বাজেট শুধু সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করে না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক নীতি দলিল।  বাজেট নিয়ে আলোচনায় প্রায়ই বরাদ্দের অগ্রাধিকার ও রাজস্ব পদক্ষেপের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয় অনেক সময় উপেক্ষিত থাকে।
বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা মূল্যায়নে ‘ওপেন বাজেট সার্ভে’ একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। এই জরিপে তিনটি মূল বিষয় মূল্যায়ন করা হয়। প্রথমটি হলো– বাজেটসংক্রান্ত তথ্য জনগণের জন্য কতটুকু উন্মুক্ত। দ্বিতীয়ত–বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনঅংশগ্রহণের সুযোগ কতটুকু রয়েছে। পার্লামেন্ট ও জাতীয় নিরীক্ষা কার্যালয়সহ তদারকি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা মূল্যায়ন করা আরেকটি উপাদান।
স্বচ্ছতা সূচকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল মাত্র ১০০-এর মধ্যে ৩৭, যা ২০১২ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫৮। জনগণের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের স্কোর ২০২৩ সালে মাত্র ১১। তদারকিতে ছিল ৩৭। সব স্কোরই বৈশ্বিক গড়ের অনেক নিচে। ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোরে কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে অবনতির দিকে গেছে। যদিও ২০২৩ সালে সরকারের বাজেট প্রস্তাবনা বিস্তৃত ছিল, তবে জাতীয় সংসদে অনুমোদিত বাজেট এবং সিটিজেন বাজেট (যা সরকারের নির্বাহী বাজেট প্রস্তাবনার মৌলিক তথ্যগুলো সাধারণ নাগরিকদের কাছে সহজভাবে তথ্য উপস্থাপন করে) এখনও অনেক সীমিত। প্রাক-বাজেট বিবৃতি, বছর শেষের প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মতো অতিপ্রয়োজনীয় তথ্য উপাদান শুধু অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে সীমাবদ্ধ। এ ছাড়া বছরের মাঝে বাজেট বাস্তবায়নবিষয়ক রিপোর্ট দেরিতে প্রকাশ হয়। এতে করে এসব রিপোর্টের কার্যকারিতা কমে যায়। এ ছাড়া বছরের মধ্যভাগে কোনো পর্যালোচনা হয় না।
বাংলাদেশের বাজেট প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত। বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদনের সময় অল্প কিছু মতামত নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন ও নিরীক্ষা পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ অনুপস্থিত রয়েছে। ফলে ওপেন বাজেট সূচকের এই অংশে বাংলাদেশের স্কোর শূন্য। বাজেট তদারকিতেও বাংলাদেশের অবস্থা দুর্বল। বাজেটের  পরিকল্পনা পর্যায়ে জাতীয় সংসদের ভূমিকা খুবই কম এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে তেমন কোনো নজরদারি করে না। এ প্রবণতা বিশেষভাবে প্রমাণ করে যে, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও জবাবদিহির ক্ষেত্রগুলো ধীরে ধীরে অবনতি হয়েছে। গত এক দশকে বাজেট উন্মুক্ততায় যে বিপর্যয় ঘটেছে, তা গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অবনতিরই বহিঃপ্রকাশ।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজেটের স্বচ্ছতা এ জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বাজেট বাস্তবায়ন পর্যায়েও তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। প্রাক-বাজেট বিবৃতি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। বছরের মধ্যভাগে এসে কোনো বাজেট প্রস্তুত করা হয়নি। গত সরকারের বাজেট বাস্তবতাবর্জিত হওয়া সত্ত্বেও তাতে কোনো সংশোধনী আনা হয়নি। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জানার জন্য প্রণীত শ্বেতপত্রে সময়মতো বাজেট সংশোধনের সুপারিশ থাকলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে।
বাজেটসংক্রান্ত তথ্য ও নথিপত্রের সহজলভ্যতা বাড়বে কিনা, তা এখনও অনিশ্চিত। বর্তমানে সংসদ কার্যকর নেই। ফলে সরকারের নির্বাহী বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা বা পর্যালোচনার সুযোগ কম। তা ছাড়া বাজেট ঘোষণার পরপরই ঈদ উপলক্ষে ১০ দিনের সরকারি ছুটি এ প্রক্রিয়াকে আরও বাধাগ্রস্ত করবে।
বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে বেশি স্বচ্ছতা ও উন্মুক্ততা প্রত্যাশিত ছিল। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়োজনে প্রাক-বাজেট আলোচনাগুলো স্বাভাবিকভাবে হলেও অর্থ বিভাগের আলোচনা সীমিত রাখা হয়। সরকারের বাইরে অন্যদের বাজেট সম্পর্কিত আলোচনায় মূল নীতিনির্ধারকরা অনেক ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হতে চাননি। রাজনৈতিক দলগুলোকেও বাজেট নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক, এখন পর্যন্ত বাজেটের স্বচ্ছতা, জনঅংশগ্রহণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ আশানুরূপ নয়। আশা করা যায়, সামনে অন্ততপক্ষে এ বিষয়ে কিছু ইতিবাচক চেষ্টা দেখা যাবে। 

