পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগোচ্ছে সরকার: ক্যাব
Published: 4th, June 2025 GMT
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিক খাতে রূপান্তর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব। তারা বলছে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে (পিবিএস) পরস্পরের প্রতি দোষারোপ ও অস্থিরতা এখন চরমে। সমস্যার সমাধান না করে পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগোচ্ছে সরকার।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আজ বুধবার এ কথা বলেছে ক্যাব। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পরামর্শে আরইবিকে সেবা খাত থেকে বাণিজ্যিক খাতে রূপান্তরের প্রতিবাদে ও আরইবি-পিবিএসের মধ্যে বিদ্যমান বিবাদ অবসানে ক্যাবের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে এটির আয়োজন করা হয়। এতে বলা হয়, অসমতা ও বৈষম্য নিরসনে পল্লী বিদ্যুৎকে বাণিজ্যিক বানানোর ধারণা অবাস্তব।
এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে কোম্পানি বানিয়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পরামর্শ মানায় সরকারের দায় রয়ে গেছে। সংস্কারের নামে কোম্পানি বানানোর যে প্রক্রিয়া ৮০–এর দশকে শুরু হয়েছে, এটি যেন তারই বাস্তবায়ন। এ কারণে আরইবি ও পিবিএস একীভূত করার দাবি সরকারের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। অথচ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছে।
আরইবি ও পিবিএস একীভূত করাসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে টানা ১৫ দিন ধরে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা। গত বছরের জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা এসে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এর আগে গত ডিসেম্বরে সরকারের কাছে আরইবি ও পিবিএস একীভূত করার সুপারিশ করেছে ক্যাব।
আন্দোলনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। এরপর গত বছরের ২৩ অক্টোবর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যমান পল্লী বিদ্যুৎ কাঠামো পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। ১ জুন আরইবিতে তাদের প্রতিবেদনের একটি চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করা হয় বিদ্যুৎ বিভাগের উপদেষ্টার কাছে।
এ নিয়ে আজ ক্যাবের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কমিটির প্রতিবেদনে আরইবি পুনর্গঠনের নামে মূলত কোম্পানিতে পরিণত করার সুপারিশ করা হয়। কমিটি অংশীজনদের মতামত নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির কথা বললেও তারা ক্যাবের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। এমনকি প্রতিবেদনের খসড়া উপস্থাপনের সভায় বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও ক্যাবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। পরে বিদ্যুৎ বিভাগের উপদেষ্টার নির্দেশে ক্যাবের জ্বালানি বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কমিটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওই সভায় ক্যাবের প্রতিনিধি বলেন, ভোক্তারা এখন উত্তপ্ত কড়াইয়ে আছে, কমিটির সুপারিশ গৃহীত হলে তাদের জ্বলন্ত চুলায় ফেলা হবে। কমিটির সুপারিশ ত্রুটিপূর্ণ ও স্বার্থ সংঘাতযুক্ত।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এম শামসুল আলম। এতে আরও বলা হয়, জ্বালানি খাতের চলমান সংস্কারের বাইরে আছে আরইবি। চলমান সংস্কার ভোক্তাদের জ্বালানি সুবিচার থেকে বঞ্চিত করেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতি নিয়ে আগের সরকারের মন্ত্রণালয় যা করেছে এবং এখনো যা করছে, তা ভয়াবহ প্রহসন। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পরামর্শে সরকার যে পথে হাঁটছে, তা বাস্তবায়িত হলে পল্লী বিদ্যুৎ খাত সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক খাতে পরিণত হবে। পল্লী বিদ্যুতের ব্যয় বাড়ছে। কোম্পানি হলে ব্যয় আরও বৃদ্ধি হবে। বিশ্বব্যাংকের এই এজেন্ডা কখনোই সফল করা যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া। তিনি বলেন, কোম্পানি করার কারণ ভোক্তা জানে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ২০০ বছর শাসনের নামে শোষণ করে গেছে। শোষণ করতে চায় বলেই আরইবিকে কোম্পানি বানাতে চায়। শোষণের এ নীতি এ সরকারেও বহাল আছে।
ক্যাবের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকেই বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রেসক্রিপশনে পল্লী বিদ্যুৎকে বেসরকারিকরণের পরামর্শ দেওয়া হয়। গত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী এটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তাঁর রেখে যাওয়া দায়ই হয়তো কাঁধে তুলে নিতে হচ্ছে বর্তমান জ্বালানি উপদেষ্টাকে। তাই আরইবি ও পিবিএস একীভূত করে সহজে সংকট সমাধানের প্রস্তাব করেছিল ক্যাব।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ও এড ব র প ব শ বব য সরক র র উপদ ষ ট কম ট র ব র পর
এছাড়াও পড়ুন:
পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে
বিপর্যয়ের মুখে পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা। আজ থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। এর আগেই গতকাল মঙ্গলবার থেকে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণছুটিতে যান। ফলে দেশের অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা না থাকায় সরবরাহ ব্যবস্থা মেরামত কাজও করা যাচ্ছে না। সারাদেশে প্রায় ৪৮টি সমিতিতে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন দেড় কোটি গ্রাহক। কয়েকটি স্থানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে হামলা চালিয়েছেন গ্রাহকরা।
দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। দেশের ৪ কোটি ৮২ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে আরইবির গ্রাহক ৩ কোটি ৬৮ লাখ। দেশজুড়ে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগসহ নানা দাবিতে গত জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করছেন সমিতির কর্মীরা। এর ধারাবাহিকতায় গত ২১ মে থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। আন্দোলনে গত কয়েক দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সংহতি জানিয়েছে। আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এখন আর পেছনে ফেরার উপায় নেই। আমরা দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরব। কাজে ফিরব।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, তারা যেসব দাবি তুলে ধরেছেন, সেগুলো পূরণ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যেমন– পল্লী বিদ্যুৎ ও সমিতি একীভূত করা। এখানে আইনি নানা বিষয় রয়েছে। শহীদ মিনারে বসে থাকলে তো চলবে না। আবার তারা আরইবির চেয়ারম্যানের অপসারণ চেয়েছে। সরকার তো সমাবেশ দেখে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।
বিদ্যুৎ নেই অনেক এলাকায়
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২, গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে গণছুটির কারণে লাইনম্যানরা কাজ করছেন না। ফলে ঝড়বৃষ্টিতে যে সব স্থানে লাইন বন্ধ হয়েছে, তা আর চালু করা সম্ভব হবে না। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম-২ সমিতির লাইনম্যানরা কাজ বন্ধ রাখেন। এতে কয়েকটি উপকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরে পবিসের সব লাইনম্যান কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।