কারাবন্দী ফারুক খান একা চলাফেরা করতে পারেন না
Published: 3rd, June 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। তিনি এখন একা চলাফেরা করতে পারেন না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামিন আবেদনের শুনানিতে তাঁর আইনজীবী এ কথা বলেন।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মঙ্গলবার ফারুক খানের জামিন আবেদনের ওপর শুনানির হয়। তাঁর জামিন আবেদনের পরবর্তী শুনানি ২৩ জুন নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
শুনানিতে ফারুক খানের স্বাস্থ্যের ওপর কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া প্রতিবেদন তুলে ধরেন তাঁর আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান। মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ফারুক খানকে সর্বশেষ ২০ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছিল। তখন তিনি একা একাই চলতে পেরেছেন। কিন্তু এখন তিনি একা চলাফেরা করতে পারেন না। তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটেছে।
আন্তর্জাতিক নজির তুলে ধরে ফারুক খানের আইনজীবী বলেন, কারাবন্দীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ফারুক খান সব সময় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা নিয়েছেন। জামিন দিয়ে তাঁকে সিএমএইচে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার এখতিয়ার এই ট্রাইব্যুনালের আছে।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, ফারুক খানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। কারাগারে তাঁর চিকিৎসা চলছে। কারা কর্তৃপক্ষ বলেনি, তাঁকে চিকিৎসা দিতে পারবে না। তবে বাইরের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসকের সেবা নিতে চাইলে, সেই সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
তখন মুস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে ফারুক খানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাতে চান। এ সময় ট্রাইব্যুনাল জামিন আবেদনের পরবর্তী শুনানি ২৩ জুন নির্ধারণ করেন।
শুনানির একেবারে শেষ পর্যায়ে ফারুক খানের আইনজীবী বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেখতে চান না। তাঁর এই কথার সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল ও চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম একমত পোষণ করেন।
শুনানি শেষে সাংবাদিকদের তাজুল ইসলাম বলেন, ‘উনি (মুস্তাফিজুর) বলেছেন, এটা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আদালত নয়; বিপ্লবের পরে নতুন আদালত। সেই কারণে এই আদালত অনেক বেশি ফেয়ার (ন্যায্য) হবে। আদালত এটার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। আমরাও এর সঙ্গে একমত পোষণ করি।’
আরও পড়ুনসাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খান গ্রেপ্তার১৫ অক্টোবর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়েছে। সেই খসড়ায় বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা যেটা পেয়েছি, এটা জুলাই জাতীয় সনদ নামে একটা খসড়া পেয়েছি। সেটা ভূমিকা, বিস্তারিত বিষয়গুলো নেই। এই খসড়ার সঙ্গে আমরা মোটামুটি একমত। কিন্তু খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দ ও গঠনপ্রণালি নিয়ে কারও কোনো মতামত আছে কি না, তা জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটি দিয়েছে কমিশন। আমাদের যে সংশোধনী থাকবে, আমরা তা কাল জমা দেব।’
খসড়ায় যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি একমত বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘খসড়ায় দুই বছরের ভেতরে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা একমত।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে।’ তিনি বলেন, ‘কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধানে যত বেশি যুক্ত করা হবে, সংশোধন তত বেশি জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই, আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে।’
নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।’
সংস্কার কমিশনের ৭০০–এর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।’