মাত্র ছয় বছর বয়সে ডায়াবেটিস ধরা পড়েছিল মৌসুমির (ছদ্মনাম)। এর আগপর্যন্ত তার মা–বাবার ধারণাই ছিল না যে এত অল্প বয়সে কারও ডায়াবেটিস হতে পারে। ক্রমে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছিল মৌসুমির, রাতে বারবার প্রস্রাব হতো। প্রথম দিকে বিষয়টা তেমন গুরুত্ব দেননি মা–বাবা। কিন্তু একদিন হঠাৎ মৌসুমি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে, কেমন যেন নেতিয়ে পড়ছে, ঠিকমতো কথাও বলতে পারছে না। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর দেখা গেল তার রক্তের সুগার গ্লুকোমা রিডিংয়ের ওপরে উঠে গেছে, মানে ৩০ মিলিমোলের বেশি। চিকিৎসক বললেন, এ পরিস্থিতির নাম ‘ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিস’। বেশির ভাগ টাইপ–১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশু–কিশোর এ রকম খারাপ পরিস্থিতিতে যাওয়ার পরই সেটা শনাক্ত হয়।
টাইপ–১ ডায়াবেটিস কীতার মানে ডায়াবেটিসের নানা ধরন বা টাইপ আছে? উত্তর হলো, হ্যাঁ। টাইপ–১ ডায়াবেটিস এক বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস, যা সাধারণত অল্প বয়সে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শৈশব বা কৈশোরে ধরা পড়ে। এটি একধরনের অটোইমিউন রোগ। মানে নিজের শরীরের ইমিউন সিস্টেম এখানে নিজের বিভিন্ন কোষের বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকে। আমরা জানি, প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ থেকে তৈরি হয় বিপাকক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হরমোনগুলোর একটি—ইনসুলিন। ইমিউন সিস্টেমের গোলমালের কারণে এই বিটা কোষের বিভিন্ন উপাদানের বিপরীতে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে থাকে এবং ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষগুলোকে ধ্বংস করতে থাকে। একপর্যায়ে এত বেশি বিটা কোষ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় যে অগ্ন্যাশয় আর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। শরীরে ইনসুলিনের অভাব দেখা দেয়, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় শর্করা বিপাকপ্রক্রিয়া। ফলে একসময় রক্তে কিটোঅ্যাসিড তৈরি হতে থাকে। রক্তের পিএইচ কমে যায় ও ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিসের মতো প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ ধরনের ডায়াবেটিসের কারণ যেহেতু ইনসুলিনের তীব্র অভাব, তাই একমাত্র ইনসুলিন দিয়েই এর চিকিৎসা করা হয়। এ জন্য একসময় একে বলা হতো ‘ইনসুলিন ডিপেন্ডেন্ট ডায়াবেটিস’। বর্তমানে এর নাম দেওয়া হয়েছে টাইপ–১ ডায়াবেটিস। এই রোগীদের সারা জীবন ইনসুলিনের ওপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকতে হয়।
আরও পড়ুনশিশু-কিশোরদের ডায়াবেটিস১৩ নভেম্বর ২০২২কীভাবে বুঝবেন টাইপ–১ ডায়াবেটিসসাধারণত টাইপ–১ ডায়াবেটিস অল্প বয়সে, ২০ বছরের আগেই ধরা পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যখন শনাক্ত হয়, তখন রক্তের শর্করা বিপজ্জনক মাত্রায় থাকে। বড়দের মতো, মানে টাইপ–২ ডায়াবেটিসের মতো এটি কখনো ধীরে ধীরে বাড়ে না; বরং তীব্র উসপর্গ–লক্ষণ নিয়ে হাজির হয়। বিটা কোষ ধ্বংস শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই শিশু বা কিশোরটি দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। দুর্বলতা, ওজন হ্রাস, বারবার প্রস্রাব করা, রাতে বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলা, প্রচণ্ড ক্ষুধা ও পিপাসা, চোখে ঝাপসা দেখার মতো সমস্যা দেখা দেয় অল্প দিনের মধ্যেই। এসব কারণে একসময় শিশুটি অচেতন হয়ে পড়ে, শ্বাস–প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়, যাকে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস বলে।
টাইপ–১ ডায়াবেটিসের উপসর্গের ইতিহাস ও প্রেজেন্টেশন এত নাটকীয় যে চিকিৎসকদের বুঝতে সমস্যা হয় না এটি কোন ধরনের ডায়াবেটিস। তার ওপর ইনসুলিন ছাড়া এদের কিছুতেই শর্করা কমে না, এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। সে কারণে আলাদা করে টাইপ–১ ডায়াবেটিস কি না, তা নির্ণয় করার জন্য তেমন কোনো পরীক্ষা করার দরকার পড়ে না। তবে যদি রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বা ইনসুলিনের অংশ সি পেপটাইডের মাত্রা পরীক্ষা করা যায়, তবে তা বিপজ্জনক মাত্রায় কম পাওয়া যায়। অ্যান্টিবডির উপস্থিতি টাইপ–১ ডায়াবেটিসের শনাক্তকরণ নিশ্চিত করতে পারে। তা ছাড়া এ ধরনের ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার সময় রক্তের শর্করা এত বেশি থাকে এবং রোগী এত অসুস্থ হয়ে পড়ে যে দ্রুত ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করা হয় না।
আর দশটা অটোইমিউন রোগের মতো টাইপ–১ ডায়াবেটিসে কেন নিজের শরীরের ইমিউন সিস্টেম বিদ্রোহ করে বসে, তা এখনো রহস্য। তবে ধারণা করা হয়, কিছু জিনগত সমস্যা আর কিছু বিরল ভাইরাস সংক্রমণ (কক্সস্যাকি, সাইটোমেগালো, রুবেলা ইত্যাদি) এর ‘ট্রিগার’ হিসেবে কাজ করে। আমাদের দেশে টাইপ–১ ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা নগণ্য হলেও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে অনেক বেশি। একটি গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে টাইপ–১ ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার হার বছরে এক লাখ শিশুর মধ্যে ৪ দশমিক ২। তবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস হওয়ার কারণে হাসপাতালে আসার আগেই মারা যেতে পারে বলে ধারণা করেন চিকিৎসকেরা। শিশুদের এই ডায়াবেটিস শনাক্তের হার ক্রমে বাড়ছে।
আরও পড়ুনডায়াবেটিস প্রতিরোধে ১৫ পরামর্শ১৪ নভেম্বর ২০২৪চিকিৎসা কীটাইপ–১ ডায়াবেটিস যেহেতু হয় ইনসুলিনের অভাবের কারণে, তাই ইনসুলিনই এর একমাত্র চিকিৎসা। ইনসুলিন আবিষ্কারের আগপর্যন্ত টাইপ–১ ডায়াবেটিক রোগীর মৃত্যু ছিল অবধারিত। ১৯২১ সালে ইনসুলিন আবিষ্কারের পর থেকে টাইপ–১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। ইতিহাসে প্রথম ইনসুলিন ব্যবহারই করা হয় ১৪ বছরের এক টাইপ–১ ডায়াবেটিসের রোগীর ওপর। লিওনার্দো পৃথিবীর প্রথম টাইপ–১ ডায়াবেটিক রোগী, যে রোগ শনাক্ত হওয়ার পর আরও ১৪ বছর বেঁচে ছিল। বর্তমানে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির কারণে একজন টাইপ–১ ডায়াবেটিক রোগী অন্যদের মতোই স্বাভাবিক আয়ু পান। একটি গবেষণায় দেখা যায়, গত ৩০ বছরে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির কল্যাণে টাইপ–১ ডায়াবেটিসের মৃত্যুহার ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনা গেছে। আধুনিক উন্নত ইনসুলিন আবিষ্কার টাইপ–১ ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে ইনসুলিন পাম্প, যা একটি মডেল প্যানক্রিয়াসের মতোই শরীরে ইনসুলিন প্রবাহ করতে সক্ষম। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স–যুক্ত ইনসুলিন পাম্প নিজে নিজে রক্তের সুগারের ওঠানামা শনাক্ত করে নির্ধারিত মাত্রায় ইনসুলিন সরবরাহ করতে পারে। এ ধরনের স্মার্ট ডিভাইস এখন বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশে বারডেম হাসপাতালের সেগুনবাগিচা শাখায় টাইপ–১ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য বিশেষ ইউনিট আছে। সিডিআইসি নামের এই প্রকল্পের মাধ্যমে টাইপ–১ ডায়াবেটিক শিশুদের বিশেষায়িত সেবা, বিনা মূল্যে ইনসুলিন, অন্যান্য সেবা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও আছে চিকিৎসার সুব্যবস্থা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধরন র ড য় ব ট স ইনস ল ন র র জন য রক ত র র ওপর সমস য হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু
সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।
তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।
সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’
যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকাঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।
তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।
ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।
ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদাঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।
১০ নারী প্রার্থীঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।
মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধমাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।