যেসব কারণে বাজেটের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতায় পিছিয়ে বাংলাদেশ
Published: 30th, May 2025 GMT
বাজেট শুধু সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করে না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক নীতি দলিল। বাজেট নিয়ে আলোচনায় প্রায়ই বরাদ্দের অগ্রাধিকার ও রাজস্ব পদক্ষেপের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয় অনেক সময় উপেক্ষিত থাকে।
বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা মূল্যায়নে ‘ওপেন বাজেট সার্ভে’ একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। এই জরিপে তিনটি মূল বিষয় মূল্যায়ন করা হয়। প্রথমটি হলো– বাজেটসংক্রান্ত তথ্য জনগণের জন্য কতটুকু উন্মুক্ত। দ্বিতীয়ত–বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনঅংশগ্রহণের সুযোগ কতটুকু রয়েছে। পার্লামেন্ট ও জাতীয় নিরীক্ষা কার্যালয়সহ তদারকি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা মূল্যায়ন করা আরেকটি উপাদান।
স্বচ্ছতা সূচকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল মাত্র ১০০-এর মধ্যে ৩৭, যা ২০১২ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫৮। জনগণের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের স্কোর ২০২৩ সালে মাত্র ১১। তদারকিতে ছিল ৩৭। সব স্কোরই বৈশ্বিক গড়ের অনেক নিচে। ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোরে কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে অবনতির দিকে গেছে। যদিও ২০২৩ সালে সরকারের বাজেট প্রস্তাবনা বিস্তৃত ছিল, তবে জাতীয় সংসদে অনুমোদিত বাজেট এবং সিটিজেন বাজেট (যা সরকারের নির্বাহী বাজেট প্রস্তাবনার মৌলিক তথ্যগুলো সাধারণ নাগরিকদের কাছে সহজভাবে তথ্য উপস্থাপন করে) এখনও অনেক সীমিত। প্রাক-বাজেট বিবৃতি, বছর শেষের প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মতো অতিপ্রয়োজনীয় তথ্য উপাদান শুধু অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে সীমাবদ্ধ। এ ছাড়া বছরের মাঝে বাজেট বাস্তবায়নবিষয়ক রিপোর্ট দেরিতে প্রকাশ হয়। এতে করে এসব রিপোর্টের কার্যকারিতা কমে যায়। এ ছাড়া বছরের মধ্যভাগে কোনো পর্যালোচনা হয় না।
বাংলাদেশের বাজেট প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত। বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদনের সময় অল্প কিছু মতামত নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন ও নিরীক্ষা পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ অনুপস্থিত রয়েছে। ফলে ওপেন বাজেট সূচকের এই অংশে বাংলাদেশের স্কোর শূন্য। বাজেট তদারকিতেও বাংলাদেশের অবস্থা দুর্বল। বাজেটের পরিকল্পনা পর্যায়ে জাতীয় সংসদের ভূমিকা খুবই কম এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে তেমন কোনো নজরদারি করে না। এ প্রবণতা বিশেষভাবে প্রমাণ করে যে, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও জবাবদিহির ক্ষেত্রগুলো ধীরে ধীরে অবনতি হয়েছে। গত এক দশকে বাজেট উন্মুক্ততায় যে বিপর্যয় ঘটেছে, তা গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অবনতিরই বহিঃপ্রকাশ।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজেটের স্বচ্ছতা এ জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বাজেট বাস্তবায়ন পর্যায়েও তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। প্রাক-বাজেট বিবৃতি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। বছরের মধ্যভাগে এসে কোনো বাজেট প্রস্তুত করা হয়নি। গত সরকারের বাজেট বাস্তবতাবর্জিত হওয়া সত্ত্বেও তাতে কোনো সংশোধনী আনা হয়নি। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জানার জন্য প্রণীত শ্বেতপত্রে সময়মতো বাজেট সংশোধনের সুপারিশ থাকলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে।
বাজেটসংক্রান্ত তথ্য ও নথিপত্রের সহজলভ্যতা বাড়বে কিনা, তা এখনও অনিশ্চিত। বর্তমানে সংসদ কার্যকর নেই। ফলে সরকারের নির্বাহী বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা বা পর্যালোচনার সুযোগ কম। তা ছাড়া বাজেট ঘোষণার পরপরই ঈদ উপলক্ষে ১০ দিনের সরকারি ছুটি এ প্রক্রিয়াকে আরও বাধাগ্রস্ত করবে।
বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে বেশি স্বচ্ছতা ও উন্মুক্ততা প্রত্যাশিত ছিল। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়োজনে প্রাক-বাজেট আলোচনাগুলো স্বাভাবিকভাবে হলেও অর্থ বিভাগের আলোচনা সীমিত রাখা হয়। সরকারের বাইরে অন্যদের বাজেট সম্পর্কিত আলোচনায় মূল নীতিনির্ধারকরা অনেক ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হতে চাননি। রাজনৈতিক দলগুলোকেও বাজেট নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক, এখন পর্যন্ত বাজেটের স্বচ্ছতা, জনঅংশগ্রহণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ আশানুরূপ নয়। আশা করা যায়, সামনে অন্ততপক্ষে এ বিষয়ে কিছু ইতিবাচক চেষ্টা দেখা যাবে।
লেখক: সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, সিপিডি
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মত মত ব জ ট প রস ত প রক র য় ত মন ক ন সরক র র জনগণ র পর য য় ন পর য
এছাড়াও পড়ুন:
ওভালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত, একাদশে চার পরিবর্তন
সিরিজের নির্ধারক ম্যাচে টানা ১৫ বার টস ভাগ্য মুখ ফেরাল না ভারতের দিকে। ফলে লন্ডনের ওভালে শুরু থেকেই কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েই নামতে হলো শুভমান গিলদের। আকাশে ছিল মেঘ, উইকেট ছিল সবুজ। এমন সহায়ক কন্ডিশনে টস জিতে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ওলি পোপ। যিনি এই ম্যাচে ইনজুরিতে থাকা বেন স্টোকসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
মজার ছলে শুভমান গিল আগেই বলেছিলেন, এই সিরিজে তার সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে টস! আর তা আবারও সত্যি হলো। সিরিজজুড়ে ‘হেড’ ডাকার পরও টস জয় থেকে বঞ্চিত গিল এবারও হেরে গেলেন।
এই ম্যাচে অবশ্য ভারত একাদশে চারটি পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে তিনটি ছিল প্রত্যাশিত। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের কারণে বিশ্রামে আছেন জাসপ্রিত বুমরাহ, চোটে ছিটকে গেছেন ঋষভ পন্ত এবং তরুণ আনশুল কাম্বোজকে জায়গা করে দিতে হয়েছে অভিজ্ঞদের। এদের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, ধ্রুব জুরেল এবং ফিট হয়ে ফেরা আকাশ দীপ। তবে চতুর্থ পরিবর্তনটি বেশ কৌশলগত। অলরাউন্ডার শার্দুল ঠাকুরের বদলে দলে এসেছেন ব্যাটার করুণ নায়ার। উল্লেখ্য, শার্দুল আগের দুটি টেস্টে মাত্র ২৭ ওভার বোলিং করেছেন।
আরো পড়ুন:
সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
শেষ ম্যাচের আগে ভারতের শিবিরে ধাক্কা, বিশ্রামে বুমরাহ
অন্যদিকে, ইংল্যান্ড আগেই তাদের একাদশ ঘোষণা করে রেখেছিল। দলে জায়গা হয়নি স্টোকস, জোফরা আর্চার, ব্রাইডন কার্স ও লিয়াম ডসনের। তাদের জায়গায় খেলছেন জ্যাকব বেথেল, জশ টাঙ, জেমি ওভারটন ও গাস অ্যাটকিনসন।
২০২৩ সালের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ওভালে ২২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ (তার মধ্যে ৪টি টেস্ট) অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যেক ম্যাচেই টসজয়ী অধিনায়ক প্রথমে বোলিং বেছে নিয়েছেন। এবং তার মূল কারণ, এই উইকেট থেকে পেসাররা বেশ সাহায্য পাচ্ছেন। ২০২৩ সালের শুরু থেকে এই মাঠে সিমাররা নিয়েছেন ৬১৭টি উইকেট, বিপরীতে স্পিনাররা পেয়েছেন মাত্র ৭৯টি।
এই টেস্টে শুরুতেই পিছিয়ে থাকলেও ভারতের চোখ থাকবে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার দিকে। আর ইংল্যান্ড চাইবে কন্ডিশনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ভারতকে চাপে ফেলে দিতে। সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ড এই ম্যাচে কোনোরকমে ড্র করতে পারলেই সিরিজ জিতে যাবে। অন্যদিকে এই ম্যাচ জিতলে সিরিজ হার ঠেকাতে পারবে ভারত।
এ রিপোর্ট লেখার সময় ভারত ২৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৭২ রান সংগ্রহ করেছে এবং বৃষ্টির কারণে মধ্যাহ্ন বিরতিতে গিয়েছে। ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১০ রানের মাথায় আউট হন জয়সওয়াল। অ্যাটকিনসনের বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি ব্যক্তিগত ২ রানে। আর ৩৮ রানের মাথায় ক্রিস ওকসের বলে বোল্ড হয়ে যান লোকেশ রাহুল। ৪টি চারে ১৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
ইংল্যান্ড একাদশ:
জ্যাক ক্রাউলি, বেন ডাকেট, ওলি পোপ (অধিনায়ক), জো রুট, হ্যারি ব্রুক, জ্যাকব বেথেল, জেমি স্মিথ (উইকেটকিপার), ক্রিস ওকস, গাস অ্যাটকিনসন, জেমি ওভারটন ও জশ টাঙ।
ভারত একাদশ:
যশস্বী জয়সওয়াল, কেএল রাহুল, সাই সুদর্শন, শুভমান গিল (অধিনায়ক), করুণ নায়ার, রবীন্দ্র জাদেজা, ধ্রুব জুরেল (উইকেটকিপার), ওয়াশিংটন সুন্দর, আকাশ দীপ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ও মোহাম্মদ সিরাজ।
ঢাকা/আমিনুল