উপকূলীয় এলাকায় সৌরচালিত পানি বিশুদ্ধকরণ প্রকল্পের ৪৯টি ইউনিটের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। চালু ইউনিটগুলোও প্রায় অকার্যকর। ফলে মিলছে না বিশুদ্ধ সুপেয় পানির সুফল। 

সীতাকুণ্ডে বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয়প্রতিষ্ঠানসহ উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির বহুতল ভবনের ছাদে বসানো হয়েছে ৪৯টি সৌরচালিত ডিস্যালাইনেশন ইউনিট বা পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা। ২০১৯ ও ২০২০ সালে সাবেক এমপি দিদারুল আলম ও এস এম আল মামুন এ সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ দিয়েছিলেন। রক্ষবেক্ষণের অভাব ও যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায়  ৩৫টির বেশি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। যে কয়েকটি চালু আছে সেগুলোও খুঁড়িয়ে চলছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ‘পরিবেশবান্ধব সোলার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ’ শীর্ষক এ প্রকল্প প্রধানত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও মসজিদে বাস্তবায়ন করা হয়। 

সরকারি নথিপত্রে দেখা গেছে, প্রকল্পের প্রতিইউনিটে ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে পুরো প্রকল্পের ব্যয় ২৩ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রকল্প স্থাপনকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে যাওয়ার পর আর দেখা মেলেনি তাদের। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইউনিটগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে। 

জানা গেছে, রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মুরাদপুর মাহামুদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানসহ ইতোমধ্যে মারা গেছেন কয়েকজন। এ ছাড়া এ প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে ধারণা নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাও। 

রোগীদের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদে ২০২০ সালে স্থাপন করা হয় এ প্রকল্পের সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল ও পানির ট্যাঙ্ক। বুধবার হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে এ প্রকল্প। দোকান থেকে পানি কিনে রোগীরা পান করছে।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আবু জাহেদ বলেন, সরকারিভাবে স্থাপিত প্রকল্পে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া হাসপাতালের গণশৌচাগারের অবস্থাও শোচনীয়। দোকান থেকে কিনে পানি পান করতে হচ্ছে। 

সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালে দেখা মেলেনি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি চিকিৎসক ও কর্মকর্তারাও।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আলতাফ হোসাইনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।

এ প্রকল্পের আওতায় সীতাকুণ্ডে বগাচতরণ গণিউল উলুম ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার বহুতল ভবনের ছাদে ২০২০ সালে বসানো হয় সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল ও পানির ট্যাঙ্ক। 
প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ নেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এইচ এম সলিমউল্ল্যাহ। তিনি বলেন, এক বছর ধরে এ প্রকল্পে সুপেয় পানি নেই। নষ্ট হওয়া যন্ত্রাংশ মিলছে না  মার্কেটে। 

এ প্রকল্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া ফৌজদারহাট কে এম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান সজিব বলেন, প্রকল্পটি যখন চালু হয়েছিল তখন ৭০ থেকে ১০০ লিটার পানি পাওয়া যেত। এখন পানির গতি কমে গেছে। তাদের সঙ্গে এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান তিনি।

এ প্রকল্পের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ২০২৩ সালে উপজেলা হল রুমে তিন ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও নষ্ট হওয়া সরঞ্জাম কোথায় পাওয়া তা জানায়নি। নষ্ট হওয়া যন্ত্রাংশের জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করে কয়েকজন টেকনিশিয়ান (কারিগর)। এতেও তেমন কাজ হচ্ছে না। 

স্থানীয় কারিগর বিষু দেব বলেন, এ প্রকল্পের কোনো যন্ত্রাংশ দেশে নেই। অন্যান্য যন্ত্রাংশের সঙ্গে মিলিয়ে বিকল্প যন্ত্রাংশ দিয়ে প্রকল্প চালু রাখতে চেষ্টা করে থাকেন তিনি।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রণবেশ মহাজন বলেন, এটি পাইলট প্রকল্প ছিল। ২০২৪ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান উপকারভোগীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা দেখাশোনা করছেন। প্রকল্পটি দেখাশোনার দায়িত্ব তাদের নয় বলে জানান এ কর্মকর্তা।

ইউএনও ফখরুল ইসলাম বলেন, লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধকরণে এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য নতুন। এটি টেকসই করতে, স্থায়িত্ব বাড়াতে, রক্ষণাবেক্ষণ ও সচল রাখতে যন্ত্রাংশের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। এ প্রকল্পে স্থাপন করা ইউনিটগুলো সচল রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএনও আরও বলেন, ফিল্টার রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে কিছু ইউনিটের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কর মকর ত এ প রকল প র উপজ ল ইউন ট

এছাড়াও পড়ুন:

