গ্রামবাসীর আতঙ্ক কাটেনি, দিনে বাড়ি এলেও রাতে থাকছেন অন্যত্র
Published: 27th, May 2025 GMT
এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। কিছু তরুণ রাত জেগে গ্রামে পাহারা দিচ্ছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক প্রতিনিধিরা আসছেন প্রতিদিন। আসছেন প্রশাসন ও পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা, আশ্বাস দিচ্ছেন নিরাপত্তার। এরপরও আতঙ্ক কাটছে না যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের বাসিন্দাদের।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে গিয়ে এমন তথ্যই পাওয়া যায়। কৃষক দল নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার লুটপাটের পর পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িগুলোতে বেশির ভাগ পুরুষ ও শিশুরা এখনো ফেরেনি। অনেকে দিনের বেলায় বাড়িতে এলেও আবারও বাড়িঘরে হামলার আশঙ্কায় রাতে অন্য জায়গায় গিয়ে থাকছেন। পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলোও বসবাসের অনুপযোগী।
ডহর মশিয়াহাটী গ্রামটির অবস্থান বিলের মধ্যে। পাকা সড়ক থেকে মাটির রাস্তা ধরে গ্রামের একটি পাকা বাড়ির উঠানে গিয়ে দেখা গেল, পোড়া লেপ-কাঁথা-তোশকের স্তূপ। ঘরটি দুই কক্ষের। পাকা গাঁথুনি, টিনের ছাউনি। বারান্দায় উঠতেই ঘর থেকে আসা পোড়া গন্ধ পাওয়া গেল। একটি কক্ষে রাখা সব ধান পুড়ে গেছে। সেখান থেকে বের হচ্ছে গন্ধ। অপর কক্ষে পড়ে আছে আগুনে পোড়া টেলিভিশন, টেবিল ফ্যান, খাট। ঘরের মেঝে ভরে আছে পুড়ে যাওয়া জিনিপত্রের ছাইয়ে।
বারান্দার এক পাশ পুড়ে যাওয়া খাটের ওপর বসে ছিলেন তরুলতা বিশ্বাস (৭৫)। তিনি বলেন, ছেলে দিলীপ বিশ্বাস (৪৬) এবং দুই নাতনি হৈমন্তী বিশ্বাস (১৩) ও দেবশ্রী বিশ্বাসকে (১১) নিয়ে তাঁদের সংসার। ছেলে দিনমজুর। বৃহস্পতিবার রাতে অনেক লোকজন এসে আগে ঘরে রাখা ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। এরপর ঘরের সবকিছু আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন। ছেলেটা মেয়ে দুটোকে নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। গতকাল সোমবার সকালে বাড়ি এসেছিলেন। সন্ধ্যার আগে আবার চলে গেছেন।
পুড়ে যাওয়া বাড়ির বারান্দায় বসে আছেন এক গৃহিণী। আজ মঙ্গলবার দুপুরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে গভীর রাতে অস্ত্রের মুখে ৭ জনকে জিম্মি করে সোনার দোকানে ডাকাতি
যশোরের অভয়নগর উপজেলার একটি সোনার দোকানে ডাকাতি হয়েছে। গতকাল রোববার গভীর রাতে মশিয়াহাটী বাজারের সৌখিন জুয়েলার্সে এ ঘটনা ঘটে।
দোকানটির মালিক গৌতম কর্মকার (৫০)। তিনি মনিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
গৌতম কর্মকার জানান, গতকাল রাত ১০টার দিকে তিনি দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যান। গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একটি কল আসে। অপর প্রান্ত থেকে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর সোনার দোকানে ডাকাতি হচ্ছে। কিন্তু ভয়ে তিনি রাতে বাড়ি থেকে বের হননি। আজ সকালে দোকানটিতে গিয়ে তিনি ডাকাতির আলামত দেখতে পান।
গৌতম কর্মকারের দাবি, তাঁর দোকানের লকারে প্রায় ২ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও ২৪ ভরি ওজনের রুপার গয়না ছিল। এগুলোর বাজারমূল্য চার লাখ টাকার বেশি। ডাকাত দলটি এগুলোর সব লুট করেছে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল রাত ২টার দিকে ১০ থেকে ১২ জনের একটি সশস্ত্র ডাকাত দল মশিয়াহাটী বাজারে আসে। তাদের সবার মুখ কাপড়ে দিয়ে বাঁধা ছিল। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে একজন নারীসহ বাজারের অন্তত সাতজনকে দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে এবং মুখে টেপ লাগিয়ে ফেলে রাখে। এরপর সৌখিন জুয়েলার্সের কলাপসিবল গেটের একটি পাশ এবং শাটারের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে লকারের তালা ভেঙে সোনা ও রুপার গয়না নিয়ে যায় তারা। ভোর চারটা পর্যন্ত সেখানে ডাকাতি হয়। এ সময় শব্দ শুনে ঘর থেকে বের হন স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ বিশ্বাস (৬০) ও তাঁর স্ত্রী প্রতিমা বিশ্বাস (৫৫)। ডাকাতেরা অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে প্রতিমা বিশ্বাসের গলার একটি সোনার হার নিয়ে যায়।
মশিয়াহাটী বাজারের পাশে সুজাতপুর গ্রাম। ওই গ্রামের কৌশিক দাস (১৬) জানায়, গতকাল রাতে ঘুম আসছিল না। রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে হেঁটে বাজারের দিকে যাচ্ছিল। বাজারে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ডাকাতেরা তাকে ধরে ফেলে। এরপর তার দুই হাত দড়ি দিয়ে পেছনে বেঁধে মুখে চওড়া স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়।
কৌশিক দাস বলে, ‘ডাকাত দল চলে যাওয়ার পর ভোর চারটার দিকে আমি কৌশলে হাতের বাঁধন খুলে ফেলি। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যদের হাত ও মুখের স্কচটেপ খুলে দিয়েছি।’
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম রবিউল ইসলাম, বিষয়টি চুরি না ডাকাতি, তা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।