মায়ের সঙ্গে বিরোধের জেরে শিশুসন্তানকে পাটখেতে নিয়ে হত্যা, কথিত মামা গ্রেপ্তার
Published: 30th, May 2025 GMT
আট বছর বয়সের শিশু জিসানকে জুতা কিনে দেওয়ার কথা বলে সন্ধ্যায় মাদ্রাসা থেকে বাজারে নিয়ে যান কথিত মামা সোহেল রানা (২৮)। নতুন জুতা কিনে দেওয়ার পর রেস্তোরাঁয় নিয়ে খাওয়ান। রাত বেড়ে গেলে শিশুটি মাদ্রাসার যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। এরপরে বাজার থেকে রাত ১১টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে মাদ্রাসার পথে রওনা দেন তিনি। পথে একটি পাটখেতে নিয়ে মুখে ঘাস ও মাটিচাপা দিয়ে শিশুটিকে হত্যা করেন কথিত এই মামা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার একটি মাদ্রাসা থেকে শিশু জিসান নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় কথিত মামা সোহেল রানাকে আটকের পর তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ শুক্রবার সকালে পাটখেত থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটির মায়ের সঙ্গে বিরোধের জেরে সোহেল রানা শিশুটিকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় সোহেল রানাকে একমাত্র আসামি করে বিকেলে গঙ্গাচড়া থানায় হত্যা মামলা করেছেন শিশুটির মা জেসমিন আরা বেগম। তিনি উপজেলার চেংমারি উত্তরপাড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকেন। ওই বাড়িতে একসময় কাজ করতেন সোহেল রানা। তাঁর বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দ্রাহবি গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেসমিন একসময় ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সেখানে বেলাল হোসেন নামের একজনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরে তাঁরা বিয়ে করেন। তাঁদের একমাত্র সন্তান জিসান হোসেন। বছর পাঁচেক আগে বেলাল ভারতে পাড়ি জমান। তখন জেসমিন চাকরি ছেড়ে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে গঙ্গাচড়ার চেংমারি উত্তরপাড়া গ্রামে বাবার বাড়ি চলে আসেন। পরে শিশুসন্তান জিসানকে গঙ্গাচড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদিকুল ইসলাম এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার আবাসিক শাখায় ভর্তি করে দেন। শিশুটি মাদ্রাসায় থেকে নুরানি বিভাগে পড়ত।
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, প্রায় এক ব্যক্তি মাদ্রাসায় এসে জিসানকে খাবার কিনে দিয়ে যেত। জিসান বলত, লোকটি তার মামা। বৃহস্পতিবার সন্ধায় ওই ব্যক্তি জুতা কিনে দেওয়ার কথা বলে জিসানকে মহিপুর বাজারে নিয়ে যান। রাতে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা জিসানকে খুঁজলে সহপাঠীরা জানায়, জিসানকে তাঁর মামা বাজারে নিয়ে গেছেন। শিক্ষকেরা বিষয়টি জিসানের মাকে জানান। পরে মাদ্রাসা থেকে জিসানের এক সহপাঠীকে নিয়ে স্বজনেরা গভীর রাতে কথিত মামা সোহেল রানার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে যান। তখন জিসানের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। পরে কালিগঞ্জ থানা-পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশ এসে সোহেল রানাকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় সোহেল রানা জিসানকে হত্যা করে গঙ্গাচড়ার একটি পাটখেতে লাশ পুঁতে রাখার কথা জানান। আজ সকালে তাঁকে নিয়ে গঙ্গাচড়ায় এসে থানা-পুলিশের সহায়তায় উপজেলার লক্ষীটারি ইউনিয়ন পরিষদের মানাসপাড়া গ্রামের অদূরে একটি পাটখেত থেকে জিসানের লাশ উদ্ধার করা হয়।
গঙ্গাচড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হানিফ বলেন, জিসানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লাশ উদ্ধারের সময় দুই হাত ভাঙা এবং মুখে ঘাস ও মাটিচাপা দেওয়া ছিল। প্রাথমিকভাবে সোহেল রানা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, শিশুটির মায়ের কাছে সোহেল রানা ৫০ হাজার টাকা পেতেন। না দেওয়ায় তিনি পরিকল্পনা করে জিসানকে বাজারে ডেকে নিয়ে নতুন জুতা কিনে দেন। হোটেলে খাওয়ান। পরে মাদ্রাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়ার পথে পাটখেতে নিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশ ফেলে লালমনিরহাটের কালিগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে চলে যান।
শিশুটির মা জেসমিন আরা বেগম বলেন, সোহেল তাঁর বাবার বাড়িতে কাজ করতেন। তাঁর সন্তানসহ পরিবারের সবাই তাঁকে চিনতেন। বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি কাজ করেন না। তাঁর কাছে কোনো টাকাও পাবেন না। একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। জেসমিন আরা বেগম বলেন, ‘কী অপরাধ করেছিল আমার একমাত্র বুকের ধন? তাকে কেন হত্যা করল? আল্লাহ ওর (সোহেল) বিচার করবেন।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া
ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক সব সময়ই দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল অনুযায়ী এগিয়েছে।
অতীতেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লম্বা বিরতি দেখা গেছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৮—টানা ২৪ বছর পাকিস্তান সফরে যায়নি ভারত। আবার ১৯৬০ সালের পর পাকিস্তানও প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে যায় ১৯৭৯ সালে।
এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান নিয়মিত মুখোমুখি হয়েছে। এই সময়ে ভারত তিনবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে খেলে ১২ টেস্ট, পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে খেলে ৮ টেস্ট।
দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান তিন টেস্ট খেলতে ভারতে যায়। এর মধ্যে একটি ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ভারত ফিরতি টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় ২০০৪ সালে, যা ছিল ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেকের পর প্রথমবার।
২০০৪ সালের পাকিস্তান সফরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাটিংয়ে নামেন শচীন টেন্ডুলকার