২৩ কোটি টাকা খরচ করেও মিলছে না সুপেয় পানি

উপকূলীয় এলাকায় সৌরচালিত পানি বিশুদ্ধকরণ প্রকল্পের ৪৯টি ইউনিটের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। চালু ইউনিটগুলোও প্রায় অকার্যকর। ফলে মিলছে না বিশুদ্ধ সুপেয় পানির সুফল। 

সীতাকুণ্ডে বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয়প্রতিষ্ঠানসহ উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির বহুতল ভবনের ছাদে বসানো হয়েছে ৪৯টি সৌরচালিত ডিস্যালাইনেশন ইউনিট বা পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা। ২০১৯ ও ২০২০ সালে সাবেক এমপি দিদারুল আলম ও এস এম আল মামুন এ সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ দিয়েছিলেন। রক্ষবেক্ষণের অভাব ও যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায়  ৩৫টির বেশি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। যে কয়েকটি চালু আছে সেগুলোও খুঁড়িয়ে চলছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ‘পরিবেশবান্ধব সোলার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ’ শীর্ষক এ প্রকল্প প্রধানত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও মসজিদে বাস্তবায়ন করা হয়। 

সরকারি নথিপত্রে দেখা গেছে, প্রকল্পের প্রতিইউনিটে ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে পুরো প্রকল্পের ব্যয় ২৩ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রকল্প স্থাপনকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে যাওয়ার পর আর দেখা মেলেনি তাদের। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইউনিটগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে। 

জানা গেছে, রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মুরাদপুর মাহামুদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানসহ ইতোমধ্যে মারা গেছেন কয়েকজন। এ ছাড়া এ প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে ধারণা নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাও। 

রোগীদের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদে ২০২০ সালে স্থাপন করা হয় এ প্রকল্পের সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল ও পানির ট্যাঙ্ক। বুধবার হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে এ প্রকল্প। দোকান থেকে পানি কিনে রোগীরা পান করছে।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আবু জাহেদ বলেন, সরকারিভাবে স্থাপিত প্রকল্পে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া হাসপাতালের গণশৌচাগারের অবস্থাও শোচনীয়। দোকান থেকে কিনে পানি পান করতে হচ্ছে। 

সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালে দেখা মেলেনি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি চিকিৎসক ও কর্মকর্তারাও।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আলতাফ হোসাইনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।

এ প্রকল্পের আওতায় সীতাকুণ্ডে বগাচতরণ গণিউল উলুম ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার বহুতল ভবনের ছাদে ২০২০ সালে বসানো হয় সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল ও পানির ট্যাঙ্ক। 
প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ নেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এইচ এম সলিমউল্ল্যাহ। তিনি বলেন, এক বছর ধরে এ প্রকল্পে সুপেয় পানি নেই। নষ্ট হওয়া যন্ত্রাংশ মিলছে না  মার্কেটে। 

এ প্রকল্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া ফৌজদারহাট কে এম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান সজিব বলেন, প্রকল্পটি যখন চালু হয়েছিল তখন ৭০ থেকে ১০০ লিটার পানি পাওয়া যেত। এখন পানির গতি কমে গেছে। তাদের সঙ্গে এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান তিনি।

এ প্রকল্পের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ২০২৩ সালে উপজেলা হল রুমে তিন ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও নষ্ট হওয়া সরঞ্জাম কোথায় পাওয়া তা জানায়নি। নষ্ট হওয়া যন্ত্রাংশের জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করে কয়েকজন টেকনিশিয়ান (কারিগর)। এতেও তেমন কাজ হচ্ছে না। 

স্থানীয় কারিগর বিষু দেব বলেন, এ প্রকল্পের কোনো যন্ত্রাংশ দেশে নেই। অন্যান্য যন্ত্রাংশের সঙ্গে মিলিয়ে বিকল্প যন্ত্রাংশ দিয়ে প্রকল্প চালু রাখতে চেষ্টা করে থাকেন তিনি।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রণবেশ মহাজন বলেন, এটি পাইলট প্রকল্প ছিল। ২০২৪ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান উপকারভোগীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা দেখাশোনা করছেন। প্রকল্পটি দেখাশোনার দায়িত্ব তাদের নয় বলে জানান এ কর্মকর্তা।

ইউএনও ফখরুল ইসলাম বলেন, লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধকরণে এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য নতুন। এটি টেকসই করতে, স্থায়িত্ব বাড়াতে, রক্ষণাবেক্ষণ ও সচল রাখতে যন্ত্রাংশের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। এ প্রকল্পে স্থাপন করা ইউনিটগুলো সচল রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএনও আরও বলেন, ফিল্টার রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে কিছু ইউনিটের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শর্তসাপেক্ষে পারমাণবিক কর্মসূচি স্থগিত রাখবে ইরান