সচিবালয়ের কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হচ্ছেন বিএনপিপন্থি সাবেক আমলারা। এতদিন তারা এ আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ গতরাতে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাসহ আশপাশ এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
এদিকে সরকারের ২৫টি ক্যাডারের কর্মচারীরা সারাদেশে আজ ও আগামীকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কলমবিরতির ডাক দিয়েছেন। তাদের ১২ জন সদস্যকে সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি ডাকা হয়।
বেতন গ্রেড ও পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা নিরসনের দাবিতে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, মামলা-হয়রানি বন্ধের দাবিতে আজ সারাদেশে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
সচিবালয়ে আন্দোলন
সচিবালয়ের আন্দোলনে যুক্ত হওয়া বিএনপিপন্থি আমলাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবসহ বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সচিবালয় কর্মচারী সংগঠনের নেতারা আজ সারাদেশের সরকারি কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিল দাবিতে এ আন্দোলন চলছে।
এই অধ্যাদেশকে কালো আইন দাবি করে তা বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো গতকাল সোমবারও বিক্ষোভ করেছেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। এ সময় সচিবালয়ের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার সারাদেশের দপ্তর-সংস্থার কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের নেতারা।
বিএনপিপন্থি সাবেক আমলারা এ আন্দোলনের শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনের সমর্থনে আজ সাবেক সচিব ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরি কক্ষে বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদনের পর রোববার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। কর্মচারীদের অভিযোগ, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশটি করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদনের পর থেকেই এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মিছিল করছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা।
অধ্যাদেশ বাতিল ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য গতকাল সচিবালয়ে আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম গঠন করা হয়েছে। এ ফোরামের কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের মো.
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোখলেস উর রহমান বলেন, এই অধ্যাদেশ নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। গণহারে এই অধ্যাদেশের অধীনে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদীউল কবির সমকালকে বলেন, দপ্তর-সংস্থার বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সেটি শেষ পর্যন্ত হয়নি।
তিন কর্মসূচি
সংশোধিত অধ্যাদেশ বাতিল ও বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখা; ফোরামের নেতারা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উপদেষ্টা ও সচিবদের সঙ্গে আলোচনা করবেন; ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের অব্যাহতভাবে প্রশ্রয় দেওয়া এবং জনপ্রশাসনকে দক্ষতা ও সুচারুভাবে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ ও জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমানের অপসারণের দাবি উত্থাপন করে প্রধান উপদেষ্টা, সব সংস্থা, অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এ কর্মসূচির কথা জানান।
২৫টি ক্যাডার কর্মকর্তাদের কলমবিরতি
সারাদেশে সিভিল সার্ভিসের ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা আজ মঙ্গল ও কাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাসপাতালসহ অন্যান্য জরুরি সেবা কার্যক্রম এই কলমবিরতির বাইরে থাকবে।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বৈষম্যমূলক বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলার প্রতিবাদ এবং কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, ডিএস পুলের কোটা বাতিল ও সব ক্যাডারের সমতা বিধানের দাবিতে কলমবিরতি শুরু হচ্ছে।
সচিবালয়ে আজ দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ
উদ্ভূত পরিস্থিতে ‘সচিবালয়ে আজ দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকবে’– স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে গতরাতে এমন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবালয় নিরাপত্তা শাখার উপসচিব মুহাম্মদ আবদুল্যাহ আল জাবেদ স্বাক্ষরিত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়।
ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা
সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাসহ আশপাশ এলাকায় সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল রাতে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক য ড র র কর মকর ত ন উপদ ষ ট মন ত র গতক ল ব এনপ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু
সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।
তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।
সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’
যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকাঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।
তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।
ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।
ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদাঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।
১০ নারী প্রার্থীঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।
মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধমাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।