২৩ কোটি টাকা খরচ করেও মিলছে না সুপেয় পানি
Published: 29th, May 2025 GMT
উপকূলীয় এলাকায় সৌরচালিত পানি বিশুদ্ধকরণ প্রকল্পের ৪৯টি ইউনিটের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। চালু ইউনিটগুলোও প্রায় অকার্যকর। ফলে মিলছে না বিশুদ্ধ সুপেয় পানির সুফল।
সীতাকুণ্ডে বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয়প্রতিষ্ঠানসহ উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির বহুতল ভবনের ছাদে বসানো হয়েছে ৪৯টি সৌরচালিত ডিস্যালাইনেশন ইউনিট বা পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা। ২০১৯ ও ২০২০ সালে সাবেক এমপি দিদারুল আলম ও এস এম আল মামুন এ সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ দিয়েছিলেন। রক্ষবেক্ষণের অভাব ও যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় ৩৫টির বেশি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। যে কয়েকটি চালু আছে সেগুলোও খুঁড়িয়ে চলছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ‘পরিবেশবান্ধব সোলার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ’ শীর্ষক এ প্রকল্প প্রধানত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও মসজিদে বাস্তবায়ন করা হয়।
সরকারি নথিপত্রে দেখা গেছে, প্রকল্পের প্রতিইউনিটে ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে পুরো প্রকল্পের ব্যয় ২৩ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রকল্প স্থাপনকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে যাওয়ার পর আর দেখা মেলেনি তাদের। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইউনিটগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মুরাদপুর মাহামুদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানসহ ইতোমধ্যে মারা গেছেন কয়েকজন। এ ছাড়া এ প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে ধারণা নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাও।
রোগীদের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদে ২০২০ সালে স্থাপন করা হয় এ প্রকল্পের সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল ও পানির ট্যাঙ্ক। বুধবার হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে এ প্রকল্প। দোকান থেকে পানি কিনে রোগীরা পান করছে।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আবু জাহেদ বলেন, সরকারিভাবে স্থাপিত প্রকল্পে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া হাসপাতালের গণশৌচাগারের অবস্থাও শোচনীয়। দোকান থেকে কিনে পানি পান করতে হচ্ছে।
সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালে দেখা মেলেনি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি চিকিৎসক ও কর্মকর্তারাও।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আলতাফ হোসাইনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।
এ প্রকল্পের আওতায় সীতাকুণ্ডে বগাচতরণ গণিউল উলুম ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার বহুতল ভবনের ছাদে ২০২০ সালে বসানো হয় সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল ও পানির ট্যাঙ্ক।
প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ নেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এইচ এম সলিমউল্ল্যাহ। তিনি বলেন, এক বছর ধরে এ প্রকল্পে সুপেয় পানি নেই। নষ্ট হওয়া যন্ত্রাংশ মিলছে না মার্কেটে।
এ প্রকল্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া ফৌজদারহাট কে এম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান সজিব বলেন, প্রকল্পটি যখন চালু হয়েছিল তখন ৭০ থেকে ১০০ লিটার পানি পাওয়া যেত। এখন পানির গতি কমে গেছে। তাদের সঙ্গে এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান তিনি।
এ প্রকল্পের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ২০২৩ সালে উপজেলা হল রুমে তিন ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও নষ্ট হওয়া সরঞ্জাম কোথায় পাওয়া তা জানায়নি। নষ্ট হওয়া যন্ত্রাংশের জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করে কয়েকজন টেকনিশিয়ান (কারিগর)। এতেও তেমন কাজ হচ্ছে না।
স্থানীয় কারিগর বিষু দেব বলেন, এ প্রকল্পের কোনো যন্ত্রাংশ দেশে নেই। অন্যান্য যন্ত্রাংশের সঙ্গে মিলিয়ে বিকল্প যন্ত্রাংশ দিয়ে প্রকল্প চালু রাখতে চেষ্টা করে থাকেন তিনি।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রণবেশ মহাজন বলেন, এটি পাইলট প্রকল্প ছিল। ২০২৪ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান উপকারভোগীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা দেখাশোনা করছেন। প্রকল্পটি দেখাশোনার দায়িত্ব তাদের নয় বলে জানান এ কর্মকর্তা।
ইউএনও ফখরুল ইসলাম বলেন, লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধকরণে এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য নতুন। এটি টেকসই করতে, স্থায়িত্ব বাড়াতে, রক্ষণাবেক্ষণ ও সচল রাখতে যন্ত্রাংশের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। এ প্রকল্পে স্থাপন করা ইউনিটগুলো সচল রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও আরও বলেন, ফিল্টার রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে কিছু ইউনিটের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কর মকর ত এ প রকল প র উপজ ল ইউন ট
এছাড়াও পড়ুন:
‘আরও দ্রুত মুছে ফেলব’, ইরানকে আবার হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে আবারও হামলার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইরানের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে এত দ্রুত মুছে ফেলার হুমকি দিয়েছেন যে কেউ আঙুল তোলার আগে সেটা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
গতকাল সোমবার স্কটল্যান্ডে এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তেহরান বলেছে, তারা বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে এ বছর তেহরানের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা চলছিল। জুনে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর ওই আলোচনা ভেস্তে যায়।
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি আলোচনার আগে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে।এ প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ইরান খুব খারাপ সংকেত দিচ্ছে, খুবই বাজে বার্তা পাঠাচ্ছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তাদের (ইরান) এটা করা উচিত নয়। আমরা তাদের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি। তারা আবার এটা শুরু করতে পারে। যদি তারা করে, আপনি আঙুল তোলার আগেই আমরা সেটা নিশ্চিহ্ন করে দেব। আমরা এটা আনন্দের সঙ্গেই করব—খোলাখুলিভাবে ও নির্দ্বিধায়।’
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি আলোচনার আগে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে। এ আলোচনাকে ইরানি কর্মকর্তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ, খোলামেলা ও বিস্তারিত’ বলে বর্ণনা করেছেন।
আমি এখান থেকে ‘স্বৈরশাসক’ খামেনিকে স্পষ্ট করে বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।ইসরায়েল কাৎজ, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীগত জুনে ইরানের তিনটি বড় পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এটা ছিল পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তেহরানের প্রথম বড় কোনো কূটনৈতিক আলোচনা। তবে আলোচনা থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি বা সাফল্যের ঘোষণা আসেনি।
ট্রাম্পের গতকালের বক্তব্যের পর আরাগচি বলেন, ইরান কখনোই হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো ভাষায় সাড়া দেবে না। তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, চিকিৎসা ও বেসামরিক কারণে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রয়োজন। যদি ইরান আবারও হামলার শিকার হয়, তাহলে আরও দৃঢ়ভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে তেহরান দ্বিধা করবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আবার যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।গত সপ্তাহে আল–জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও বলেছিলেন, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করবে না। তবে আলোচনার দরজা খোলা রাখবে। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে, সেটি স্থায়ী হওয়া নিয়ে তিনি খুব বেশি আশাবাদী নন বলেও জানান তিনি।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ইরানে আবারও হামলা শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর মধ্যে দেশটির নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে হামলার পরিকল্পনাও রয়েছে।
আরও পড়ুনইসরায়েল কি ইরানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে২৫ জুলাই ২০২৫গত রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে একটি বার্তা পাঠাতে চান। তাঁর বরাত দিয়ে ইসরায়েলের একটি পত্রিকায় বলা হয়, ‘আমি এখান থেকে “স্বৈরশাসক” খামেনিকে স্পষ্ট করে একটি বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আবার যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুনখামেনিকে হত্যার হুমকি দিলেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী: আনাদোলু২৮ জুলাই ২০২৫