২০২৪ সালে দেশে ১২৭ কোটি ৩ লাখ মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হয়েছে ব্যাংক খাতে। এক বছরে এই খাতে ৪১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। আর গত বছরে এফডিআই সবচেয়ে বেশি কমেছে বিদ্যুৎ খাতে।

বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে এফডিআই সর্বোচ্চ ২০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বেড়েছে ব্যাংক খাতে। এ বছরে ব্যাংক খাতে মোট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৪১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, যা এর আগের ২০২৩ সালে ছিল ২১ কোটি ৪ লাখ ডলার। আর ২০২২ সালে এফডিআই এসেছিল ২৬ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি ব্যাংক বিপুল পরিমাণ মুনাফা করে। তবে তারা ডলার–সংকটের কারণে মুনাফার এই অর্থ নিজেদের দেশে ফেরত নিতে পারেনি। তাই সেই অর্থ আবার বিনিয়োগ হিসেবে দেখানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে। অবশ্য আগের দুই বছরও ব্যাংক খাতে যে বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে, সেখানেও এ রকম দেশে থেকে যাওয়া বহুজাতিক ব্যাংকগুলোর মুনাফার টাকা ছিল।

এফডিআই আসায় ব্যাংক খাতের ঠিক পেছনেই রয়েছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। এই খাত পেয়েছে ৪০ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের এফডিআই। এ ছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ১৩ কোটি ৬০ লাখ, কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭ কোটি ৫ লাখ এবং ট্রেডিং খাতে ৫ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এফডিআই এসেছে। এর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে চামড়া, কৃষি, মৎস্য ও ট্রেডিং খাতে; কমেছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, ফার্মাসিউটিক্যালস ও টেলিকমিউনিকেশন খাতেও গত বছর এফডিআই কমেছে। গত বছর বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতে এফডিআই এসেছে মাত্র ৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, যা আগের বছরের ১২ কোটি ২৫ লাখ ডলারের চেয়ে ৮ কোটি ৬৭ ডলার বা ৭১ শতাংশ কম। অর্থাৎ বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ কমে প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগে নেমে এসেছে।

বিনিয়োগকারীরা দেখেন যে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে কি না। এফডিআই বাড়াতে বর্তমান সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে; কিন্তু সেগুলো পূর্ণাঙ্গ নয়। দেশে সার্বিক যে পরিস্থিতি রয়েছে, তাতে নিকট ভবিষ্যতে এফডিআই ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখি নাজাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়

নিট এফডিআই কমেছে

বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করে, নতুন প্রকল্পে টাকা আনে কিংবা শেয়ার কেনে—এ সবই মোট বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) হিসেবে গণ্য হয়। অর্থাৎ এই অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। তবে বিদেশি কোম্পানিগুলো একই সঙ্গে দেশ থেকে তাদের মুনাফা ফেরত নিয়ে যায়, কখনো কখনো আবার শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নেয় (মূলধন ফেরত)। এগুলো হচ্ছে এফডিআই আউটফ্লো বা বহির্গমন। মোট এফডিআই থেকে আউটফ্লো বাদ দিলে নিট এফডিআই পাওয়া যায়। অর্থাৎ এ অর্থই শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিতে থেকে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২৪ সালে দেশে মোট এফডিআই এসেছে ৪২৭ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৩০০ কোটি ডলারই ফেরত নিয়ে গেছে বিদেশিরা। সেই হিসাবে গত বছর দেশে নিট এফডিআই–প্রবাহ ছিল ১২৭ কোটি ডলার, যা ২০২৩ সালে ছিল ১৪৬ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ গত বছর নিট এফডিআই প্রায় ১৯ কোটি ডলার বা ১৩ শতাংশের কিছু বেশি কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০২৪ সালের মধ্যবর্তী দুই প্রান্তিকে দেশে এফডিআই–প্রবাহ কমেছে। তবে বছরের চার প্রান্তিকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম তিন মাসে ৪০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার নিট এফডিআই এসেছিল। এর পরে তা কমে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ২৭ কোটি ২২ লাখ ডলারে ও জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১০ কোটি ৪৩ লাখ ডলারে নেমে যায়। গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান করেছিল। বছরের শেষ প্রান্তিকে অবশ্য নিট এফডিআই বেড়ে ৪৯ কোটি ৪ লাখ ডলারে উঠেছে।

ব্যাংক খাতে ৪১.

