সরকারি দপ্তরের শৃঙ্খলা আনার নতুন হাতিয়ার ডিজিটাল সিগনেচার: ফয়েজ
Published: 22nd, May 2025 GMT
সরকারি দপ্তরের শৃঙ্খলা আনার নতুন হাতিয়ার ডিজিটাল সিগনেচার বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বৃহস্পতিবার (২২ মে) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন ইলেক্ট্রনিক স্বাক্ষর সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত পাবলিক কী ইনফ্রাস্ট্রাকচার (পিকেআই) সামিট- ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল সক্ষমতায় অনেক পিছিয়ে। সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর নকল করে দেশে নানা রকম প্রতারণা হচ্ছে। এসব প্রতারণা বন্ধের পাশাপাশি সরকারি কার্যক্রমে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল সিগনেচার ভূমিকা রাখবে।
বিশেষ সহকারী বলেন, দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে, বারোটি সিটি কর্পোরেশন, কয়েকশত পৌর কর্পোরেশন রয়েছে। এ প্রত্যেকটা অফিস, মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ প্রতিদিন প্রচুর ডকুমেন্ট তৈরি করে। একই সঙ্গে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা কিংবা জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন প্রতিদিন শত শত ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে। শিল্প মন্ত্রণালয় ট্রেড মার্ক তৈরি করে, শিক্ষা বোর্ডগুলো সার্টিফিকেট তৈরি করে, মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কিংবা হাসপাতালগুলো বিভিন্ন সার্টিফিকেট তৈরি করে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া এনআইডি কর্তৃপক্ষ, জন্ম বা মৃত্যু রেজিস্ট্রেশন কিংবা পাসপোর্ট কতৃপক্ষ প্রত্যেকেই ডকুমেন্ট তৈরি করে। এগুলো ডিজিটাল হওয়া দরকার। ব্যক্তি যে ম্যানুয়াল সার্টিফিকেট জমা দিচ্ছে, এই ম্যানুয়াল সার্টিফিকেট ভেরিফাই করার মত জনবল নেই। তাই আমাদের প্রশাসনিক কার্যক্রমকে কিভাবে ডকুমেন্টেড বা সার্টিফিকেট ওরিয়েন্টেড করা যায় সেজন্য দায়িত্ব নিতে হবে।
ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, যত দিন যাবে বিদেশি এজেন্সি, সংস্থা এবং সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ম্যানুয়াল সার্টিফিকেট গ্রহণ করা বন্ধ করে দেবে। কারণ তারা প্রথমে এআই, ব্লকচেইনসহ প্রযুক্তির মাধ্যমে সার্টিফিকেটগুলো যাচাই-বাছাই করবে। তখন ম্যানুয়ালি সার্টিফিকেটগুলো অনুমোদন হবে না। আর এই সমস্যাগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে। তাই আমাদের সিসিএ থাকাটা জরুরি।
বাংলাদেশের জনগণকে পাবলিক কী ইনফ্রাস্ট্রাকচার (পিকেআই) বিষয়ক উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে ডিজিটাল সিগনেচার বেস্ট ইউজার ক্যাটাগরিতে RJSC, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, BRAC Bank PLC এবং Robi Axiata Limited এই চার প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়।
এ টি এম জিয়াউল ইসলাম এর সভাপতিত্বে সেমিনারে আইসিটি ডিভিশনের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধি, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অংশ নেন।
ঢাকা/হাসান/রাসেল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু, অর্ডার আজ থেকেই
বিশ্বখ্যাত স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান।
ফয়েজ আহমদ বলেন, “স্টারলিংক অফিশিয়ালি বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে। সোমবার (১৯ মে) বিকালে তারা ফোন কলে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে এবং আজ (২০ মে) সকালে তাদের এক্স হ্যান্ডেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।”
শুরুতে স্টারলিংক দুটি প্যাকেজ দিয়ে শুরু করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “স্টারলিংক রেসিডেন্স ও রেসিডেন্স লাইট। মাসিক খরচ একটিতে ৬০০০ টাকা, অপরটিতে ৪২০০।” তবে সেটাপ যন্ত্রপাতির জন্য ৪৭ হাজার টাকা এককালীন খরচ হবে বলেও জানান ফয়েজ আহমদ।
তিনি বলেন, “এখানে কোনো স্পিড ও ডাটা লিমিট নেই। ব্যক্তি ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন।”
বাংলাদেশের গ্রাহকরা আজ থেকেই অর্ডার করতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে ৯০ দিনের মধ্যে যাত্রা শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যাশাটি বাস্তবায়িত হলো। প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।”
ফয়েজ আহমদ বলেন, “খরুচে হলেও এর মাধ্যমে প্রিমিয়াম গ্রাহকদের জন্য উচ্চমান এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তির টেকসই বিকল্প তৈরি হয়েছে।”
পাশাপাশি যেসব এলাকায় এখনো ফাইবার কিংবা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছেনি, সেখানে কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন ফয়েজ আহমদ।
তিনি বলেন, “এনজিও ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তারা বছরব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেটের নিশ্চয়তা পাবেন।”
বিনিয়োগ সম্মেলনের মধ্যে গত ৯ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে স্টারলিংক সেবা চালু করা হয়।
ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে এই সেবা দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
২০২৪ সালের অক্টোবরে স্টারলিংকের একটি প্রতিনিধি দল বিডার চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে। চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভিডিও কলে ইলন মাস্কের সঙ্গে স্টারলিংকের প্রসঙ্গে আলোচনা করেন।
গত মাসে ঢাকায় স্টারলিংকের মাধ্যমে আবারও পরীক্ষামূলক ইন্টারনেট চালানো হয়, যেখানে ডাউনলোড গতি পাওয়া যায় ২৩০ এমবিপিএস।
বিটিআরসি সম্প্রতি এনজিএসও নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে, যাতে সাইবার নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করার ক্ষমতাও সরকারের হাতে থাকবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় স্টারলিংকের প্রথম বাণিজ্যিক সেবা চালু হয়েছে ভুটানে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সহজলভ্য হবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। এতে শহর ও গ্রামের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য কমে যাবে এবং তরুণেরা গ্রাম থেকেই ফ্রিল্যান্সিংসহ ইন্টারনেটভিত্তিক পেশায় যুক্ত হতে পারবেন।
দুর্যোগের সময় জরুরি যোগাযোগ স্থাপনেও স্টারলিংক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকা/হাসান