গুরুতর ক্যানসারের চিকিৎসায় নতুন ওষুধের পরীক্ষা, বেঁচে থাকার সময় বাড়ছে দ্বিগুণ
Published: 31st, May 2025 GMT
মাথা ও গলার গুরুতর পর্যায়ের ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষেরা এক ইমিউনোথেরাপিতে শরীরে নতুন করে ক্যানসার ফিরে আসা বিলম্বিত করার মাধ্যমে আরও দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারেন। এ পদ্ধতির চিকিৎসায় টিউমার অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে বিশেষ একটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
ইমিউনোথেরাপি চিকিৎসায় নতুন এ ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষায় এমন সাফল্য দেখা গেছে।
এ–সংক্রান্ত গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত ২০ বছরে এমন জটিল ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসায় এটিই প্রথম বড় ধরনের অগ্রগতি বা সাফল্যের ইঙ্গিত।
যুক্তরাজ্যের ডার্বিশায়ারের বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী লরা মার্সটন বলেন, ছয় বছর আগে তাঁর গুরুতর পর্যায়ের জিবের ক্যানসার ধরা পড়ার পর তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম ছিল। এখনো যে বেঁচে আছেন, সেটা ভেবে তিনি ‘বিস্মিত’।
মার্সটন তাঁর অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে নতুন ধরনের ইমিউনোথেরাপি নিয়েছিলেন। গবেষকেরা বলছেন, এ ইমিউনোথেরাপি শরীরকে ফিরে আসা ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখায়।
মাথা ও গলার ক্যানসারের চিকিৎসা খুবই কঠিন। দুই দশকে এ ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসাপদ্ধতিতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। গুরুতর পর্যায়ে মাথা ও গলার ক্যানসার শনাক্ত হওয়া রোগীদের প্রায় অর্ধেকের বেশি পাঁচ বছরের মধ্যে মারা যান।
লরা মার্সটন নামের ওই নারী বলেন, ২০১৯ সালে তাঁর জিবে ক্যানসার ধরা পড়ে। তখন বলা হয়েছিল, তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ৩০ শতাংশ। এরপর বড় অস্ত্রোপচার করা হয়। জিব ও গলার লিম্ফ নোডগুলো অপসারণ করতে হয়। এরপর তাঁকে আবার কথা বলা ও খাওয়া শিখতে হয়েছে।
বিবিসি নিউজকে মার্সটন বলেন, ‘আমার তখন ৩৯ বছর বয়স এবং খুব ভেঙে পড়েছিলাম।’
নতুন এ ইমিউনোথেরাপি শরীরের অন্য অংশে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি উল্লেখজনকভাবে কমিয়ে দেয়। আর এটাকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছেন তিনি। কারণ, ক্যানসার একবার শরীরে ছড়িয়ে পড়লে তার চিকিৎসা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়।কেভিন হারিংটন, গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী অধ্যাপকক্যানসারের নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে এক আন্তর্জাতিক গবেষণার অংশ হিসেবে ৩৫০ জন রোগীর ওপর ওষুধ পেম্ব্রোলিজুমাবের পরীক্ষা চালানো হয়। লরা ছিলেন তাঁদেরই একজন। গবেষণায় নমুনা হিসেবে নেওয়া রোগীদের শরীরে অস্ত্রোপচারের আগে–পরে এ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যে ওষুধটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক কেভিন হারিংটন। তিনি প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘(টিউমার অপসারণের আগে ওষুধটি প্রয়োগের মাধ্যমে) আমরা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সময় দিই, যেন সে টিউমারটি ভালোভাবে চিনতে পারে ও ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য শক্তি তৈরি করতে পারে। টিউমার অপসারণের পরও আমরা এক বছর পর্যন্ত এ ওষুধ চালিয়ে যাই, যেন প্রতিরোধক্ষমতা আরও বাড়ে।’
একই ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত সমানসংখ্যক রোগীর অন্য একটি দলকে সাধারণ বা প্রচলিত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা মাথা ও গলার ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন, শরীরের অন্য কোথাও তা ছড়ায়নি।
নতুন ওষুধটির কার্যকারিতা পরীক্ষায় ভালো ফল পাওয়া গেছে। এতে রোগীরা ইতিপূর্বে চিকিৎসার পর গড়ে যে সময় পর্যন্ত ক্যানসারমুক্ত থাকতে পারতেন, তার তুলনায় দ্বিগুণ সময় পর্যন্ত ক্যানসার ঠেকাতে পারছেন।
তা ছাড়া যাঁদের পেম্ব্রোলিজুমাব ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে তিন বছর পর দেখা গেছে, শরীরে ক্যানসার ফেরত আসার ঝুঁকি ১০ শতাংশ কমেছে।
লরা এখন পূর্ণকালীন কাজ করছেন। বলেছেন, তিনি ভালো আছেন ও দারুণভাবে চলছেন।
লরা বলেন, ‘আমি এখনো যে আছি ও আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারছি, তা আমার জন্য বিস্ময়কর এক ঘটনা। কেউ ভাবেনি, আমি এতটা পথ আসতে পারব। আমার বাঁচার সম্ভাবনা তখন খুবই কম ছিল।’
লরার জিবের অংশ কেটে ফেলার পর মুখে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ করতে তাঁর বাঁ হাত থেকে পেশি নিয়ে সেখানে বসানো হয়। এটা ছিল একটি কঠিন ও কষ্টকর পথচলা।
লরা বলেন, ‘এ অসাধারণ ইমিউনোথেরাপি আমার জীবনটা আবার ফিরিয়ে দিয়েছে।’
গবেষকেরা বলছেন, এ সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো, অস্ত্রোপচারের আগে ওষুধ দেওয়া। সে ওষুধ শরীরকে ক্যানসার চিনতে শেখায় ও ভবিষ্যতে তা ফিরে এলে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনক্যানসার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫অধ্যাপক হারিংটন বলেন, এ ইমিউনোথেরাপি শরীরের অন্য অংশে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি উল্লেখজনকভাবে কমিয়ে দেয়। আর এটাকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছেন তিনি। কারণ, ক্যানসার একবার শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে তার চিকিৎসা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়।
হারিংটন বলেন, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই চিকিৎসাপদ্ধতি খুব ভালো কাজ করেছে। তবে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের আওতায় থাকা সব রোগীর উপকার হচ্ছে দেখে তিনি খুব খুশি।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলগুলো আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
নতুন ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার কাজে ২৪টি দেশের ১৯২টি হাসপাতাল অংশ নিয়েছিল। এ কাজ পরিচালনা করেছে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুল। আর অর্থায়ন করেছে ওষুধ কোম্পানি এমএসডি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হয় ছ ল র অন য গ র তর পর ক ষ ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে
৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।
পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’
আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