তানভীর মিশুকসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
Published: 4th, June 2025 GMT
ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৬৪৫ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার ৭৫৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক (৪১), নির্বাহী পরিচালক ও নমিনি পরিচালক মো. সাফায়েত আলম (৪৮), এএমডি ও নমিনি পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুল হক (৪১), সিনিয়র ম্যানেজার মারুফুল ইসলাম ঝলকসহ ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৪ জুন) দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতির মাধ্যমে হিসাবপত্রের মিথ্যা বর্ণনা ও মিথ্য প্রতিবেদনের মাধ্যমে ০১/৩/২০২১ থেকে ১৭/১১/২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ট্রাস্টকাম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে ফিজিক্যাল মানি স্থিতির চেয়ে ৬৪৫ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার ৭৫৮ টাকা ৯০ পয়সার বেশি ই-মানি ইস্যু করে উক্ত টাকা অননুমোদিত ৪১টি ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে রিফান্ডপূর্বক আত্মসাৎ করে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭ক/১০৯সহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন—নগদের চিফ টেকনোলজি অফিসার মো.
নগদের হেড অব ফাইন্যান্স অপারেশন রাকিবুল ইসলাম (৩৭), নগদের চিফ ফাইন্যান্স অফিসার আফজাল আহমেদ (৩৯), নগদের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার শিহাব উদ্দিন চৌধুরী (৪১) এবং নগদের হেড অব বিজনেস ইন্টেলিজেন্স গোলাম মর্তুজা চৌধুরী (৪৮)।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তানভীর আহমেদ মিশুকসহ আসামিরা জালিয়াতির মাধ্যমে হিসাবপত্রের মিথ্যা বর্ণনা ও মিথ্যা প্রতিবেদনের মাধ্যমে ০১/৩/২০২১ থেকে ১৭/১১/২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টের ফিজিক্যাল মানি স্থিতির চেয়ে ৬৪৫ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার ৭৫৮ টাকা ৯০ পয়সার বেশি ই-মানি ইস্যুপূর্বক উক্ত টাকা অননুমোদিত ৪১টি ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে রিফান্ডপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন। তা দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭ক/৪২০ এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
৫ নম্বর আসামি মো. আবু রায়হান, ৬ নম্বর আসামি মো. রাকিবুল ইসলাম, ৭ নম্বর আসামি আফজাল আহমেদ, ৮ নম্বর আসামি শিহাব উদ্দিন চৌধুরী এবং ৯ নম্বর আসামি গোলাম মর্তুজা চৌধুরী নগদ লিমিটেডের প্রোডাকশান/লাইভ সিস্টেমে (i) অননুমোদিত ৪১টি ডিস্ট্রিবিউটর এন্ট্রি/যুক্ত করে, (ii) প্রোডাকশান/লাইভ ডাটাবেজ থেকে BI portal ও BPO portal এর ডাটাবেজে ডাটা এনে portal দুটির মাধ্যমে বিভিন্ন কাস্টমাইজড রিপোর্ট প্রস্তুত ও প্রদান করে এবং (iii) ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে Physical Money স্থিতির চেয়ে ৬৪৫ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার ৭৫৮ টাকা ৯০ পয়সার বেশি ই-মানি ইস্যু করে উক্ত টাকা অননুমোদিত ৪১টি ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে রিফান্ডপূর্বক আত্মসাতে ১, ২, ৩ ও ৪ নং ক্রমিকে আসামিকে সহায়তা করেছেন। তা দণ্ডবিধির ১০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭ক/৪২০ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এসব অভিযোগে বর্ণিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭ক/১০৯সহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়।
মামলা তদন্তকালে আরো কোনো বিষয় বা অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে নেওয়া হবে বলেও এজাহারে জানানো হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড স ট র ব উটর প র বক র চ লক আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।
আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।