অর্থনীতির নানা রূঢ় বাস্তবতা সামনে নিয়ে আজ সোমবার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ সোমবার বেলা তিনটায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের আগে ধারণকৃত বাজেট বক্তব্য বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রচারিত হবে।

এটি হবে দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর প্রয়োজনীয় সংশোধন করে জুন মাসের শেষ দিকে জারি হবে অর্থ বিল। বরাবরের মতো এবারও তা কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট উপলক্ষে গত ২৫ মে এক সাক্ষাৎকার দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির সুফল যেন সবাই পান, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বাজেট করতে যাচ্ছি। এ বাজেট হবে জনগণের জীবন-জীবিকা উন্নত করার বাজেট। বাজেট হবে বাস্তবসম্মত, কল্যাণমুখী ও সমতাভিত্তিক।’

এত দিন এক বছর থেকে অন্য বছর বাজেটের আকার বাড়ানো হয়ে আসছিল ১০ শতাংশের বেশি, গতবার বাড়ানো হয় ৫ শতাংশের কম। এবার তা কমানো হচ্ছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার। আর সালেহউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা করছেন ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট।

বাজেট পরিসংখ্যান

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে। বাজেটের মোট আকার কমানোর পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও কমছে এবার। চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এডিপি ঠিক করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। এ অঙ্ক চলতি অর্থবছরের চেয়ে কম। তবে আগামী অর্থবছরে কিছু কর্মসূচিকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় রাখা হবে না। সরকারকে সুদ ব্যয় বাবদ এক লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হবে আগামী অর্থবছরেও।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুদ ব্যয় বাবদ লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি থাকছে জিডিপির ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ থাকছে ৯৭ হাজার কোটি টাকার মতো।

আগামী অর্থবছরে রাজস্ব বাজেটের আকার কিছুটা বাড়ছে। লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে। বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর ভর্তুকির পরিমাণও বাড়ছে। আইএমএফের চাপ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ ও সার কেনায় ভর্তুকি একটু বেড়ে হতে পারে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

যেসব নীতি পরিবর্তন আসছে

আগামী অর্থবছরে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৫ শতাংশ এবং ১০ থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতের চলমান আটটি কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ বাড়ছে। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতার পরিমাণ ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাঁদের সন্তানদের জন্য মাসিক উপবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে নতুন করে।

বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংককে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়ার উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বাজেটে। আর জুলাই শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য এককালীন অর্থের পাশাপাশি মাসিক ভাতা দেওয়ার চিন্তা রয়েছে সরকারের।

এ ছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আরও বড় করছে অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমানে এ কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ পরিবারের কাছে কম দামে চাল বিক্রি করা হয়। আগামী অর্থবছরে বিক্রি করা হবে ৫৫ লাখ পরিবারের কাছে। শুধু তা-ই নয়, বর্তমানে চাল বিক্রি করা হয় বছরে পাঁচ মাস। এটা বাড়িয়ে ছয় মাস করা হচ্ছে।

বাজেটে করপোরেট কর বাড়তে পারে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে করপোরেট কর সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হতে পারে।

বর্তমানে বছরে তিন কোটি টাকার বেশি টার্নওভার (বছরে লেনদেন) হয় এমন প্রতিষ্ঠানকে লাভ-লোকসাননির্বিশেষে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কর দিতে হয়। এটি বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে।

জমি কেনাবেচার ওপর কর এলাকাভেদে ৬, ৪ ও ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে, যা এখন ৮, ৬ ও ৪ শতাংশ। ফ্ল্যাট ও জমি কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখা হলেও বর্তমানে যে করহার আছে, তা এলাকাভেদে কয়েক গুণ বাড়ানো হতে পারে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো এবং শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বাজেটে একটা অর্থনৈতিক রোডম্যাপ দিতে পারতেন অর্থ উপদেষ্টা, কিন্তু দিলেন না। উন্নয়নের যে বিকৃত বয়ান আগের সরকার দিয়ে যাচ্ছিল, তার পরিবর্তন করতে যথাযথ কোনো পদক্ষেপও নেননি তিনি। ফলে এ বাজেট একটা গতানুগতিক বাজেটই হচ্ছে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, দুঃখজনকভাবে এবারের বাজেটও গতানুগতিকই হতে যাচ্ছে এবং এতে কোনো চমক থাকছে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহম দ র জন য লক ষ য সরক র প রথম দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন