সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা (মহার্ঘ ভাতা) বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল সোমবার জাতীয় বাজেট উপস্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন। এই বিশেষ সুবিধা কতটা বাড়ানো হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি। সমকাল জানতে পেরেছে, এতে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ১৫-২০ শতাংশ বাড়তে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘২০১৫ সালের পর থেকে কোনো বেতন কাঠামো না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করছি।’
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা পান। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও সাবেক অর্থমন্ত্রী মাহমুদ
আলী বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করেছিলেন। বাজেটের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে নিয়মিত ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করেন। ২০১৫ সাল থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আসছেন। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনাও চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এই বিশেষ প্রণোদনা এখনও অব্যাহত আছে।
অর্থ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ১৫ শতাংশ এবং দশম থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা পেতে পারেন। আগামী ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এ সুবিধা পাবেন।
প্রতিবছর কর্মচারীদের বেতন কারও ৩.
জানা যায়, এই বাজেটে বেতন-ভাতার জন্য ৮০-৯০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে। ১৫ শতাংশ মূল বেতন বৃদ্ধি হলে ছয় হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ হলে আট হাজার কোটি টাকা বাড়তি প্রয়োজন হবে। তবে বেতন বৃদ্ধির হার কত হতে পারে, তা নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইনক র ম ন ট কর মকর ত চ কর জ ব র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাইকেলে নারীর আত্মবিশ্বাস
রাজধানীর সড়কে বেশির ভাগ মানুষের প্রধান ভরসা গণপরিবহন; কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পাশাপাশি নারীরা প্রায়ই গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হন। এই বাস্তবতায় নিজের স্বচ্ছন্দ ও সাশ্রয়ী পরিবহনের কথা ভেবেই সাইকেল চালানো শিখেছিলেন মার্জিয়া নীলা। তখন তিনি মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাঁর সাইকেলযাত্রার সূচনা ২০২১ সালে, লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তানহার হাত ধরে। তানহা সে সময় ঢাকা উদ্যান এলাকায় নারীদের সাইকেল প্রশিক্ষণ দিতেন।
মার্জিয়া জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসন্ধান করে পরিচিত এক আপুর কাছ থেকে ধার করা সাইকেলেই তাঁর শেখা শুরু। পরে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করে নিজে একটি সাইকেল কেনেন, যা এখনও তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গী। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রতিদিন সাইকেলে করেই ক্যাম্পাসে যান।
তাঁর ভাষায়, ‘সাইকেল আমাকে জ্যাম থেকে মুক্তি দিয়েছে, গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। এখন আমি নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা করতে পারি– সময় বাঁচে, শরীর ভালো থাকে, পরিবেশও সুরক্ষিত থাকে।’
মার্জিয়া আরও জানান, ‘আমার কাছ থেকে কয়েক বান্ধবী ও সিনিয়র আপু সাইকেল চালানো শিখেছেন। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় আমার বাসা। ওখানকার কয়েক কর্মজীবী নারীও আমার কাছে শিখেছেন। তবে সময়ের অভাবে নিয়মিত শেখাতে পারি না, ছুটির দিনেই সুযোগ হয়। আমার কয়েক পরিচিত আপুও এ কাজে যুক্ত আছেন।’
শুক্রবার সকালে চন্দ্রিমা উদ্যানে কয়েক নারীকে সাইকেল চালানো শেখান লিজা আক্তার। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। প্রতি শুক্রবার নারীদের সাইকেল চালানো শেখানোই তাঁর স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ। লিজা বলেন, ‘শুধু যানজট এড়ানো বা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো নয়– সাইক্লিং শরীরকে ফিট রাখে আর আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এটি নারীর জন্য এক নতুন অনুপ্রেরণার জায়গা।’
গত কয়েক বছরে সাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়লেও ঢাকার রাস্তায় তরুণীদের সাইকেল চালানোর দৃশ্য এখনও খুব কম। এর পেছনে পারিবারিক, ধর্মীয় ও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি নারীদের মানসিক প্রস্তুতির অভাবও দায়ী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
লিজা বলেন, ‘সামাজিক বাধা এখনও প্রবলভাবে টের পাই। আমার পরিবার সেভাবে বাধা না দিলেও কেউ উৎসাহও দেয় না। নিরাপত্তার ভয়ে অনেকেই ভয় পান। রাস্তায় বের হলেই কটু মন্তব্য শুনতে হয়– কখনও পাশের বাইক থেকে, কখনও রিকশাওয়ালার মুখে। শুরুতে খারাপ লাগত, এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সমাজ এখনও নারীদের সাইকেলে দেখলে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। বেশির ভাগ সময় কেউ প্রতিবাদ করে না। গত এক বছর ধরে মাঝে মাঝে ইতিবাচক মন্তব্যও শুনি।’
একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে লিজা বলেন, ‘এক দিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় এক চাচা ডাক দিলেন। কাছে গিয়ে শুনি, তিনি অবসরপ্রাপ্ত। সকালে হাঁটতে বের হন। প্রতিদিন আমাকে সাইকেল চালিয়ে যেতে দেখেন, ভালো লাগে– এ কথা বলার জন্যই ডাক দিয়েছিলেন। আমাকে দোয়া করলেন।’