৬৩ কোটি, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে ৪০.৭৪ কোটি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ১৩.৬০ কোটি, কৃষি ও মৎস্য খাতে ৭.০৫ কোটি, ট্রেডিং খাতে ৫.৬৩ কোটি এবং বিদ্যুৎ খাতে ৩.৫৮ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছে।

গত বছর বাংলাদেশে বিদেশি কোম্পানিগুলোর ইকুইটি মূলধন বিনিয়োগের প্রবাহও কমেছে। এর মানে হলো, তারা কম পরিমাণে মালিকানা (শেয়ার) কিনেছে বা নতুন ব্যবসায়ে কম অর্থ লগ্নি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিদেশিরা দেশে ইকুইটি বা নতুন বিনিয়োগ করেছে ৫৪ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার, যা ২০২৩ সালে ছিল ৫৮ কোটি ৮২ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরে ইকুইটি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার বা ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইকুইটি বিনিয়োগ কমেছে, যা সার্বিকভাবে এফডিআই প্রবাহ কমিয়েছে। এ ছাড়া গত বছর বিদেশি কোম্পানির পুনর্বিনিয়োগ ও আন্তকোম্পানি বিনিয়োগও (ঋণ) কমেছে। সাধারণত ইকুইটি বিনিয়োগ কমে যাওয়াকে দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি বিনিয়োগের আগ্রহ কমার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হয়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে আমরা যে পরিস্থিতি পার করেছি তাতে নতুন বিনিয়োগ আসার সুযোগ ছিল না। কারণ, বিদেশি বিনিয়োগ আসার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো, শ্রমিক ও নীতির ধারাবাহিকতা—এগুলো পূর্বশর্ত। তারও আগে বিনিয়োগকারীরা দেখেন যে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে কি না। এফডিআই বাড়াতে বর্তমান সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে; কিন্তু সেগুলো পূর্ণাঙ্গ নয়। দেশে সার্বিক যে পরিস্থিতি রয়েছে, তাতে নিকট ভবিষ্যতে এফডিআই ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখি না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ন য় গ কম ২০২৩ স ল ২০২৪ স ল গত বছর অর থ ৎ প রব হ ত বছর বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্

বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় অসদাচরণের  অভিযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বরখাস্তকৃতরা হ‌লেন: গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মনি, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী  আবদুল্লা আল মামুন, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোছাঃ রাহানুমা তাজনীন, নির্বাহী প্রকৌশলী ফারহানা আহমেদ, সহকারী প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি শিরাজী তারিকুল ইসলাম। 

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জানায়, কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকায় অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশের মাধ্যমে এ সকল কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

জানা গে‌ছে, মনিরুজ্জামান মনি টরেন্টো ইউনিভার্সিটিতে ডক্টোরাল প্রোগ্রামে অংশ নিতে ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি কাটানোর পর পরবর্তী সময়ে অনুমতি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী তাকে ২১ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে বরখাস্ত করা হয়। 

আবদুল্লা আল মামুন পিএইচ.ডি করতে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে  ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। এরপর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা মোতাবেক তাকে ১৫ মে ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।    

মোছাঃ রাহানুমা তাজনীন ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জুলাইয়ের ৭ তারিখ পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে অননুমোদিতভাবে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ২ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।   

ফারহানা আহমেদ ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর  থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

মফিজুল ইসলাম ২০২৩ এর ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি কাটালেও পরে ছুটি না নিয়ে অফিসে  অনুপস্থিত। তাকে ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

শিরাজী তারিকুল ইসলামও ২০২২ সালের ১২ মে থেকে ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ২১ মে ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কলকাতায় বাংলাদেশি অভিনেত্রী গ্রেপ্তার , দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের
  • কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
  • ওভালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত, একাদশে চার পরিবর্তন
  • কর্মস্থলে অনুপস্থিত, পাঁচ প্রকৌশলী ও এক স্থপতি বরখাস্ত
  • গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্
  • দলবদলের বাজারে চেলসিই রাজা, শীর্ষ দশে আর কারা
  • গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়ালো
  • সরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি: ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে এসএসসি উত্তীর্ণদের সুযোগ
  • আলোচিত ষোড়শী আইনার পারিশ্রমিক কত?