‘তোমরা যখন বড়ি খাইয়া মরবাই তখন আমাদেরও দুইটা বড়ি খাওয়াইয়া দিতা। একসঙ্গে মরে যাইতাম। এখন আমাদের কী হবে? আমরা কার কাছে থাকব, কোথায় থাকব?’ 

বাবা-মা একসঙ্গে আত্মহত্যা করার পর স্বজন ও প্রতিবেশীদের সামনে এসব কথা বলে কাঁদতে কাঁদতে বুক ভাসাচ্ছিল আট বছরের ছোট্ট জেরিন। জেরিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকার মৃত আল আমিন ও ঝরনা বেগম দম্পতির রেখে যাওয়া দ্বিতীয় সন্তান। অভাব-অনটন ও দাম্পত্য কলহের জেরে এ দম্পতি গত রোববার রাতে চালের পোকা মারার ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। 

আবির ও জেরিন এখন একই ইউনিয়নের নোয়াপাড়ায় তাদের নানার বাড়িতে রয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জেরিনের দুই বছরের বড় শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাই আবির এখনও মা-বাবা হারানোর বিষয়টি বুঝতে পারছে না। সে প্রায় স্বাভাবিকভাবে হাঁটছে, খেলছে।

জেরিন ও আবিরের বড় খালা জেসমিন বেগম জানান, তার বোনের ছেলেটার (আবির) দুই হাত ও একপায়ের আঙুল নেই। ঠোঁটও কাটা। দুইবার গাছ থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে। তবে মেয়েটি সুস্থ। ছেলেটি নিজে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না বা খাবার খেতে পারে না। তার চিকিৎসাও দরকার। তারা দুই ভাইবোন চরলালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। 

শিশু দুটির মামা আনোয়ার হোসেন জানান, তাদের পৈতৃক জমি বেশি নেই। কোনোমতে সংসার চলে। তাঁর পাঁচ বোনের মধ্যে ঝরনা ছিলেন চতুর্থ। সব বোনের বিয়ে হয়েছে। সাধ্যমতো বোনদের দেখাশোনা করেন তিনি। তাঁর বোন ও বোনের স্বামী মৃত্যুর আগে বিভিন্ন সংস্থায় দুই লক্ষাধিক টাকা ঋণ রেখে গেছেন। মৃত বোনের ছেলেমেয়ে এখন তাঁর সংসারে। কীভাবে সবকিছু তিনি সামাল দেবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত। তিনি সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে এতিম দুই সন্তানের প্রতি সহায়তা করার আহ্বান জানান। 

আবির ও জেরিনের নানি আম্বিয়া বেগম কান্না চেপে বলেন, তাঁর বয়স হয়েছে। ছেলের সহায় সম্পত্তিও বেশি নেই। নাতি-নাতনির ভবিষ্যৎ কীভাবে গড়বেন তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন। 

জেরিন-আবিরের দূরসম্পর্কের নানা আহমেদ আলী বলেন, সবারই টানাপোড়েনের সংসার। তার ওপর নাতিটা (আবির) প্রতিবন্ধী। সব মিলিয়ে সামনে অন্ধকার দেখছেন তিনি। তবে আল্লাহ নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন। 

দুপুর দেড়টার দিকে কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে কথা হয় জেরিন-আবিরের দাদি সামছুন্নাহারের সঙ্গে। তিনি কাঁদছিলেন। কিছুটা সামলে নিয়ে বলেন, আল্লাহ ছাড়া তাঁর নাতি-নাতনিকে দেখার কেউ রইল না। তিনিও সমাজের সবার কাছে তাদের জন্য সহায়তা কামনা করেন। 

ফিরোজ মিয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম মিলন বলেন, একসঙ্গে মা-বাবার আত্মহত্যা ছোট শিশুদের ওপর নেতিবচাক মানসিক চাপ তৈরি করেছে। শিশু দুটির প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। তিনি সরকারের প্রতি তাদের আর্থিক সহায়তা দিতে ও স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি অধিক যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান। 

আশুগঞ্জের ইউএনও রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। শিশু দুটির পাশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন রয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বিধি অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা দ্রুততম সময়ে পৌঁছে দেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিদর্শন করলেন দুই বিদেশি পর্যটক

‘এটি খুবই আনন্দায়ক খবর যে এই স্কুলে আদিবাসী ও বাঙালি শিক্ষার্থীরা একসঙ্গেই বসে শান্তিপূর্ণভাবে পাঠ গ্রহণ করে। যেখানে ইসলাম-হিন্দু-খ্রিষ্টধর্মের শিক্ষার্থীরাও একই আসনে বসে পাঠ নিচ্ছে। সম্প্রীতি-ভালোবাসার এ দৃশ্য আমাদের বিমোহিত করেছে।’

আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিদর্শনে এসে জার্মান নাগরিক অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক মাথিয়াস রিচার্ড এ মন্তব্য করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক অবসরপ্রাপ্ত রসায়নবিদ সিলভিয়া মাউরিজিও। ‘দেশ ঘুরি’ নামের একটি ট্যুরিস্ট সংস্থার মাধ্যমে তাঁরা এ বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন।

বেলা সাড়ে ১১টায় তাঁরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হলে ফুলের তোড়া ও মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁদের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ঘুরিয়ে দেখান প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর। তাঁরা শ্রেণিকক্ষগুলোতে গিয়ে পাঠ উপস্থাপন দেখেন। কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদের সঙ্গে ভাববিনিময় করে।

এ সময় দুই পর্যটক জানতে পারেন, এ বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও বাঙালি শিশুরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে। ইসলাম-হিন্দু-খ্রিষ্টধর্মের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ না করে একবেঞ্চে বসে পাঠ গ্রহণ করে। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁরা খুবই খুশি হন।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুমা খাতুন দুজনকে একটি গান গেয়ে শোনায়। বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক দলের শিক্ষার্থীরা তাঁদের সামনে ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান প্রদর্শন করে। সিলভিয়াও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাচে অংশ নেন। সৃষ্টি হয় একটি আনন্দদায়ক পরিবেশের। এ সময় বাঙালি ও কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতি-ভালোবাসা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দেখে খুশি হন।

বিদেশি দুই পর্যটকের সামনে আলোর স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিদর্শন করলেন দুই বিদেশি পর্যটক
  • সব সিম লক রেখে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে অপারেটররা
  • আগামী বছর নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা: ধর্ম উপদেষ্টা
  • শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
  • শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?