বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রতি
Published: 1st, June 2025 GMT
বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চীনা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার (১ জুন) চীনা বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আয়োজিত দিনব্যাপী চীন-বাংলাদেশ ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিনিয়োগ ভবনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং চীন সরকারের পক্ষে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও চীনা দূতাবাস যৌথভাবে এ আয়োজন করেছে। সম্মেলনে চীনের ১০০ কোম্পানির প্রায় ২৫০ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেছেন।
এ সময় চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেওয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ধন্যবাদ জানান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, “আমরা প্রথমবারের মতো এতো বিশালসংখ্যক বিদেশী বিনিয়োগকারী নিয়ে সম্মেলন করছি। এটি মাত্র শুরু, আগামীতে আমরা একসাথে আরো পথ হাঁটবো।”
প্রধান উপদেষ্টা চীনা বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, “বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে আপনারা এখানে বিনিয়োগ করুন। এখানে তৈরি পোশাক, জ্বালানি, কৃষি, পাট, তথ্য প্রযুক্তি সম্ভাবনাময় শিল্প।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের মোট জনশক্তির অর্ধেকের বয়স ৩০ বছরের নিচে। এই তরুণরা কাজে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে।” তিনি এই তরুণদের কাজ লাগানোর জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। উভয় দেশের সম্পর্ক আগামী দিনে আরো প্রসারিত হবে।”
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও বাজার বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দিতে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রায় ২৫০ জন চীনা বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়িক প্রতিনিধি অংশ নেন। যারা প্রায় ১০০টি উদ্যোগের প্রতিনিধিত্ব করেন। যার মধ্যে ছয় থেকে সাতটি ফরচুন ৫০০ কোম্পানির ঊর্ধ্বতন নির্বাহীও ছিলেন।
সম্মেলন চলাকালীন চীনা ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা দিনব্যাপী পাঁচটি পৃথক ম্যাচমেকিং সেশনে অংশগ্রহণ করবেন, যার লক্ষ্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ।
সেশনগুলোতে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স এবং অন্যান্য খাত নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ঢাকা/হাসান/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায়, না পেলে আঘাত
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চলন্ত যানবাহন থেকে জোর করে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী চালকরা জানিয়েছেন, মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের থামিয়ে টাকা আদায় করে একটি চক্র। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পৌরসভার কাছ থেকে যানবাহনের পাঁচটি স্ট্যান্ড ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। তাদের নাম ভাঙিয়ে যানবাহন থামিয়ে চাঁদা নিচ্ছে কিছু লোক।
গতকাল সোমবার বিকেলে যাত্রী নিয়ে ভূলতা-বিশনন্দী আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে আড়াইহাজারের পায়রা চত্বরে যান অটোরিকশাচালক মোগল হোসেন। এ সময় গতিরোধ করে চাঁদা দাবি করে ইমন মিয়া নামে এক তরুণ। কীসের চাঁদা জানতে চাইতেই ক্ষিপ্ত ইমন রড দিয়ে অটোরিকশায় আঘাত করেন। আতঙ্কে কান্না শুরু করে ভেতরে থাকা এক শিশু। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে রড হাতে তাদের দিকে তেড়ে যান ইমন মিয়া। শেষ পর্যন্ত মোগল হোসেনের কাছ থেকে ২০ টাকা চাঁদা আদায় করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী আলতাফ হোসেনের ভাষ্য, গোলচক্কর হিসেবে পরিচিত এই পায়রা চত্বরে এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। পৌরসভার নাম ভাঙিয়ে এই চত্বরের চারপাশ থেকে ৮-১০ জন এভাবে ট্রাক, পিকআপ, সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করেন। টাকা না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয় চালকদের। কখনও মারধরও করা হয়।
আড়াইহাজার পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোজাহিদুল ইসলাম তুষারের ভাষ্য, গোলচক্করে মদনগঞ্জ রুট, ভূলতা রুট ও মাধবদী রুট, থানার মোড়, উপজেলা শহীদ মিনার সংলগ্ন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সংলগ্ন মোট পাঁচটি সিএনজি স্ট্যান্ড ইজারা দেওয়া হয়েছে। শুধু ওই স্ট্যান্ড ব্যবহারকারী যানবাহন ও মালপত্র ওঠানামা করলেই নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল নেওয়ার নিয়ম। আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহনের গতিরোধ করে কোনো টাকা তোলা যাবে না।
তাঁর এই বক্তব্যের সত্যতা মেলে না বাঞ্ছারামপুরগামী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মোক্তার হোসেনের কথায়। তিনি বলেন, গোলচক্কর ও আশপাশের চারটি জায়গায় জোর করে ২০-৩০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। এখানে লাঠি নিয়ে কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে থাকে। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলেই লাঠি দিয়ে আঘাত করে। আড়াইহাজার পুলিশ স্টেশনের পাশেও এভাবে চাঁদাবাজি চলে। বাংলাদেশের কোথাও এমন অরাজকতা দেখেননি তিনি।
এই পাঁচটি স্পটের আশপাশ থেকে দিনে ৫০-৬০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয় বলে কয়েকজন অটোরিকশাচালকের ধারণা। অটোরিকশাচালক মহসিন মিয়া, বাবুল মিয়া, মোসলেমউদ্দিন; ট্রাকচালক মিজানুর রহমান, ইলিয়াস হোসেন; নসিমন চালক আব্দুর রউফ ও জামালউদ্দিনের ভাষ্য, পায়রা চত্বর, কলেজ রোড, ভূলতা-বিশনন্দী সড়ক ও নোয়াপাড়া, দিঘিরপার সিএনজি অটো স্টেশন, নরসিংদী-মদনগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক– সবগুলোই সড়ক ও জনপথ বিভাগের। পুলিশ স্টেশন মোড়, থানার মসজিদ রোড এলজিইডির। এসব সড়কের কোথাও পৌরসভার পার্কিংয়ের জায়গা বা টার্মিনালের জায়গা নেই। অথচ পাঁচটি স্পটকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারের লোকেরা চলন্ত অটোরিকশা, সিএনজি ও ইজিবাইক থেকে ২০ টাকা, পিকআপ ভ্যান থেকে ৫০ টাকা, ট্রাক থেকে ৫০-৭০ টাকার মতো চাঁদা আদায় করছে প্রকাশ্যে।
ভূলতা রুটের স্ট্যান্ডটির ইজারাদার আড়াইহাজার পৌর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আল আমিন। তাঁর নামে দীন ইসলাম, আরমান ও সাজন আশপাশ থেকে চাঁদা আদায় করেন। সোমবার রাতে আল আমিনের নম্বরে কল দেওয়া হলেও ধরেননি।
সোমবার বিকেলে গোলচক্করে ঢাকা থেকে বিশনন্দীমুখী ট্রাক থামিয়ে ৫০ টাকা নেন ইমন মিয়া। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘চাঁদা তোলার রাইট আছে বলেই নিচ্ছি। বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না।’ বলে হুমকিও দেন। এ সময় গোলচক্করে ভূলতা রুটে চারজন ও মদনগঞ্জ রুটে চারজনকে টোল আদায়ের রিসিট ও লাঠি হাতে এবং মাধবদী রুটে দু’জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
এলাকাবাসীর ভাষ্য ইমন মিয়া মাধবদী রুটের স্ট্যান্ডের ইজারাদার ও আড়াইহাজার পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হজরত আলীর লোক। এ ছাড়া মনির হোসেনসহ আরও দু-তিনজন তাঁর হয়ে চাঁদা আদায় করেন।
এ বিষয়ে ফোনে হজরত আলী বলেন, স্ট্যান্ডটি গত ১ বৈশাখ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। ইমনকে চেনেন না। মনির তাঁর লোক। তাঁর চারজন লোক স্ট্যান্ড থেকেই টোল আদায় করে। তাঁর দাবি, ট্রাক আটকানোর নিয়ম নেই। তারা আশপাশেই থাকেন কেউ যদি সমস্যায় পড়েন, তাহলে সমাধান করেন। অনেকে টাকা আদায় করে নিজেরা নেন। হয়রানির অভিযোগ পেলে শাস্তি দেন।
পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, পৌরসভার নিজস্ব পার্কিং টার্মিনাল ছাড়া সড়ক-মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহন থেকে কোনো টোল আদায়ের বিধান নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন।
নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, তাদের সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন থেকে টোল, পৌরকর বা যে কোনো নামেই টাকা নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ছাত্রলীগ নেতার বিচার চেয়ে অবরোধ
গাজীপুরের শ্রীপুরে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে সোমবার সকালে মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। উপজেলার জৈনাবাজারে তারা প্রায় দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। তারা গাজীপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিম আহমেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে তাঁর বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের আবুল হোসেন বলেন, রোববার মধ্যরাতের পর ফাহিম আহমেদ ২০-২৫ জন সহযোগী নিয়ে জৈনাবাজারের পশ্চিমে প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের স্ট্যান্ডে এসে দুটি বাস ভাঙচুর করেন। পরে তারা শ্রমিকদের মারধর করেন। এ সময় ফাহিম এ পরিবহনের প্রতিটি গাড়ি থেকে দিনে ১ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। না দিলে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার হুমকিও দেন।
তাঁর ভাষ্য, প্রতিবাদ করায় হামলাকারীরা একটি বাসচালকের সহকারী আরিফুল ইসলামকে ধরে নিয়ে যান। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকাল ৭টার দিকে শ্রমিকরা জৈনাবাজার এলাকায় প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের কয়েকটি বাস আড়াআড়ি রেখে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
ফাহিম আহমেদের ভাষ্য, ‘আমি কাউকে মারধর বা চাঁদা দাবি করিনি। রোববার রাতে আমার ভাতিজাকে মারধর করেন পরিবহন শ্রমিকরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে কারণ জানতে চেয়েছিলাম। পরদিন বিষয়টি মীমাংসার কথা ছিল। তারা উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে আন্দোলন করছেন।’
শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক সমকালকে বলেন, হেলপার আরিফুল ইসলামকে ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। শ্রমিকরা এই গুজব ছড়িয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করেছেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের আশ্বাসে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান।
চাঁদা না পেয়ে মারধর
এদিকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় চাঁদা না পেয়ে নির্মাণশ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার রাতে ফুকুরহাটি ইউনিয়নের কান্দাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে কান্দাপাড়া খালের ওপর সেতু নির্মাণকাজের সাব-ঠিকাদার মো. বাবুল হোসেন রাতেই লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ওই কাজের ঠিকাদার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, একই এলাকার সুকুমার রাজবংশী প্রায়ই চাঁদা চেয়ে শ্রমিকদের হুমকি-ধমকি দিতেন। কিছুদিন আগে শ্রমিকদের মারধর করেন। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসাও হয়। রোববার রাতে সুকুমার এসে ১ লাখ টাকা চাঁদা চান। না পেয়ে শ্রমিকদের মারধরের পর অফিসঘর ভাঙচুর করেন।
লিখিত অভিযোগে বাদী মো. বাবুল হোসেন বলেন, সুকুমার রাজবংশী নেশাখোর। সে মাঝেমধ্যেই শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাত। চাঁদা না দিলে মারধর করত। সেতু নির্মাণের কাজ শেষ দিকে। রোববার সে ১ লাখ টাকা চাঁদা চায়। না দেওয়ায় শ্রমিকদের পিটিয়েছে।
সুকুমার রাজবংশীর ঘটনার পর থেকেই পলাতক। যে কারণে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সাটুরিয়া থানার ওসি মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, রাতেই লিখিত অভিযোগ পেয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশ পাঠানো হয়। সে পালিয়ে গেছে। দ্রুতই সুকুমারকে গ্রেপ্তারের আশা করছেন।