নদীর বালু দিয়েই ভরাট হচ্ছে কালীগঙ্গার তীর
Published: 3rd, June 2025 GMT
নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। রাতে সে বালু দিয়েই ভরাট হচ্ছে নদীর তীর। সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম বাজারসংলগ্ন কালীগঙ্গা নদীর জমি এভাবে ভরাট করছে একটি চক্র। রোববার থেকে নদীর অংশ ভরাট শুরু হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন ও সাইদুল ইসলাম এবং যুবদল নেতা ইমরান হোসেন এ কাজে যুক্ত। ইমরান নিজেকে ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি বলে দাবি করেছেন। তিনি বালু উত্তোলন ও ভরাটে যুক্ত বলে স্বীকারও করেছেন।
গত সোমবার রাত ১১টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, কুসলিবাসা-বাঁশগ্রাম সড়কঘেঁষে বাজারসংলগ্ন এলাকায় নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। বাঁধ দিয়ে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে তীরের প্রায় আট শতাংশ জমি। এর বর্তমান দাম অন্তত ৪০ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
আরিফ ও ইমরান বালু তুলে তীর ভরাট করছেন বলে জানান ড্রেজার ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রশাসনের ভয়ে রাতে তোলা হচ্ছে বালু। তাঁর ভাষ্য, প্রতি ঘনফুট ৩ টাকা দরে সাত হাজার ফুট বালু তোলা হয়েছে। কয়েক দিন চলবে এ কাজ।
জানা গেছে, স্থানীয় কৃষক সরোয়ারের কাছ থেকে সড়কের পাশের পাঁচ শতাংশ জমি ইজারা নিয়েছেন বাজারের আরিফ ট্রেডার্সের মালিক আরিফ হোসেন। এ জমিসহ ১৩ শতাংশ জায়গায় বাঁধ দিয়ে বালু ফেলছেন ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম। তিনি ড্রেজার বসিয়ে প্রতি ঘনফুট ৩ টাকায় বালু তুলছেন।
এসব কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি দাবি করা ইমরান হোসেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ব্যবসায়ী সাইদুল ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু তুলে তীর ভরাট করে টাকা নিচ্ছেন। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে নদী ও জীববৈচিত্র্য।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জমির ইজারাদার আরিফ হোসেন বলেন, ‘সরোয়ারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে ভরাটের পর আয়তন অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করা হবে। এ পর্যন্ত লেনদেন হয়নি।’
বালু তোলার কথা স্বীকার করেছেন যুবদল নেতা দাবি করা ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, ‘জায়গাটি ভরাট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হবে। এসব নিয়ে রিপোর্ট-টিপোর্ট করার দরকার নেই।’
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধে কয়েকজনকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি বলেন, দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম ব যবস য় র ট কর য বদল ইমর ন
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প
ফেনী জেলার তিনটি নদীর ভাঙন ও বন্যার স্থায়ী সমাধানে প্রায় ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১০টায় ফেনী শহরের গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রকল্পের খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) পরিচালক তপন কান্তি মজুমদার।
‘মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প পুনর্বাসন (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক এ প্রকল্পে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরে ১২৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার, নদী খনন, রেগুলেটর, বাঁধ, সেতু, ফ্লাড বাইপাস এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হওয়ার আগে এর অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে নদীতীর বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণে। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। প্রকল্পের ওপর বিস্তারিত বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ছায়েদুজ্জামান, ফেনী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব যতন মারমা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী সার্কেলের সুপার হাসান মাহমুদ। সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ছায়েদুজ্জামান বলেন, ‘প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প সফল করতে অংশীজনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম প্রকল্পটিকে মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ফেনী জেলার দীর্ঘমেয়াদি বন্যা ও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে মাইলফলক সৃষ্টি হবে।
সভায় বিএনপি, জেএসডি, এবি পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নেন এবং সর্বসম্মতভাবে প্রকল্পটির দ্রুত একনেক অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে ঐকমত্য প্রকাশ করেন। তাঁরা প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
এতে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (উপসচিব) ও ফেনী পৌর প্রশাসন গোলাম মোহাম্মদ বাতেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল, সাবেক সাংসদ রেহানা আক্তার রানু, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না।
বিএনপি নেতা ভিপি জয়নাল বলেন, সবার উদ্যোগে সম্মিলিত প্রয়াসে প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফেনীবাসীর কল্যাণে সবাইকে একাত্ম হতে হবে। একনেকে পাস করতে এই ইউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবাই মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। দুর্নীতির ব্যাপারে সবাই সজাগ থাকতে হবে।
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘প্রশাসন বলতে আমলাতান্ত্রিক সীমাবদ্ধতাকে জানি। প্রশাসনকে গণমুখী করেছে এই সভা। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এই সভার প্রতিফলন হচ্ছে।’
মুক্ত আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আহ্বায়ক রফিকুল আলম (মজনু), জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহগ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমদ, সদস্য মশিউর রহমান, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন, বিএনপির জেলা সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল, এনসিপি কেন্দ্রীয় সদস্য আজিজুর রহমান প্রমুখ।
২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধে অন্তত ২০০টি ভাঙন হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালের আগস্টের বন্যায় প্রাণ গেছে ২৯ জনের, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এবং ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাইতেও ৪২টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ২৩৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।