বাজেটে জনপ্রত্যাশা পূরণ হয়নি: গণসংহতি আন্দোলন
Published: 4th, June 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় দেওয়া প্রস্তাবিত বাজেট জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বলে মনে করছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি বলছে, নতুন বাজেট পুরনো বাজেটেরই ধারাবাহিকতা।
বুধবার সকালে রাজধানীতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাজেট পর্যালোচনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।
তিনি বাজেটে কর প্রস্তাব এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা করেন। রুবেল বলেন, কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষীই বলতে হবে। কেননা দেশে বিনিয়োগ প্রবাহ নেই বলা যায়।
খাতওয়ারি বরাদ্দের বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গতানুগতিকতায় আটকে থাকছে সরকার। বাজেটে কাঁটছাটের প্রভাব শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ খাতের ওপর পড়েছে। যা একেবারেই কাম্য ছিল না। সচেতন মহল থেকে বেশ আগে থেকেই বলা হচ্ছিল যেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ কমানো না হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সরকার ওই আকাঙ্ক্ষা প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত করতে পারেনি।
সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বাজেট। এটি নিয়মতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে। তিনি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য দেওয়ান আবদুর রশীদ নীলু, মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু এবং দীপক কুমার রায়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক