অন্যান্য বছরের মতো এবার গতানুগতিক বাজেট হবে না—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ ও স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ—এই দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বাজেটে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকা প্রয়োজন। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা (এসএমই) টেকসই প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।

উন্নত দেশগুলোতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬০-৭০ শতাংশ আসে এসএমই খাত থেকে। সেখানে বাংলাদেশে এই হার মাত্র ২৫-২৮ শতাংশ। কারণ, ছোট উদ্যোক্তারা ঠিকভাবে সহায়তা পাচ্ছেন না। এ খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এসএমইদের সহায়তার জন্য সরকারের বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে। কিন্তু সংজ্ঞাগত জটিলতার কারণে অতিক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই সরকারি নীতিসহায়তা বা আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন না। ফলে সিএমএসএমই খাতের সংজ্ঞাগুলো সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোতে সরকারি কেনাকাটায় এসএমইদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে পণ্য কেনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে আমাদের দরপত্র প্রক্রিয়ায় যে কেউ অংশ নিতে পারে। কিন্তু এসএমইদের টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকারি কেনাকাটায় এসএমইদের অন্তত ২৫ শতাংশ হিস্যা রাখা প্রয়োজন। বাজেটে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আশা করছি।

এসএমই খাতে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যে পণ্য উৎপাদন করছে, সে জন্য কর-ভ্যাট দিচ্ছে; আবার তারা পণ্যের জন্য যেসব কাঁচামাল কিনছে, সেখানেও শুল্ক-কর দিতে হয়। স্থানীয় শিল্পের প্রবৃদ্ধির জন্য এ ধরনের দ্বৈতকর পরিহার করতে হবে।

দেশের এসএমইদের বেশির ভাগই কম দামের সাধারণ বা মৌলিক পণ্য তৈরি করছে, সেখানে মূল্য সংযোজন কম। এসব পণ্যে মূল্য সংযোজনের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নের (আরঅ্যান্ডডি) ক্ষেত্র বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু আরঅ্যান্ডডির জন্য আমাদের দেশে বিনিয়োগ কম হয়; সরকারি সহায়তাও অপ্রতুল। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিলে তাদের থোক বরাদ্দ, কর ছাড়, প্রণোদনা দেওয়া বা অন্য কোনো উপায়ে সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। কিছু ক্ষেত্রে থোক বরাদ্দের ব্যবস্থা রয়েছে; কিন্তু সেগুলো পাওয়ার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল।

এসএমইদের নিয়ে ২৬-২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কাজ করছে। কিন্তু এদের মধ্যে সমন্বয়ের অনেক অভাব। আমার মতে, এসএমইদের নিয়ে জেলাভিত্তিক একটি ডেটাবেজ করা প্রয়োজন। সে অনুসারে সরকারের নীতিসহায়তাগুলো নিয়ে একটা সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে।

আরেকটা প্রস্তাব থাকবে বন্ডেড ওয়্যারহাউসের বিষয়ে। যদিও এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খুব নেতিবাচক মনোভাব দেখায়। কিন্তু এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা বন্ডের সুযোগ না পেলে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগীসক্ষম হতে পারবে না।

রাশেদুল করীম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এসএমই খ ত র জন য আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, এসএমই কোম্পানি তালিকাভুক্তকরণ, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি, নতুন আর্থিক পণ্য উদ্ভাবন এবং স্টার্টআপ ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে অর্থায়ন বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) যৌথ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) গুলশানে ডিসিসিআই কার্যালয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ এবং ডিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদ ও পরিচালনা পর্ষদের উপস্থিতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন:

