চবি চারুকলা ফিরল ক্যাম্পাসে, কী হবে শূন্য জায়গাটির
Published: 2nd, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটটি শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ফিরে গেল। শহরের কেন্দ্রস্থলে যে মনোরম স্থানটিতে এর অবস্থান ছিল, তার একটি ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রধান দেশের অগ্রগণ্য শিল্পী রশিদ চৌধুরীর উদ্যোগে ও চট্টগ্রামের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজ এ স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়।
সদ্য স্বাধীন দেশ নিজস্ব নানান সংকট ও সমস্যায় তখন জর্জরিত। সে পরিস্থিতিতে চারুকলা শিক্ষার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চালু রাখা ছিল একটি নিত্যদিনের সংগ্রাম। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য ব্যয়ের জন্য ন্যূনতম অর্থ সংগ্রহ করতেও বেগ পেতে হতো। তার ওপর কলেজের জায়গাটার ওপর ছিল বিত্তশালী ও ক্ষমতাবান বিভিন্ন মহলের লোলুপ দৃষ্টি। কলেজটিকে সরকারি করেও সমস্যা মিটল না। নিয়োগবিধির অনতিক্রম্য বাধায় শিক্ষক নিয়োগও সম্ভব হলো না।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে শিক্ষক কম না থাকলেও অবকাঠামোর অবস্থা ছিল হতাশাজনক। ছোট ছোট অন্ধকার শ্রেণিকক্ষ আর অপ্রতুল সেমিনার-শিক্ষককক্ষ-অফিসকক্ষ নিয়েই চলছিল বিভাগটি। এর বিস্তার বা উপযোগী কাঠামো নির্মাণ সম্ভব ছিল না, এটি কর্তৃপক্ষের ভাষ্যেও বোঝা যাচ্ছিল।
সহজ সমাধান ছিল বিভাগের শিক্ষকসংখ্যা আর কলেজের অবকাঠামোকে মিলিত করে একটি একক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এই নান্দনিক পরিসরে গড়ে তোলা সম্ভব ছিল চমৎকার স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি শিল্পশিক্ষালয়। আর তা হতে পারত শহরের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র।
এমনকি স্থানটির সঙ্গে আশপাশের কিছু জমি যুক্ত করে একটি পরিপূর্ণ সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয় বা ‘ইউনিভার্সিটি অব কালচার’ প্রতিষ্ঠার সুদূরবর্তী স্বপ্নও কারও কারও মাথায় দানা বাঁধছিল। চারুকলার, সে অর্থে সংগীত, নাট্যকলা বা চলচ্চিত্রের, শিক্ষা ও অনুশীলন কেবল শ্রেণিকক্ষের পাঠের সীমার মধ্যে আবদ্ধ থাকলে চলে না। সার্বক্ষণিক বিনিময় ও কর্মকাণ্ডের দ্বারা একটি সার্বিক সৃজনশীল ও প্রাণচঞ্চল আবহ নির্মাণ করতে না পারলে তা সম্ভব নয়। এ জন্য পাশ্চাত্যে, এমনকি ভারতেও, সৃজনশীল বিষয়সমূহের জন্য স্বতন্ত্র স্থান ও ভবন বরাদ্দ রয়েছে। বলা বাহুল্য, সুযোগ সৃষ্টি করেও সেটি আমরা সেভাবে করতে পারিনি। এর দায় আমাদের সবার। শিক্ষক ও ছাত্র সবার মিলিত উদ্দীপনাই একে বাস্তবায়িত করতে পারত।
চট্টগ্রাম থেকেই সত্তরের দশকে স্বাধীনতা-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের নব্য শিল্পধারার জাগরণ সূচিত হয়েছিল, চট্টগ্রাম আবারও সেই পুরোনো গৌরবের স্থানটি ফিরে পাক, সেটি নিশ্চয় আমাদের সবারই অভিপ্রায়। তবে শহরের বাদশাহ মিয়া সড়কের এই স্থান বহু স্মরণীয় মানুষের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। বিগত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে কীর্তিমান ও উদীয়মান বহু প্রতিভার পদচারণের স্মৃতি ধারণ করে আছে সে। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একটি প্রধান কেন্দ্ররূপে সেটির চরিত্রটি যাতে অব্যাহত থাকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যাতে সে ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্নœ রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সেটি শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী এবং সার্বিকভাবে চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা থাকবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এই জমি ও ভবন চারুকলা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনায় আধুনিক সুযোগ–সুবিধাসংবলিত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা কঠিন নয়। এখানে একটি আধুনিক শিল্প সংগ্রহালয় ও প্রদর্শনীর যথাযথ ব্যবস্থাসংবলিত গ্যালারি সহজেই করা যায়। তেমনি মিলনায়তন ও আধুনিক সেমিনার কক্ষ তো রয়েছেই, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র-শিক্ষকের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাগারের, চিকিৎসাব্যবস্থারও সম্প্রসারিত কিছু সুবিধা এখানে সহজেই চালু করা যায়। ছাত্রদের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান দাপ্তরিক কাজের একটি সমন্বিত ওয়ান–স্টপ সেবাও এখানে চালু করা যেতে পারে। নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের নানা আয়োজন অনায়াসেই এখানে হতে পারে।
স্থানটির অতীত ভূমিকার সঙ্গে সংগতি রেখে বিদ্যায়তনিক সীমানার বাইরে শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চার একটি মিলনক্ষেত্র হিসেবে এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে অনেকটাই উজ্জ্বল ও ব্যতিক্রমী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের এটুকুই প্রত্যাশা।
● আবুল মনসুর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, চারুকলা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ র কল স থ নট র একট
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।
এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।
সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।”
ঢাকা/ইভা