সরকার নির্ধারিত মূল্যের জায়গায় মৌলভীবাজারে পানির দামে বিক্রি হয়েছে কোরবানীর পশুর চামড়া। ফলে বিপাকে পড়েছেন চামড়া সংগ্রহ করা বিভিন্ন মাদরাসা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, কম দামে চামড়া কিনতে সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা বাজারে ধস নামিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, পুঁজি সংকটে চামড়া কিনতে পারেননি তারা।

শনিবার (৭ জুন) রাত মৌলভীবাজার পৌর বাস টার্মিনালের খোলা জায়গায় কথা হয় নয়াব মিয়ার সঙ্গে। তিনি সদর উপজেলার দীঘিরপার এলাকা থেকে চামড়া নিয়ে সেখানে আসেন। মৌসুমি এই ব্যবসায়ী বলেন, “গতবছর চামড়ার দাম কম ছিল। এবার টিভিতে শুনলাম, চামড়ার দাম বেড়েছে। এ কারণে একশ চামড়া নিয়ে আসি। ব্যবসায়ীরা, প্রতি পিস চামড়ার দাম বলেছেন ২০০-২৫০ টাকা।”

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জগন্নাতপুর মহিলা মাদরাসার শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, “সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ায় আশা করে চামড়া সংগ্রহ করি। বিক্রির জন্য নিয়ে এসে বিপাকে পড়েছি। ব্যবসায়ীরা দাম বলেন, ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। চামড়া সংগ্রহ করতে আমার যে টাকা খরচ হয়েছে তাও উঠছে না। সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা বাজারে ধস নামিয়েছেন।”

আরো পড়ুন:

বৃষ্টিতে কোরবানির পশুর দাম কমার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের নাম পরিবর্তনে ডিএসইর সম্মতি

কমলগঞ্জ উপজেলার রাজদীঘি মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মুফতি শামছুল ইসলাম লিয়াকত বলেন, “সরকারি মূল্য শুনে ছাত্রদের দিয়ে কষ্ট করে চামড়া সংগ্রহ করি। পানির দামে চামড়া বিক্রি করে বাড়ি ফিরেছি। লাভের আশায় সর্বনাশ হয়েছে।”

মৌলভীবাজার সদরের বালিকান্দি গ্রামের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী হাফিজ আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা চামড়া সংগ্রহ করেছি, লবণ প্রসেসিং চলছে। লবণ প্রসেসিংয়ের খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা যাচ্ছে না। যে যেভাবে পারছেন চামড়া কিনেছেন।”

রাজনগর উপজেলার মৌসুমি ব্যবসায়ী রিপন আহমদ বলেন, “পুঁজি সংকটের কারণে নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কেনা যায়নি। সংগ্রহকারীরা লবণ প্রসেসিং করে দিলে সরকারের নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় করা যেত।”

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো.

আল আমিন বলেন, “বিষয়টি আমরা তদারকি করছি। আমরা দেখছি বিক্রেতারা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। আমরা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের বলে দিয়েছি, তাদের ন্যায্য দাম দিয়ে চামড়া কেনার জন্য। তবে লবনের প্রক্রিয়াজাত একটি লম্বা প্রসেসিং।”

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, “লবণ সংকট না হওয়ার জন্য প্রচুর লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। চামড়া সংরক্ষণ করার জন্য সব ধরণের সহযোগিতা রয়েছে।”

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় র উপজ ল র প রস স র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা উপকূলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাবে ত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’

আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) পরিচালিত ‘ম্যাডলিন’ জাহাজটি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার উপকূলে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতালি থেকে রওনা হওয়া জাহাজটি গাজার ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে। খবর আল জাজিরার

সুইডেনের পরিবেশবিষয়ক আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ গাজায় ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী ওই জাহাজে আছেন।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফরাসি ফিলিস্তিনি সদস্য রিমা হাসান আজ রোববার ইনস্টাগ্রামে বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা অবৈধভাবে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ ও দখলে রাখা ফিলিস্তিন উপকূলে পৌঁছাব।’

জার্মানির মানবাধিকারকর্মী ইয়াসেমিন আচার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এখন আমরা মিসরের উপকূলে আছি। আমরা সবাই ভালো আছি।’

জাহাজে থাকা লাইভ ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাত ১টা ৩৯ মিনিটে ‘ম্যাডলিন’ জাহাজটি মিসরের উপকূলীয় শহর রোসেতার উত্তরে অবস্থান করছিল।

জাহাজে থাকা রিমা হাসান সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলার নিরাপদ পথচলা নিশ্চিত করতে হবে।’

গত ২ মার্চ থেকে গাজা উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এমন অবস্থায় অনাহারে ভুগে বেশ কয়েকটি শিশু মারা যায়। ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ‘ম্যাডলিন’ নামের এ জাহাজ ১ জুন ইতালির সিসিলির কাতানিয়া শহর থেকে যাত্রা শুরু করে।

বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার হিসাব অনুসারে, গাজার ২৩ লাখের বেশি বাসিন্দার মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ তীব্রমাত্রায় খাদ্যসংকটে ভুগছেন।

গাজার প্রথম ও একমাত্র নারী মৎস্যশিকারির নামানুসারে ‘ম্যাডলিন’ জাহাজটির নামকরণ করা হয়েছে। তবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ত্রাণবাহী জাহাজটিকে নিজেদের জলসীমায় প্রবেশ করতে দেবে না।

ফ্রি ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গাজার মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে যেসব সহায়তা দরকার, সেগুলো বহন করছে জাহাজটি। এর মধ্যে আছে চিকিৎসার সরঞ্জাম, ময়দা, চাল, শিশুদের দুধ (বেবি ফর্মুলা), ডায়াপার, নারীদের স্যানিটারি পণ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ কিট, ক্রাচ ও শিশুদের কৃত্রিম অঙ্গ।

‘ম্যাডলিন’ জাহাজে মোট ১২ জন মানবাধিকারকর্মী আছেন। তারা হলেন সুইডেনের পরিবেশবিষয়ক আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান, জার্মানির ইয়াসেমিন আচার, ফ্রান্সের ব্যাপতিস্ত আন্দ্রে, ব্রাজিলের থিয়াগো আভিলা, ফ্রান্সের ওমর ফায়াদ, পাস্কাল মৌরিয়েরাস, ইয়ানিস মোহামদি, তুরস্কের সুলাইব ওর্দু, স্পেনের সার্জিও তোরিবিও, নেদারল্যান্ডসের মার্কো ফন রেনেস ও ফ্রান্সের রিভা ভিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