রাস্তার পাশে বা বিপণিবিতানের সাজিয়ে রাখা ভেন্ডিং মেশিনে টাকা প্রবেশ করানো হলে পছন্দ অনুযায়ী পণ্য মেশিন থেকে বেরিয়ে আসার কথা। কিন্তু বিদ্যুৎ আছে তো পণ্য নেই, পণ্য আছে তো রক্ষণাবেক্ষণ নেই। ওদিকে অনেক গ্রাহকও ভেন্ডিং মেশিনে টাকা প্রবেশ করাতে পারেন তো পণ্য বের করে আনতে পারেন না, পণ্য বের করে আনতে পারেন তো দাম পরিশোধ করতে পারেন না। 

এ অবস্থায় প্রথাগত পদ্ধতির সংমিশ্রণে আসে জোড়াতালির সমাধান। অনেকে বলেন ‘বাংলা নিয়ম’। ভেন্ডিং মেশিন ঠিকই আছে, কিন্তু সেটির পেছনে একটু আড়ালে বসে থাকেন বিক্রেতা। গ্রাহকেরা স্লটের কাছে টাকা প্রবেশ করাতে গেলে আচমকা হাত বাড়িয়ে টাকা নেন তিনি। নিজেই আবার পণ্য বের করে গ্রাহকের হাতে তুলে দেন। বাংলা নিয়মে হওয়া এই সমাধানে সাময়িক কাজ চালিয়ে নেওয়া গেলেও ব্যাহত হয় মূল উদ্দেশ্য।

আমাদের রাজধানী শহরের যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিক এক সংযোজন মেট্রোরেল। এ শহরে কে ভেবেছিল, ১০ কিলোমিটার দূরের কোনো এক জায়গার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে নিশ্চয়তা দিয়ে বলে দেওয়া যাবে ‘২০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছে যাব’!

এখন পর্যন্ত মেট্রোরেলের সেবা এবং পরিচালনা কার্যক্রম, মোটের ওপর প্রশংসার দাবি রাখে। পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই এত বড় একটা সিস্টেম পরিচালনা করা চাট্টিখানি কথা নয়। তবে আজকালকার পৃথিবীতে সেবার মান যেখান থেকে শুরু হয়েছে, দিনের পর দিন সেখানেই পড়ে থাকলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।

কিন্তু শঙ্কা হয়, সে আধুনিক ব্যবস্থা না আবার বাংলা নিয়মের খপ্পরে পড়ে যায়। ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে, একই গেটকে দুভাবে ভাগ করে এক পাশ দিয়ে প্রবেশ এবং অন্য পাশ দিয়ে বের হওয়ার আয়োজন করা হচ্ছে। বের হওয়ার সময় প্রায়ই দেখা যাচ্ছে স্লটে আটকা পড়ছে কার্ড। ভেন্ডিং মেশিনের মতো একজন মানুষ বারবার এসে স্লট মেশিনে খুটখাট করে কিছু একটা ঠিক করছেন। সে সময় যাত্রীরা সবাই লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন। 

এই যানজটের শহরে মেট্রোরেল নগরবাসীর জন্য বিরাট এক আশীর্বাদ। আমরা চাই সেটি যেন যথাযথ প্রক্রিয়ায় সেবার মান নিশ্চিত করে, লাভজনক প্রতিষ্ঠান হয়ে পরিচালিত হতে থাকে। 

প্ল্যাটফর্মে এসেই আপনি দেখতে চাইবেন নেক্সট রেলটা আসার সময় কতক্ষণ, সেটি যেখানে দেখানো হচ্ছে সে ডিসপ্লেতে টাইমের জায়গায় লেখা আছে ৬ (ছয়) গন্তব্যের জায়গায় কোচ। খুব সহজে মানুষ বিভ্রান্ত হবে, এটি কি পরবর্তী কোচ আসতে ছয় মিনিট বাকি সেটি বোঝাচ্ছে, নাকি ছয়টি কোচ আছে সেটি বোঝাচ্ছে, নাকি ছয় নম্বর কোচ আসছে সেটি বোঝাচ্ছে। 

বাস্তবতা হচ্ছে পাবলিক স্টেশনে মানুষ তাড়াহুড়ার মধ্যে থাকে, সেখানে চিন্তা করে বের করার সময় যাত্রীরা খুব কম পাবেন। আরেকটু বিস্তারিত তথ্য না লেখার পেছনে কম কথায় লিখে বিদ্যুৎ খরচ কমানোর একটা যুক্তি আসতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ বাঁচানোর বিবেচনা যদি আনতেই হয়, সে ক্ষেত্রে বরং যাত্রীদের মতামত নিয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে, ওপর থেকে নিচে নামার জন্য লিফট থাকার পরও আলাদা করে আবার চলন্ত সিঁড়ি রাখার প্রয়োজন আছে নাকি।

এই চলন্ত সিঁড়ির সাইনবোর্ড নিয়েও আছে অসুবিধা। দূর থেকে সাইনবোর্ড দেখে বোঝার উপায় নেই এই সিঁড়ি দিয়ে ওপরে যাওয়া যাবে, নাকি সেটি নিচে নামছে।  একেবার সিঁড়ির গোড়ায় গিয়ে বড় বড় চোখ করে দেখতে হয় সিঁড়িগুলো কোনমুখী হয়ে চলছে। অথচ খুব সহজে দুই ধরনের গতিপথের জন্য দুটি আলাদা তিরচিহ্ন বা গতিমুখ নির্দেশক সংকেত রাখা যেত। 

আরও পড়ুনমেট্রোরেল যা শেখাল আমাদের২৩ জানুয়ারি ২০২৪

যদিও এই মতামতগুলো পুরো ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করে, বাস্তবসম্মত হবে কি না, সেটি মূল্যায়ন করে বলা নয়, বরং একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ হিসেবে বলা। এক ধাপ এগিয়ে, চাইলে আরও বেশ কিছু পরিষেবাও যুক্ত করা যায়। প্রতিটি কোচেই সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। সেখান থেকে ইমেজ প্রসেস করে খুব সহজেই ধারণা করা যায়, কোন বগিতে ভিড় কেমন। এমনকি পরের রেলে ভিড় কেমন, সেটিও জানা যায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

এ তথ্যগুলো গুগল ম্যাপের মতো হলুদ, লাল, সবুজ বিভিন্ন রং দিয়ে যদি প্ল্যাটফর্মে থাকা যাত্রীদের দেখানো যায়, এমনকি ওয়েবসাইটেও লাইভ দেখানো যায়, তাহলে মানুষ ভিড় অনুযায়ী বের হওয়ার পরিকল্পনা করতে পারবে। এতে করে মেট্রোরেল এবং যাত্রী উভয়েই লাভবান হবে।  

ওদিকে ডেটাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই যুগে কেন একটা সার্ভিস প্রতি ৮ মিনিট পরপর চলতে হবে? কেন চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পিক আওয়ারে কোচ বাড়ানো হবে না এবং অফ পিক আওয়ারে সেটি কমানো হবে না?

একেবারেই ছোট পরিবর্তন দিয়ে শুরু করতে চাইলেও অন্তত এয়ার ফ্রেশনার দেওয়ার কথাও বিবেচনা করা যায়, যেটি বাইরের দেশগুলোর মেট্রোতে দেওয়া হয়। এগুলো করতে হয়তো কিছুটা বাজেট প্রয়োজন হবে, কিন্তু যাত্রীদের মধ্যে এ অনুভূতিটা তৈরি হবে যে যাত্রীদের কেয়ার করা হয়।  

এই যানজটের শহরে মেট্রোরেল নগরবাসীর জন্য বিরাট এক আশীর্বাদ। আমরা চাই সেটি যেন যথাযথ প্রক্রিয়ায় সেবার মান নিশ্চিত করে, লাভজনক প্রতিষ্ঠান হয়ে পরিচালিত হতে থাকে। 

আমরা চাই অদূর ভবিষ্যতে অব্যবস্থাপনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, হঠাৎ করে টিকিটের দাম যেন না বাড়ানো হয়। আমরা চাই যেখানে যেখানে সম্ভব স্বয়ংক্রিয় আধুনিক পদ্ধতিতেই চলুক মেট্রোরেলের কার্যক্রম, ভেন্ডিং মেশিনের মতো টিকিট স্লটের পাশ থেকে মানবকণ্ঠে কেউ যেন না বলে ওঠে, ‘চাচা আপনে’?        

ড.

বি এম মইনুল হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ র জন য পর চ ল প রব শ ব র কর

এছাড়াও পড়ুন:

বাগেরহাটে চার আসন বহালের দাবিতে নতুন কর্মসূচি 

বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। আগামী শুক্র ও শনিবার (১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর) গণস্বাক্ষর সংগ্রহ এবং রবি ও সোমবার (২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর) জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে অর্ধদিবস অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতা এম এ সালাম নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এম এ সালাম বলেছেন, “বাগেরহাটের চারটি আসন অক্ষুণ্ন রাখার দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, তবে জনগণের দাবি প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”

এর আগে আসন কমানোর প্রতিবাদে জেলা জুড়ে হরতাল, বিক্ষোভ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পাশাপাশি উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে।

ঢাকা/শহিদুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