 লেখক: সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, সিপিডি

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত মত ব জ ট প রস ত প রক র য় ত মন ক ন সরক র র জনগণ র পর য য় ন পর য

এছাড়াও পড়ুন:

জিল হোসেন মারা গেছেন, আদালতে তাঁর লড়াই শেষ হবে কবে

জিল হোসেনের ৭২ বছরের জীবনের ৪৭ বছরই কেটেছে আইনি লড়াইয়ে। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা পাসের সনদ পেতে, এরপর ক্ষতিপূরণের দাবিতে তাঁর এই দীর্ঘ লড়াই। লড়াই এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যেই মারা গেছেন জিল হোসেন।

জিল হোসেনের মৃত্যুর পর তিন বছর ধরে লড়াইটা করে যাচ্ছেন স্ত্রী ও তাঁর সন্তানেরা। কিন্তু পরিবারটির বিচারের অপেক্ষা শেষ হয়নি।

পরিবার ও মামলার নথিতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, জিল হোসেনের জন্ম ১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি। ১৯৭১-৭২ শিক্ষাবর্ষে তিনি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের (কৃষি) পরীক্ষার্থী ছিলেন। এই পরীক্ষা হয় ১৯৭৩ সালে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ফলাফলে তাঁকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে। ফলাফল পুনর্বিবেচনা চেয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আবেদন করেন জিল হোসেন। কিন্তু সেই আবেদনে কাজ হয়নি।

১৯৭৫ সালে জিল হোসেন আবার পরীক্ষায় অংশ নেন, কিন্তু তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এসবের প্রতিকার চেয়ে ১৯৭৫ সালের ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহের প্রথম মুনসেফ আদালতে তিনি মামলা করেন। মামলায় তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর প্রাপ্ত নম্বরের (১৯৭৩ সালে দেওয়া পরীক্ষায়) সঙ্গে ভগ্নাংশ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নম্বরের সঙ্গে ভগ্নাংশ যোগ না করে তাঁকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে।

সেই আইনি লড়াইয়ের শুরু। নিম্ন আদালত পেরিয়ে বছরের পর বছর উচ্চ আদালতেও ছুটেছেন তিনি। সিরাজগঞ্জ সদরের চিলগাছা গ্রামে পরিবার নিয়ে থাকতেন জিল হোসেন। ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। সংসারে স্ত্রী এবং চার ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। আইনি লড়াই নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মারা যান জিল হোসেন। এর পর থেকে মামলায় পক্ষ হয়ে তাঁর স্ত্রীসহ উত্তরাধিকারীরা লড়াই করে যাচ্ছেন।

বাবা উচ্চ আদালতের রায় দেখে যেতে পারেননি। বাবা নেই, বুকে চাপা কষ্ট হয়। বাবার কাছে শুনেছি, মামলা চালাতে গিয়ে জমিসহ অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে বাবার জীবন ধ্বংস হয়েছে, আমাদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।নূর হোসেন, বাদী জিল হোসেনের ছোট ছেলে

জিল হোসেনের ছোট সন্তান নূর হোসেন গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা উচ্চ আদালতের রায় দেখে যেতে পারেননি। বাবা নেই, বুকে চাপা কষ্ট হয়। বাবার কাছে শুনেছি, মামলা চালাতে গিয়ে জমিসহ অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে বাবার জীবন ধ্বংস হয়েছে, আমাদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

আরও পড়ুনশিক্ষাসনদ নিয়ে ৪৮ বছরের আইনি লড়াই: ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রায় বাস্তবায়নে বাধা নেই০৮ অক্টোবর ২০২৩

নূর হোসেন আরও বলেন, ‘মা এবং ভাইবোনেরা এখন মামলা চালাচ্ছি। মায়ের বয়স ৬৯ বছর। তিনিও নানা রোগে ভুগছেন। তিনিও চূড়ান্ত রায় দেখে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভ টু আপিল এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে। বাবা মারা যাওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো অনুশোচনা নেই, এটা কষ্টের।’

আইনি লড়াই

জিল হোসেন যখন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (কৃষি) দ্বিতীয় পর্বের চতুর্থ বর্ষের পুরোনো পাঠ্যক্রমের চূড়ান্ত পরীক্ষার্থী ছিলেন, তখন তাঁর বয়স ২৩ বছর। ময়মনসিংহের মুনসেফ আদালতে করা মামলায় জয়ী হন তিনি। আদালত ১৯৭৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ভগ্নাংশ নম্বর যোগ না করে তাঁকে অকৃতকার্য করাকেও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

তবে জিল হোসেনের লড়াই তখনো বাকি। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জজ আদালতে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালের ৩১ জানুয়ারি এই আদালতের দেওয়া রায়েও জিল হোসেনের বহিষ্কারাদেশ বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

একই বছর হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্ট ১৯৭৬ সালের ২৪ আগস্ট মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য প্রথম মুনসেফ আদালতে পাঠান। এরপর ১৯৭৮ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রথম মুনসেফ আদালত ভগ্নাংশ নম্বর যোগ করে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুনসেবাদাতা বা গ্রহীতাদের সন্তুষ্টির মূল্যায়ন হয়নি২৮ এপ্রিল ২০২২

এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার জেলা জজ আদালতে আপিল করে, যা নামঞ্জুর হয়। পরে হাইকোর্টে আপিল করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর ওপর ১৯৮৩ সালের ১৬ জানুয়ারি রায় দেওয়া হয়। এ রায়ে বিচারিক আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।

অতঃপর সনদ, ক্ষতিপূরণ মামলা

পরিবার ও মামলাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাইকোর্টের রায়ের পর ১৯৮৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জিল হোসেনের একটি আবেদন গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তাঁকে পাস নম্বর দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর নম্বরপত্রের সনদ দেওয়া হয়। তখন জিল হোসেনের বয়স ৪৭ বছর। তখন তাঁর সরকারি চাকরির বয়সসীমা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।

লিভ টু আপিল বিচারাধীন উল্লেখ করে একের পর এক সময় নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টর স্থগিতাদেশ না থাকায় মামলা চলতে আইনগত বাধা নেই। অথচ মামলাটি চলছে না, যা জিল হোসেনের পরিবারের জন্য ভোগান্তির।চঞ্চল কুমার বিশ্বাস, বাদীপক্ষের আইনজীবী

এরপর ২০০০ সালের ১৮ অক্টোবর ক্ষতিপূরণ দাবি করে অধস্তন আদালতে মামলা করেন জিল হোসেন। মামলায় অভিযোগ করেন, হাইকোর্টের রায় ১৪ বছর ৯ মাস পরে কার্যকর করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কাজে তাঁর জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে সরকারি চাকরির সম্ভাবনাও।