বিআইএফএফএলের সঙ্গে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ঋণ চুক্তি

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালু করবে গোল্ডেন হার্ভেস্ট

ডিএসই থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সভায় ডিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদ ডিএসই’র প্রতিনিধিবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ব্যবসায় লাভ ক্ষতি রয়েছে। যে সকল কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করেছে তাদের সাথে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের মতো দেশগুলোর অথবা আমাদের থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকা দেশগুলোর সাথে তুলনা করে আগামীর কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন টু জিডিপি রেশিও এখনও ২০% নিচে। আমাদের মতো অর্থনীতির অনেক দেশে এটি ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশের অধিক। পুঁজিবাজারে এসএমই-এর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য কিছু দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দ্বৈত কর ব্যবস্থার প্রত্যাহার ও এর প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং পণ্যের বৈচিত্রকরণ করা। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এসএমই কোম্পানিগুলোর ব্যাপক অবদান রয়েছে। এসএমই কোম্পানিগুলোর ফাইন্যান্সের উপর বেশি করে গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে আরজেএসসি-তে দুই লাখের উপর কোম্পানি রয়েছে এর মধ্যে মাত্র ৩৬০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও সরকারি কোম্পানি ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এসময় ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত হতে পারেনি। কিন্তু আশার বিষয় হলো এই সরকার প্রথমবারের মতো পুঁজিবাজারের প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামানকে এই বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই বাজেটে পুঁজিবাজারবান্ধব কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- টার্নওভারের উপর এআইটি কমানো, মার্চেন্ট ব্যাংকের ট্যাক্স কমানো ও তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর্পোরেট ট্যাক্স এর ব্যবধান বৃদ্ধি করা। বিএসইসি কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো হলো- সিসি একাউন্টের ইন্টারেস্ট বিষয়ে সমাধান ও বিও একাউন্টের নবায়ন ফি কমানো। বিএসইসি মার্কেটে শৃঙ্খলা আনার জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে। একটি দক্ষ, স্বচ্ছ এবং ন্যায় ভিওিক পুঁজিবাজারের বিকাশ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখন একটি সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ডিএসই পুঁজিবাজারের কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে, এই উন্নয়নের রূপান্তরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। বিগত দিনে মার্কেটে রেগুলেটর অনেক সময় অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ করেছে। এখন পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। বিনিয়োগকারীগণ বাজারে ফিরে আসছে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীগন সক্রিয় হচ্ছে। বর্তমানে ইক্যুইটি মার্কেটের সাথে বন্ড মার্কেটেকে কিভাবে উন্নয়ন করা যায় এই বিষয়ে ডিসিসিআই-এর সহযোগিতা প্রয়োজন। ডিসিসিআই ক্যাপিটাল মার্কেটের একটি বড় স্টেকহোল্ডার।

তিনি বলেন, আইপিও প্রসেস এর ডিজিটালাইজেশন এর প্রক্রিয়া চলমান। এছাড়াও ভালো কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে নিয়ে আসার জন্য গ্রিণ চ্যানেল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএসইসি এই বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করছে। ডিএসই ও ডিসিসিআই উভয় প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী ও টেকসই করার লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলমান রাখতে পারে। এরই লক্ষ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে এসএমই উদ্যোক্তাদের এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্তির প্রসেস এবং অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি)’র সুবিধা ও তালিকাভুক্তির প্রসেস নিয়ে চেম্বার সদস্যদের সাথে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

এছাড়াও আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে এটি সহজ করা সম্ভব। এছাড়াও এসএমই একটি বিশাল খাত। বেসরকারি খাতের প্রায় ৭৫% এসএমই। তাদের এক্সপোজার আছে, সংযোগ আছে, উন্নয়নের জায়গা আছে। তাই সরকার এ ব্যাপারে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য কী ব্যবস্থা নিতে পারে তা বিবেচনায় আনতে পারে। ২০০৯ সালে, একটি সমীক্ষায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল যে, সরকারের ৭.৫ মিলিয়ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। আমরা মনে করি যে, এই অর্থনৈতিক ইউনিট থেকে অধিক পরিমানে বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, রাজিব এইচ চৌধুরী, ভাই প্রেসিডেন্ট মো. সেলিম সোলাইমান, সেক্রেটারি জেনারেল (ভারপ্রাপ্ত) এ. কে. এম আসুদুজ্জামান পাটুয়ারি, ডিএসইর পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (অব.), সৈয়দ হাম্মাদুল করীম, মো. শাকিল রিজভী, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

ঢাকা/এনটি/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা