বাজেট শুধু সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করে না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক নীতি দলিল।  বাজেট নিয়ে আলোচনায় প্রায়ই বরাদ্দের অগ্রাধিকার ও রাজস্ব পদক্ষেপের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয় অনেক সময় উপেক্ষিত থাকে।
বাংলাদেশের বাজেট ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা মূল্যায়নে ‘ওপেন বাজেট সার্ভে’ একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। এই জরিপে তিনটি মূল বিষয় মূল্যায়ন করা হয়। প্রথমটি হলো– বাজেটসংক্রান্ত তথ্য জনগণের জন্য কতটুকু উন্মুক্ত। দ্বিতীয়ত–বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনঅংশগ্রহণের সুযোগ কতটুকু রয়েছে। পার্লামেন্ট ও জাতীয় নিরীক্ষা কার্যালয়সহ তদারকি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা মূল্যায়ন করা আরেকটি উপাদান।
স্বচ্ছতা সূচকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল মাত্র ১০০-এর মধ্যে ৩৭, যা ২০১২ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫৮। জনগণের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের স্কোর ২০২৩ সালে মাত্র ১১। তদারকিতে ছিল ৩৭। সব স্কোরই বৈশ্বিক গড়ের অনেক নিচে। ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোরে কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে অবনতির দিকে গেছে। যদিও ২০২৩ সালে সরকারের বাজেট প্রস্তাবনা বিস্তৃত ছিল, তবে জাতীয় সংসদে অনুমোদিত বাজেট এবং সিটিজেন বাজেট (যা সরকারের নির্বাহী বাজেট প্রস্তাবনার মৌলিক তথ্যগুলো সাধারণ নাগরিকদের কাছে সহজভাবে তথ্য উপস্থাপন করে) এখনও অনেক সীমিত। প্রাক-বাজেট বিবৃতি, বছর শেষের প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মতো অতিপ্রয়োজনীয় তথ্য উপাদান শুধু অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে সীমাবদ্ধ। এ ছাড়া বছরের মাঝে বাজেট বাস্তবায়নবিষয়ক রিপোর্ট দেরিতে প্রকাশ হয়। এতে করে এসব রিপোর্টের কার্যকারিতা কমে যায়। এ ছাড়া বছরের মধ্যভাগে কোনো পর্যালোচনা হয় না।
বাংলাদেশের বাজেট প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত। বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদনের সময় অল্প কিছু মতামত নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন ও নিরীক্ষা পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ অনুপস্থিত রয়েছে। ফলে ওপেন বাজেট সূচকের এই অংশে বাংলাদেশের স্কোর শূন্য। বাজেট তদারকিতেও বাংলাদেশের অবস্থা দুর্বল। বাজেটের  পরিকল্পনা পর্যায়ে জাতীয় সংসদের ভূমিকা খুবই কম এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে তেমন কোনো নজরদারি করে না। এ প্রবণতা বিশেষভাবে প্রমাণ করে যে, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও জবাবদিহির ক্ষেত্রগুলো ধীরে ধীরে অবনতি হয়েছে। গত এক দশকে বাজেট উন্মুক্ততায় যে বিপর্যয় ঘটেছে, তা গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অবনতিরই বহিঃপ্রকাশ।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজেটের স্বচ্ছতা এ জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বাজেট বাস্তবায়ন পর্যায়েও তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। প্রাক-বাজেট বিবৃতি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। বছরের মধ্যভাগে এসে কোনো বাজেট প্রস্তুত করা হয়নি। গত সরকারের বাজেট বাস্তবতাবর্জিত হওয়া সত্ত্বেও তাতে কোনো সংশোধনী আনা হয়নি। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জানার জন্য প্রণীত শ্বেতপত্রে সময়মতো বাজেট সংশোধনের সুপারিশ থাকলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে।
বাজেটসংক্রান্ত তথ্য ও নথিপত্রের সহজলভ্যতা বাড়বে কিনা, তা এখনও অনিশ্চিত। বর্তমানে সংসদ কার্যকর নেই। ফলে সরকারের নির্বাহী বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা বা পর্যালোচনার সুযোগ কম। তা ছাড়া বাজেট ঘোষণার পরপরই ঈদ উপলক্ষে ১০ দিনের সরকারি ছুটি এ প্রক্রিয়াকে আরও বাধাগ্রস্ত করবে।
বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে বেশি স্বচ্ছতা ও উন্মুক্ততা প্রত্যাশিত ছিল। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়োজনে প্রাক-বাজেট আলোচনাগুলো স্বাভাবিকভাবে হলেও অর্থ বিভাগের আলোচনা সীমিত রাখা হয়। সরকারের বাইরে অন্যদের বাজেট সম্পর্কিত আলোচনায় মূল নীতিনির্ধারকরা অনেক ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হতে চাননি। রাজনৈতিক দলগুলোকেও বাজেট নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক, এখন পর্যন্ত বাজেটের স্বচ্ছতা, জনঅংশগ্রহণ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ আশানুরূপ নয়। আশা করা যায়, সামনে অন্ততপক্ষে এ বিষয়ে কিছু ইতিবাচক চেষ্টা দেখা যাবে। 

