বিজ্ঞানীদের তৈরি কনট্যাক্ট লেন্স, অন্ধকারেও দেখা যাবে
Published: 5th, June 2025 GMT
অন্ধকারে দেখার যন্ত্র বলতে এত দিন কেবল রাতের চশমার কথাই ভাবা হতো। তবে এবার বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন এমন এক ধরনের কনট্যাক্ট লেন্স, যা চোখে পরলে অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখা যাবে। এমনকি চোখ বন্ধ থাকলেও।
চীনের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকেরা সম্প্রতি এই অভিনব কনট্যাক্ট লেন্স উদ্ভাবন করেছেন। ব্যাটারিচালিত কোনো যন্ত্র ছাড়াই এই লেন্স ইনফ্রারেড তরঙ্গ শনাক্ত করে তা দৃশ্যমান আলোর রূপে রূপান্তর করতে পারে।
গবেষকদের ভাষায়, এই প্রযুক্তি মানুষের দৃষ্টিশক্তিকে ‘সুপারভিশনে’ রূপান্তর করতে পারে। গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক অধ্যাপক তিয়ান শুয়ে বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় এমন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে, যা নন-ইনভেসিভ বা সহজে ব্যবহারযোগ্য কনট্যাক্ট লেন্সের মাধ্যমে মানুষের দেখার ক্ষমতায় নতুন মাত্রা যুক্ত করতে পারে।’ এই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিরাপত্তা, উদ্ধার তৎপরতা, গোপন বার্তা পাঠানো, তথ্য সুরক্ষা ও জাল শনাক্তকরণসহ বিভিন্ন খাতে তাৎক্ষণিক প্রয়োগ সম্ভব।
মানুষ সাধারণত ৩৮০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো দেখতে পারে। তবে এই কনট্যাক্ট লেন্সে ব্যবহৃত বিশেষ ন্যানোকণাগুলো ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড’ আলো শনাক্ত করতে পারে। এই ইনফ্রারেড আলো চোখে দেখা না গেলেও, লেন্সের সাহায্যে তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
গবেষকেরা এর আগে ইঁদুরের চোখে ইনজেকশনের মাধ্যমে ন্যানোকণার কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছিলেন। এবার তাঁরা একই প্রযুক্তি আরও সহজভাবে প্রয়োগের জন্য সফট কনট্যাক্ট লেন্সে এটি সংযুক্ত করেছেন। লেন্সটি তৈরি হয়েছে নমনীয় ও বিষমুক্ত পলিমার দিয়ে, যা সাধারণ কনট্যাক্ট লেন্স তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। পরীক্ষামূলক ব্যবহারে দেখা গেছে, অন্ধকার কক্ষে ইনফ্রারেড সংকেত, যেমন মোরস কোডের মতো আলো, এই লেন্স পরে স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব। আরও চমকপ্রদ তথ্য হলো, চোখ বন্ধ থাকলে সংকেত আরও স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।
অধ্যাপক শুয়ে জানান, ইনফ্রারেড আলো চোখের পাতার ভেতর দিয়েও প্রবেশ করতে পারে, যা দৃশ্যমান আলোর ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। ফলে চোখ বন্ধ থাকলেও আলো শনাক্তে কোনো বিঘ্ন ঘটে না, বরং দৃশ্যমান আলোর ব্যাঘাত না থাকায় সংকেত আরও ভালোভাবে বোঝা যায়।
গবেষকেরা আরও জানান, ন্যানোকণাগুলো নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ইনফ্রারেড আলোকে নির্দিষ্ট দৃশ্যমান রঙে রূপান্তর করতে সক্ষম। যেমন ৯৮০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে নীল, ৮০৮ ন্যানোমিটারকে সবুজ ও ১ হাজার ৫৩২ ন্যানোমিটারকে লাল রঙে রূপান্তর করা হয়েছে। এতে ইনফ্রারেড পরিবেশ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য ও পার্থক্য স্পষ্টভাবে বোঝা সম্ভব হয়।
এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে বর্ণান্ধ ব্যক্তিদের জন্যও সহায়ক হতে পারে বলে গবেষকদের দাবি। ইনফ্রারেড তরঙ্গকে অন্য দৃশ্যমান রঙে রূপান্তর করে তাদের জন্য অদৃশ্য রংগুলো দৃশ্যমান করে তোলা যেতে পারে। তবে গবেষকেরা জানিয়েছেন, বর্তমানে এই লেন্স কেবল এলইডি আলোর মতো নির্দিষ্ট ইনফ্রারেড উৎস থেকে আসা আলো শনাক্ত করতে সক্ষম। পরবর্তী ধাপে তাঁরা এমন ন্যানোকণা তৈরি করতে চান, যা দুর্বল ইনফ্রারেড আলোকও স্পষ্টভাবে শনাক্ত করতে পারবে।
অধ্যাপক শুয়ে বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা আরও উন্নত সংবেদনশীলতা ও উচ্চতর স্পষ্টতাসম্পন্ন কনট্যাক্ট লেন্স তৈরির লক্ষ্যে অপটিক্যাল ও উপাদানবিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।’ বিজ্ঞান সাময়িকী সেল–এ গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: ডেইলি মেইল
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কনট য ক ট ল ন স ক ত করত তরঙ গ ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেওয়ায় মহিলা দলের নেত্রীকে মারধর, অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে
চাহিদামতো ভিজিএফের স্লিপ না পাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদে তালা দিয়েছিলেন ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়ন মহিলা দলের সভাপতি মালেকা বেগম। ওই ঘটনার জেরে মারধরের শিকার হন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের লোকজন তাঁর ওপর হামলা করেন।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে চাঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল হাওলাদার বলেন, ভিজিএফের চাল নিতে আসা নারীদের হামলায় মালেকা বেগম আহত হয়েছেন।
এদিকে মালেকা বেগমের ওই অভিযোগের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বিকেলে বিক্ষোভ করেছেন এলাকার লোকজন। বিকেল চারটা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালিত হয়।
গত মঙ্গলবার সকালে চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদে মালেকা বেগমকে মারধর করা হয়। পরে তিনি তজুমদ্দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তিনি ইউপির সাবেক সদস্য। ওই ঘটনা সম্পর্কে মালেকা বেগম বলেন, ‘গত সোমবার ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ইয়াজউদ্দিনের কাছে ঈদে বরাদ্দ ভিজিএফের ১০০টি স্লিপ চেয়েছিলাম। তিনি ৪০ জনের তালিকা দিতে বলেছিলেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। পরদিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন। তখন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম হাওলাদারের ভাই কালিমুল্লাহ ও ইউপির দফাদার মো. আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল নারী তাঁকে পিটিয়ে জখম করেন। তাঁরা তাঁর ছবি ফেসবুকেও ছড়িয়ে দিয়েছেন।
এ সম্পর্কে বিএনপি নেতা ইব্রাহীম খলিল হাওলাদার বলেন, ‘ওই দিন (মঙ্গলবার) নারীদের মধ্যে চাল বিতরণের কথা ছিল। তাঁরা এসে পরিষদে তালা মারা দেখেন এবং মালেকা বেগমকে তালা খুলে দিতে বলেন। এ সময় কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে মালেকা বেগম হতদরিদ্র নারীদের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করেন। তখন তাঁরা তাঁকে পিটিয়ে জখম করেন। এ ঘটনায় আমার পরিবারের বা বিএনপির কেউ জড়িত নন।’
চাঁচড়া ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ইয়াজউদ্দিন বলেন, ‘তাঁদের ইউনিয়নে ১ হাজার ৬৭৪ জন হতদরিদ্রের নামে ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফের চাল এসেছে। মহিলা সভাপতি (মালেক বেগম) একাই ১০০টি স্লিপ দাবি করেন। তাঁকে বলেছিলাম, আইডি কার্ড জমা দেন, চেষ্টা করব। ঘটনার দিন (মঙ্গলবার) সাড়ে ১০টার সময় পরিষদে গিয়ে জানতে পেরেছি তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।’
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহব্বত খান বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ দেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’