ক্ষতিপূরণের এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৬ আগস্ট রায় দেন ময়মনসিংহের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২ কোটি টাকা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

১৪ বছর পর নিষ্পত্তি

বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৪ জুন হাইকোর্ট শর্ত সাপেক্ষে ময়মনসিংহের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ স্থগিত করেন। শর্ত হিসেবে ২ কোটি টাকার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ২৫ লাখ টাকা ৩ মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয়। এতে ব্যর্থ হলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়ে যাবে বলেও ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবী জানান, জিল হোসেন মারা যাওয়ার পর আপিল শুনানির জন্য উঠলে ১৩ বছর আগে হাইকোর্ট ২ কোটি টাকার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা সামনে আসে। এ অবস্থায় হাইকোর্ট আপিলকারী পক্ষকে ২৫ লাখ টাকা জমা দিয়ে আসতে বলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালে ৪ নভেম্বর ওই অর্থ জমা দেয়।

বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। বিচারাধীন থাকলে নিম্ন আদালতে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তও আছে। আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুত আছি।এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে নিয়োগ দেওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা আপিল খারিজ করে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় সংশোধন সাপেক্ষে বহাল রাখেন হাইকোর্ট। রায়ের দিন থেকে ওই অর্থের বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে তারা (জিল হোসেনের পরিবার) লভ্যাংশ পাবেন বলেও জানানো হয়। অবশ্য এর আগে শর্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জমা করা ২৫ লাখ টাকা ওই অর্থ থেকে বাদ যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভ টু আপিল

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে লিভ টু আপিল করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনটি ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে সেদিন তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন। লিভ টু আপিল ক্রম অনুসারে শুনানি হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় লিভ টু আপিলটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের গত ৩১ আগস্টের কার্যতালিকায় ৫০৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

জিল হোসেনের পরিবারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি পরিচালনার জন্য ২০২৩ সালের ৯ মার্চ আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস নিয়োগ পান। তাঁকে নিয়োগ দেয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। চঞ্চল কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিম্ন আদালতে অর্থ আদায়ে জারি মামলার (২০০৯ সালে করা) কার্যক্রম অগ্রসরের জন্য বাদীর উত্তারাধিকারীকারেরা আবেদন করেন।

আরও পড়ুনসনদ ও ক্ষতিপূরণের জন্য ৪৭ বছরের আইনি লড়াই ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

চঞ্চল কুমার বিশ্বাস বলেন, লিভ টু আপিল বিচারাধীন উল্লেখ করে একের পর এক সময় নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ না থাকায় মামলা চলতে আইনগত বাধা নেই। অথচ মামলাটি চলছে না, যা জিল হোসেনের পরিবারের জন্য ভোগান্তির।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে নিয়োগ দেওয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। বিচারাধীন থাকলে নিম্ন আদালতে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তও আছে। আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুত আছি।’

আরও পড়ুন৩৩ বছর কেটে গেছে, কাজল কথা রেখেছেন০৫ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়াল
  • খেলাপি ঋণে বাংলাদেশ এশিয়ায় কেন শীর্ষে
  • কালচে হয়ে যাচ্ছে মোগল আমলের লালকেল্লা
  • জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচন ২৭ নভেম্বর
  • জিল হোসেন মারা গেছেন, আদালতে তাঁর লড়াই শেষ হবে কবে
  • ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে লুক্সেমবার্গও
  • প্রকৌশল পেশাজীবীদের দাবি পূরণে উপাচার্য-অধ্যক্ষদের সঙ্গে আগামীকাল বৈঠক
  • কীভাবে নেট রান রেট হিসাব করা হয়, সুপার ফোর উঠতে বাংলাদেশের হিসাব কী
  • সোনালী ও রূপালী মুনাফায়, অগ্রণী ও জনতা লোকসানে
  • এক সপ্তাহের মধ্যে জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ ৫ দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের