মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উপদেষ্টার ছবির জায়গায় ছবি দেওয়া নিখোঁজ শিশুটি উদ্ধার
Published: 28th, May 2025 GMT
আন্তর্জাতিক নিখোঁজ শিশু দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের ছবির জায়গায় ছবি দেওয়া নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে আজ বুধবার মো. আলিফ নামে চার বছরের ওই শিশুকে উদ্ধার করা হয়।
‘মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উপদেষ্টার ছবির জায়গায় কেন শিশুর ছবি’ শিরোনামে ২৬ মে অনলাইন সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। মূলত আন্তর্জাতিক নিখোঁজ শিশু দিবসে (২৫ মে) সচেতনতা তৈরিতেই মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিল। শিশুটি ২৩ মে দুপুরে টঙ্গী থেকে নিখোঁজ হয়।
আলিফকে আজ সকালে উদ্ধার করা হয়েছে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.
এসআই বায়েজীদ বলেন, ২৩ মে শিশুটির বাবা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুটির ছবি প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসতে থাকে। পুলিশ প্রতিটি তথ্যের ভিত্তিতে খোঁজ নেয়। একপর্যায়ে আশুলিয়ায় তহমিনা নামের এক নারীর বাসায় যায় পুলিশ। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁরা পালিয়ে যান। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গতিবিধি অনুমান করে ঝিনাইদহে অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
আটক ওই নারীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, এই নারী ছদ্মনাম ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু চুরি করে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করেন।
শিশুটির বাবা মো. কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) আমরা ফেসবুক থাইকা আলিফের খোঁজ পাইছি। কিন্তু আমার ছেলেরে লইয়া ওরা আশুলিয়া থাইকা ভাইগা যায়। পরে ওই মহিলার (অপহরণকারী) বড় ছেলেরে পুলিশ ধরছে। সেই লোকের কথাতে পুলিশ ভাইদের সাথে আমরা রাইতে কালীগঞ্জে গেছি। সকালে ওরাও গাড়ি থেকে নামছে, আর আমরাও ধইরালাইছি।’
একমাত্র ছেলেকে ফেরত পাওয়ায় বাংলাদেশ পুলিশ ও অ্যামবার অ্যালার্ট ফর বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আলিফের বাবা।
আলিফের বাবা, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের বরাতে জানা গেছে, ২৩ মে টঙ্গীর ছোটবাজার এলাকার এরশাদ নগরে একটি দোকানের সামনে থেকে ওই নারী আলিফকে নিয়ে আশুলিয়ায় নিজের বাসায় যান। সেখানে শিশুটিকে নিজের ছেলে দাবি করলেও আশপাশের মানুষের সন্দেহ হয়। এলাকাবাসী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করেন।
তথ্য পেয়ে পুলিশের একজন এসআই সেখানে গেলেও ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে সন্দেহ না হলে তিনি ফিরে যান। পরে একজন শিক্ষার্থী জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির টোল ফ্রি নম্বর ১৩২১৯-এ ফোন করলে পুলিশ আবার অভিযান চালায়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিখোঁজ শিশু খোঁজার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ‘অ্যামবার অ্যালার্ট’ পদ্ধতি। কোনো শিশু হারিয়ে গেলে বা অপহৃত হলে এর মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ ওই এলাকার বাসিন্দাদের মোবাইলে জরুরি বার্তা চলে যায়। ফলে শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।
বাবা মো. কাসেমের কোলে শিশু মো. আলিফ। উদ্ধার অভিযানে থাকা পুলিশ কর্মকতাদের একজন (বাঁয়ে) ও ‘অ্যামবার অ্যালার্ট ফর বাংলাদেশ’–এর উদ্যোক্তা সাদাত রহমান (ডানে)উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য মব র অ য ল র ট
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলার মামলার এক আসামির জামিন
চট্টগ্রামে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় করা পুলিশের মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামির একজন জামিন পেয়েছেন। তাঁর নাম ওবাইদুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আরেক আসামি মো. সেলিমের জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কোতোয়ালি থানায় পুলিশের করা দ্রুত বিচার আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে তাঁদের জামিনের আবেদন করেন আইনজীবীরা। এর মধ্যে ওবাইদুর রহমান নামের এক আসামি বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তাঁর পরীক্ষা চলায় জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাসের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার বিকেলে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। কর্মসূচি শুরুর পরপর সেখানে মিছিল নিয়ে আসে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যে’র লোকজন ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালান। এতে ১২ জন আহত হন।
এ হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে ওবাইদুর ও সেলিমকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে আটক দুজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ২০ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করে। এতে বলা হয়, আসামিরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্য আকস্মিক ও দলবদ্ধভাবে রামদা, লোহার খন্তা নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়ে জনমনে আতঙ্ক, ত্রাস ও রাস্তায় যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে।
আটক দুজনের মুক্তির দাবিতে গতকাল এশার নামাজের পর কর্মসূচি ঘোষণা করেন ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যে’র নেতা-কর্মীরা। তবে ব্যানারে তাঁদের নাম ইংরেজিতে ‘অ্যান্টি-শাহবাগ মুভমেন্ট’ লেখা ছিল। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করেন। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে চলে যান তাঁরা।
এদিকে গতকালের হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে এক নারীসহ দুজনকে পেছন থেকে এক ব্যক্তিকে লাথি মারতে দেখা যায়। যে ব্যক্তিকে লাথি মারতে দেখা গেছে, তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মী বলছেন ছাত্র জোটের নেতা-কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। তিনি ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত বলছেন তাঁরা।
তবে ছাত্রশিবির বলছে, তিনি শিবিরের দায়িত্বশীল কোনো পদে নেই। শিবিরের কেউ এ কাজে জড়িত নন। ১৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিও দেখা যায়, হামলার পর প্রেসক্লাবের পাশে একটি ভবনের নিচে আশ্রয় নেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা। সেখানে একজন পুলিশ সদস্যকেও দেখা গেছে। ওই ব্যক্তি পুলিশের চোখ এড়িয়ে নেতা-কর্মীদের পেছন যান। সেখানে দাঁড়িয়ে হঠাৎ একজনকে লাথি মারেন তিনি। এরপর ঘুরে আবার আরেক নারীকে লাথি মারেন।