২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য আসছে নতুন বাজেট। বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যদিও বাজেটের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে সামান্য কম, তবে বার্তাটি অনেক গভীর। এটি কেবল অর্থের হিসাব নয়; বরং একটি স্পষ্ট বার্তা অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেট পেশ করবেন।

জানা গেছে, নতুন বাজেটে ঘাটতির হার জিডিপির মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা সংশোধিত বাজেটে ৪ শতাংশে নামানো হয়েছে। একধাপে আরো এক ধাপ নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা চলতি বাজেটকে একটি নীতি-নির্ধারক মোড় দিয়েছে। ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা, বাকি অর্থ আসবে বিদেশি ঋণ ও অনুদানের মাধ্যমে।

আরো পড়ুন:

তামাক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির বাজেট বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপের আশ্বাস

অন্তর্বর্তীকালীন সংসদ সচিবালয় কমিশনের ৩৬তম বৈঠক অনুষ্ঠিত

অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে চাই। বড় অবকাঠামো প্রকল্পে বরাদ্দ সীমিত থাকবে। প্রশাসনিক ব্যয় কমানো কঠিন হলেও সেটিও সংযত করার পরিকল্পনা রয়েছে।”

নতুন বাজেটে সরকারি ব্যয় মোট জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরে এই হার ছিল ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এ থেকেই বোঝা যায়, সরকার এবার ব্যয়ের লাগাম টানতে আগ্রহী। বিশেষ করে সুদ ও ঋণ পরিশোধে বড় অঙ্কের অর্থ চলে যাওয়ায় অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ সীমিত হয়ে পড়ে। এবার সে খাতে নিয়ন্ত্রণ আনতে যাচ্ছে সরকার।

ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা নতুন বাজেটে কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকায় নামানোর প্রস্তাব রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তন দেশের মুদ্রানীতিতে একটি ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, “বিদেশি ঋণ নেওয়া হোক, তবে সেটির ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করলে ভবিষ্যতে তা ঋণের ফাঁদে পরিণত হতে পারে।”

সরকারি কর্মকর্তারাও বিষয়টি স্বীকার করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দেশীয় উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ সীমিত। তাই বিদেশি ঋণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তবে তা যেন বোঝায় না পরিণত হয়, সে বিষয়ে আমাদের সাবধান থাকতে হবে।

অর্থনীতিবিদ ও বাজেট বিশ্লেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, “ঘাটতি কমানো অবশ্যই ইতিবাচক। তবে সেটি তখনই টেকসই হবে যখন রাজস্ব আহরণে কাঠামোগত সংস্কার হবে। এনবিআরের আধুনিকায়ন, করজালের সম্প্রসারণ, ও কর ফাঁকি রোধ এখন সময়ের দাবি।”

রাজস্ব আয় বাড়ানো ছাড়া সরকার যে কৌশলগতভাবে ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করজালের পরিধি বাড়িয়ে মধ্য ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির করপরিহার প্রবণতায় লাগাম টানতে হবে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কর-সুবিধা নিশ্চিত করাও হবে গুরুত্বপূর্ণ।

সরকার এবার ব্যাংকনির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প উৎসে নজর দিচ্ছে। ট্রেজারি বন্ড ও সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। ব্যক্তি ও করপোরেট খাতে বন্ড বিক্রির মাধ্যমে সরকার অর্থ জোগান দিতে চায়-যা একই সঙ্গে সুদবিহীন উৎস এবং দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে অর্থায়নের পথ খুলে দিতে পারে।

অর্থনীতিবিদ ড. কে এম মোস্তফা বলেন, “রাজস্ব আহরণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ছাড়া বাজেট ঘাটতি কমানোর অন্য পথ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা ছাপানোর পথ বেছে নিলে মূল্যস্ফীতির চাপ কমবে না, বরং তা আরো বাড়বে।”

সরকারের এই বাজেট তাই একদিকে যেমন রাশ টানার বার্তা দিচ্ছে, অন্যদিকে টেকসই প্রবৃদ্ধির ভিত্তিও গড়ে তুলতে চাচ্ছে। বড় প্রকল্প স্থগিত রেখে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ রক্ষা করার ইঙ্গিত মিলেছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে।

বাংলাদেশ সচিবালয়ের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মো. আবুল হাসান বলেন, “বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে রাজস্ব আয় বাড়ানো ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা। একই সঙ্গে বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা বাড়লে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিমণ্ডলেও সরকারের কৌশলী হতে হবে।”

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট তাই কেবল অর্থনীতির চিত্র নয়, এটি একটি নীতিগত অবস্থান, একটি শৃঙ্খলার বার্তা দিবে।

ঢাকা/এএএম/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নত ন ব জ ট সরক র র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 

সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (গভর্নেন্স পারফরমেন্স মনিটরিং সিস্টেম- জিপিএমএস)’ বাস্তবায়নে অর্থ উপদেষ্টা  সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে তিন সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করেছে সরকার। 

সম্প্রতি এই কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

কমিটিতে বাকি দুই সদস্য হলেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি কাজের জবাবদিহিতা, দক্ষতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) পরিবর্তে নতুন সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি (জিপিএমএস) চালু করা হয়েছে। এই জিপিএমএস বাস্তবায়নে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার), বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব কমিটিকে সহায়তা করবেন। তাছাড়া, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

এ কমিটি জিপিএমএস বাস্তবায়নের বিষয়ে সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেবে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসে সেকশন ১-এর আওতায় প্রস্তুত করা পরিকল্পনা অনুমোদন দেবে এবং অর্থবছর শুরুর আগে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত করবে এ কমিটি।

এছাড়া, প্রতি অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জিপিএমএসের সার্বিক মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে। জিপিএমএস বিষয়ে সরকারের দেওয়া অন্য যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেসরকারি ঋণ তলানিতে, তবে ঋণপত্র খোলায় গতি
  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে
  • তিন মাসে গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি টাকা
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
  • সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি