চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএনপির এক পক্ষের হামলায় আরেক পক্ষের এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় আরও দুজন আহত হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির নাম কলিম উদ্দিন। তিনি উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ছোট দারোগাহাট বাজারের বাসিন্দা ও স্থানীয়ভাবে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

আহত দুজন হলেন সাদ্দাম হোসেন ও সেলিম উদ্দিন। তাঁরাও স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

এর আগে গতকাল রাত ৯টার দিকে ছোট দারোগাহাট বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে দুই রকম ভাষ্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মাদকদ্রব্য বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে এ হামলা হতে পারে। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, সহস্রধারা ঝরনার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়েছে। চলতি বছর সহস্রধারা ঝরনার ইজারা নেন জিয়া মঞ্চের চট্টগ্রাম (উত্তর) জেলা কমিটির সভাপতি ওহিদুল ইসলাম চৌধুরী। হতাহত তিনজনই তাঁর অনুসারী।

এ বিষয়ে ওহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বিএনপি কর্মী সাখাওয়াত হোসেন দলবল নিয়ে কলিম উদ্দিনসহ তিনজনের ওপর হামলা চালান। এতে কলিম নিহত হন। সাখাওয়াত হোসেনকে মাদক বেচাকেনায় বাধা দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন যে সহস্রধারা ঝরনার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুবদলের চট্টগ্রাম (উত্তর) জেলা কমিটির সহসভাপতি ইসমাইল হোসাইনের সঙ্গে ওহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরোধ চলছে। এই ঝরনার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে গতকালের এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়নি।

তবে ওহিদুল ইসলামের দাবি, সহস্রধারা ঝরনাটি তিনি ইজারা নিয়েছেন। সুতরাং জায়গাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই। ইসমাইল হোসাইনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশ ভালো।

ওহিদুলের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই জানিয়ে ইসমাইল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, সহস্রধারা ঝরনার হ্রদে পর্যটকদের জন্য কিছু নৌকা আছে। সেগুলোর দেখাশোনা করতেন সাখাওয়াত হোসেন। সম্প্রতি ঝরনাটির ইজারা ওহিদুল পাওয়ার পর সেখান থেকে নৌকা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন সাখাওয়াত। বিষয়টি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। তবে উভয় পক্ষই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য বদল ব এনপ ঝরন র

এছাড়াও পড়ুন:

গেইল-পেরেরাদের পারিশ্রমিক, হোটেল বিল না দিয়েই লিগের আয়োজকেরা পালিয়েছেন

টুর্নামেন্টের নাম ইন্ডিয়ান হেভেনস প্রিমিয়ার লিগ বা আইএইচপিএল। ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে আয়োজিত টুর্নামেন্টটি ক্রিস গেইল, থিসারা পেরেরাদের জীবনে নিয়ে এসেছে মহা বিড়ম্বনা। বিশ্ব ক্রিকেটের নামি এই খেলোয়াড়দের হোটেলে রেখে শহর থেকে পালিয়ে গেছেন লিগের আয়োজকেরা। খেলোয়াড়, ম্যাচ কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি, পরিশোধ করা হয়নি হোটেলের বিলও।

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে। গত ২৫ অক্টোবর আট দল নিয়ে শুরু হওয়া আইএইচপিএল শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ নভেম্বর। কিন্তু শনিবার সকালে খেলোয়াড়দের জানানো হয়, কারিগরি কারণে দিনের খেলা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রোববার সকালে হোটেলে থাকা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আয়োজকেরা আগের রাতে শ্রীনগর ছেড়ে চলে গেছেন।

হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, আয়োজকদের কাছ থেকে তারা কোনো বিল পায়নি। সেই সময় প্রায় ৪০ জনের মতো খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা হোটেলেই আটকা পড়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কর্মকর্তা মেলিসা জুনিপার আইএইচপিএলে আম্পায়ারিং করতে গিয়েছিলেন। শ্রীনগরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আয়োজকেরা হোটেল থেকে পালিয়ে গেছেন। তারা হোটেল, খেলোয়াড় বা আম্পায়ার কারও বিল পরিশোধ করেননি। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি যেন সবাই বেরিয়ে যেতে পারে।’

শ্রীনগরের যে হোটেলে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছিল, সেখানকার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আয়োজকেরা ১০ দিন আগে খেলোয়াড়দের জন্য ১৫০টি কক্ষ চেয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ক্রিস গেইলের মতো তারকার কারণে কাশ্মীরের পর্যটন উপকৃত হবে। কিন্তু রোববার সকালে দেখি তাঁরা উধাও হয়ে গেছেন। আমাদের বিলও দেননি। গেইলসহ কয়েকজন খেলোয়াড় শনিবারই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন।’

গেইল ছাড়াও টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা, নিউজিল্যান্ডের জেসি রাইডার, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভি এবং ওমানের আয়ান খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুর্নামেন্টের প্রচারণায় যে সব পোস্টার ব্যবহার করা হয়েছে, তার একটিতে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ছবিও বড় আকারে দেখা গেছে।

ভারতের সাবেক ক্রিকেটার পারভেজ রসুল এই টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন। তিনি জানান, কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় হোটেলে আটকা পড়েছিলেন। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় তাঁরা বেরিয়ে যান, ‘এক ইংলিশ আম্পায়ার হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছিলেন’।

স্থানীয় এক ক্রিকেটার জানান, আয়োজকেরা সম্ভবত ধারণাই করতে পারেননি এমন একটি টুর্নামেন্ট চালাতে কত বড় বাজেট প্রয়োজন। শেষ মুহূর্তে স্পনসররা সরে যাওয়ায় অর্থ সংকট তৈরি হয়েছিল, ‘প্রথম দিন নির্ধারিত পোশাকও ছিল না, স্থানীয়ভাবে কিনে আনা হয়েছিল। কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেও লিখিত চুক্তি করা হয়নি।’

টুর্নামেন্টটির আয়োজক ছিল যুবা সোসাইটি মোহালি নামের একটি সংস্থা। সহযোগিতায় ছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্পোর্টস কাউন্সিল। কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা জানান, আইএইচপিএল সভাপতি আশু দানি পুলিশের ছাড়পত্র ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিলেন, ‘তারা আমাদের টাকা দিয়েছে। এখানে সরকারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন লিগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল, আমরা জানি না।’

তবে ২২ অক্টোবরের একটি সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার অংশুল গার্গের সভাপতিত্বে আইএইচপিএল নিয়ে এক প্রস্তুতি সভার কথা উল্লেখ ছিল, যেখানে অনুমান করা হয়েছিল বকশি স্টেডিয়ামে ২৫–৩০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে দর্শক উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। টিকিটের দাম কমিয়েও সাড়া মেলেনি।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