 লেখক: সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, সিপিডি

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত মত ব জ ট প রস ত প রক র য় ত মন ক ন সরক র র জনগণ র পর য য় ন পর য

এছাড়াও পড়ুন:

হাথুরুসিংহের চাকরিচ্যুতি নিয়ে কী আছে সেই বোর্ড সভার কার্যবিবরণীতে

আবারও আলোচনায় চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আলোচনায় তাঁকে এনেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি বদল নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক। আজ আবার পেশাজীবীদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে এক মন্তব্য করে হাথুরুসিংহে নিজেও সে আলোচনার অংশ হয়েছেন।

বিসিবির সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে আট বোর্ড পরিচালক ক্রীড়া উপদেষ্টা বরাবর যে অনাস্থাপত্র দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশ দলের কোচের পদ থেকে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করে সভাপতি ফারুক এককভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনফারুক আহমেদকে অপসারণের ঘটনায় যা বললেন হাথুরুসিংহে২ ঘণ্টা আগে

যদিও গত বছরের ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের জরুরি ভার্চ্যুয়াল সভার কার্যবিবরণী সে কথা পুরোপুরি বলে না। প্রথম আলোর হাতে আসা কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, সভার আলোচ্যসূচিতে থাকা সাতটি বিষয়ের মধ্যে সেদিন প্রথম আলোচনা হয় জাতীয় দলের প্রধান কোচকে চাকরিচ্যুতি করা নিয়ে।

ইংরেজিতে লেখা কার্যবিবরণীর এ অংশে যা আছে তা বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘মাননীয় বোর্ড সভাপতি ভারতে অনুষ্ঠিত ২০২৩ বিশ্বকাপের (২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর ২০২৩) খারাপ পারফরম্যান্স নিয়ে বোর্ডের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি উত্থাপন করেন।’

বিসিবির সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবিক করিডোর নিয়ে ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি হতে পারে
  • দুর্নীতির জব্দ করা অর্থ-সম্পদ বাজেটে ব্যয় করলে চমক হবে
  • হাথুরুসিংহের চাকরিচ্যুতি নিয়ে কী আছে সেই বোর্ড সভার কার্যবিবরণীতে
  • কোনো শাস্তি নয়, ক্রম অবনতির কারণেই ছাঁটাই ফারুক: আসিফ মাহমুদ
  • বাজেটে ‘অত্যাচারের কর’ চালু করুন: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
  • পরিচালক তপু খানের বাবার মৃত্যু
  • নারীর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে
  • পঞ্চগড় প্রেস ক্লাবে ১৪৪ ধারা জারি
  • এভারেস্ট দিবসঃ বাংলাদেশের প্রশ্ন -এভারেস্টে উঠলে কী হয়?