আমেরিকা যে কারণে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে
Published: 30th, May 2025 GMT
চলতি বছরের ২ এপ্রিল থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নতুন বিশ্ব বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন। এখন সেটি এক নতুন পর্যায়ে ঢুকেছে। বাণিজ্যযুদ্ধ এখন ‘চুক্তি’র রাজনীতিতে রূপ নিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্প্রতি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাতে কিছু ‘প্রাথমিক প্রস্তাব’ দেওয়া আছে। এগুলো ভবিষ্যতে হয়তো একটি পূর্ণাঙ্গ মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে রূপ নিতে পারে। হোয়াইট হাউস একটি অনলাইন পোস্টে এই পদক্ষেপকে ‘আর্ট অব দ্য ডিল’ বলে আখ্যায়িত করেছে। তারা দাবি করেছে, চীনের ওপর আমেরিকার একতরফাভাবে আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে এবং চীনও তার পাল্টা ব্যবস্থা বন্ধ করেছে।
আরও বলা হচ্ছে এখন ‘ডজনখানেক’ দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ‘চুক্তি’র মানে দাঁড়ায়, আমেরিকা এখনো আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের বেঁধে রাখার মতো বিশ্বাসযোগ্য ক্ষমতা রাখে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আসলে কি যুক্তরাষ্ট্র আর নিজের কথা রাখতে পারে?
একটি গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনভিত্তিক রাষ্ট্র সাধারণত দুভাবে আন্তর্জাতিক সমঝোতায় আবদ্ধ হয়। একটি হলো আইন প্রণয়নের মাধ্যমে, অপরটি হলো দুই দেশ সম্মত হয়ে সই করা চুক্তির (ট্রিটির) মাধ্যমে। কিন্তু যদি কোনো দেশ খেয়ালখুশিমতো পূর্বঘোষণা ছাড়াই চুক্তি থেকে বের হয়ে যায়, তাহলে সেই দেশের ওপর কেউ আর আস্থা রাখতে পারে না। ট্রাম্প ইতিমধ্যে এই কাজ করেছেন এবং তাঁর প্রশাসনের আচরণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তিনি নিজে আইন বা আন্তর্জাতিক চুক্তির বাধ্যবাধকতা মানেন না। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যকর ক্ষমতাও এখন মার্কিন আইনি কাঠামোর হাতে নেই।
মার্কিন কংগ্রেস অষ্টাদশ শতক থেকেই বাণিজ্যসংক্রান্ত কিছু ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রেসিডেন্টদের হাতে তুলে দিয়েছে। জর্জ ওয়াশিংটন, জন অ্যাডামস, টমাস জেফারসনের সময়ও এই ক্ষমতা খুব নির্দিষ্টভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে এতে পরিষ্কার সীমাবদ্ধতা দেওয়া থাকত, যাতে বিদেশি অংশীদারেরাও বুঝতে পারে, হোয়াইট হাউস কী করতে পারে আর কী করতে পারে না।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এসব আইনি সীমা পাশ কাটিয়ে কার্যত নিজ ইচ্ছায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সাধারণত ১৯৬২ সালের ট্রেড এক্সপানশন অ্যাক্টের মতো আইন অনুসরণ করে শুল্ক আরোপ করা হয়। এতে দীর্ঘ তদন্ত, বিশ্লেষণ ও রিপোর্ট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। কিন্তু ট্রাম্প এসব উপেক্ষা করে ১৯৭৭ সালের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার অ্যাক্ট’ ব্যবহার করে হঠাৎ করেই ‘পারস্পরিক’ শুল্ক বসিয়ে দিয়েছেন।
আমি ও অন্য অনেক আইনি বিশ্লেষক আগেই দেখিয়েছি, এই আইন ট্রাম্প যেভাবে ব্যবহার করেছেন, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। সেই বিবেচনায় শুরু থেকেই যুক্তরাজ্য ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপ আইনবহির্ভূত। এখন কীভাবে হোয়াইট হাউস দাবি করবে যে তারা ভবিষ্যতে আইনের প্রতি বাধ্য থাকবে?
আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ‘ট্রিটি’, অর্থাৎ দুই বা তার অধিক দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত আনুষ্ঠানিক চুক্তি। কিন্তু ট্রাম্প সেসবকেও অগ্রাহ্য করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৮ সালে তিনি নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (নাফটা) আবার আলোচনার দাবি তোলেন। পরে ২০২০ সালে কংগ্রেস ‘ইউএস-মেক্সিকো-কানাডা অ্যাগ্রিমেন্ট’ অনুমোদন করে।
কিন্তু ২০২৫ সালে ট্রাম্প নিজেই আবার এই চুক্তির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিন দেশেই ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসিয়ে দেন। এমনকি তিনি বলেছেন, ১৯০৮ সালের কানাডা-আমেরিকা সীমান্তচুক্তির লাইনটা ‘অবাস্তব’ ও ‘অর্থহীন’। এর মানে মার্কিন আইনি কাঠামো বা আন্তর্জাতিক চুক্তি—এখনকার মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কাছে দুটোরই কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
মার্কিন সংবিধানবিষয়ক ব্যাখ্যা অনুসারে, কোনো পূর্বঘোষণা বা কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই প্রেসিডেন্ট ইচ্ছা করলে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাই করেছিলেন। তিনি একতরফাভাবে তাইওয়ানের সঙ্গে ১৯৫৪ সালের প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করে দেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সিনেটর ব্যারি গোল্ডওয়াটার মামলা করেছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলা আমলেই নেননি।
এই দুর্বলতা আরও বড় হতো যদি কোনো অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ট্রাম্পকে সময়মতো আটকাতে পারত। কিন্তু কংগ্রেস কার্যত স্তব্ধ। রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারাও এই ভয়ে মুখ খুলছেন না যে কেউ প্রাইমারিতে তাঁদের বিরুদ্ধাচরণ করে বসতে পারেন। তাঁরা ট্রাম্পের নিযুক্ত অযোগ্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কোনো প্রতিবাদ করেননি।
অনেকে আশা করেন, আদালত ট্রাম্পকে বাধা দিতে পারেন। সম্প্রতি নিউইয়র্কের ‘ইউএস কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড’-এ ট্রাম্পের শুল্ক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রথম মামলা হয়েছে। কিন্তু আমি খুব আশাবাদী নই। কারণ, মামলার রায় আসতে অনেক দেরি হয়। তত দিনে ট্রাম্প যা করার তা করে ফেলেন। তাঁর প্রশাসন আগেও আদালতের রায় অগ্রাহ্য করেছে। পররাষ্ট্রনীতি–সংক্রান্ত ইস্যু হলে তো তা আরও সহজ হয়।
আজকের দিনে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কোনো দেশ যদি কোনো ‘চুক্তি’ করে, তাহলে সেটিকে কেবল সাময়িক সুবিধা হিসেবেই দেখা উচিত। এটিকে স্থায়ী কোনো সমঝোতা বলে ভাবলে ভুল হবে। কারণ, ট্রাম্প একবার চুক্তি করলেও পরে নিজের মতো করে সেটি বদলে ফেলেন, এমনকি কখনো কখনো তা পুরোপুরি বাতিলও করে দেন। বড় বড় আইনপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার পরও ট্রাম্প কথা রাখেননি। তিনি নিয়ম বদলেছেন, শর্ত পাল্টেছেন আর কখনো হঠাৎ করেই পিছিয়ে গেছেন।
এমন অবস্থায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মতো নেতারা যদি রাজনৈতিক চাপে পড়ে তাড়াহুড়া করে ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করেন, তাহলে পরে হতাশ হতে হবে। কারণ, তাঁরা যেটি ভাবছেন, বাস্তবে সেটি মিলবে না। ট্রাম্প যেসব কৌশল দিয়ে তাঁর বাণিজ্যযুদ্ধ চালাচ্ছেন, সেগুলোই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হওয়ার পথ আটকে দিচ্ছে।
আজিজ হক শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক এবং দ্য কলাপস অব কনস্টিটিউশনাল রেমিডিস বইয়ের লেখক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ন য ক তর আম র ক আইন র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু
সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।
তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।
সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’
যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকাঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।
তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।
ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।
ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদাঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।
১০ নারী প্রার্থীঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।
মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধমাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।