কিশোর গ্যাং বিংগু ও পাইথন, পেছনে কারা
নিহত ওয়াহিদুলের স্বজন, বন্ধু ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় দুটি কিশোর গ্যাং বিংগু ও পাইথনের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ফলেই এই হত্যাকাণ্ড। পুলিশ জানায়, ওয়াহিদুল বিংগু গ্রুপের এবং তাঁকে মারধর করা গ্রুপটি পাইথন নামে পরিচিত। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মো. আসলাম কিশোর গ্যাংয়ের দুটি গ্রুপকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। দুটি গ্রুপে ৩০ থেকে ৪০ জন করে সদস্য রয়েছেন। স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিভিন্ন দোকান ও কারখানায় কাজ করা ১৬ বছরের কিশোর থেকে ২২ বছরের তরুণ রয়েছেন ওই সব গ্রুপে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হালিশহর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমার সরকার আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ওয়াহিদুল বিংগু গ্রুপের সদস্য ছিলেন। প্রথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রতিপক্ষ পাইথন গ্রুপের সদস্যরা তাঁর ওপর হামলা চালান।
কিশোর গ্যাংকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে কথিত যুবদল নেতা আসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ প্রথম আলোকে বলেন, হালিশহর নয়াবাজার এলাকায় আসলাম নামের যুবদলের কোনো নেতা-কর্মী নেই। যুবদলের নাম ভাঙিয়ে কোনো কিশোর গ্যাং নেতা অপরাধ করলে তাঁকে আইনের আওতায় আনা হোক।
স্থানীয় লোকজন জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সবুরের অনুসারী ছিলেন আসলাম। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর নিজেকে যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে আসছেন।
২০০ কিশোর গ্যাং, ৬৪ ‘বড় ভাই’
চট্টগ্রাম নগরে বর্তমানে ২০০ কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে বলে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে। একেকটি দলে রয়েছেন ৫ থেকে ১৫ জন। নগরজুড়ে এসব গ্যাংয়ের সদস্যসংখ্যা অন্তত ১ হাজার ৪০০। পুলিশ বলছে, কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকতা বা প্রশ্রয়ে ৬৪ ‘বড় ভাই’ আছেন। গত ৬ বছরে ৫৪৮টি অপরাধের ঘটনায় কিশোর গ্যাং জড়িত বলে জানায় পুলিশ।
গত বছরের মার্চে নগর পুলিশের করা এক জরিপে উঠে আসে, চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে অনুপস্থিত থাকা ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই জড়িয়ে পড়েছে অপরাধে। নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সামাজিক অস্থিরতা ও কিশোর গ্যাংয়ের উত্থানের কারণ খুঁজতে গিয়ে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার তথ্য পায় পুলিশ। এসব ছাত্র পর্নোগ্রাফি, সাইবার অপরাধ, ছিনতাই, চুরি, মাদক নেওয়া ও কেনাবেচা এবং অনলাইন জুয়ার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে তারা বেছে নেয় স্কুলের সময়টা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ র ক ঘ ত কর প রথম আল ক য বদল ন ত য় র সদস য র এল ক য় ন ম র এক ক ল কল জ হ ল শহর য বদল র অপর ধ ম রধর আসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু
সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।
তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।
সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’
যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকাঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।
তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।
ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।
ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদাঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।
১০ নারী প্রার্থীঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।
মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধমাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।