কোচের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ সিকান্দার রাজার
Published: 9th, June 2025 GMT
বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়ে স্থানীয় কোচ ব্লেসিং মাফুওয়ার বিরুদ্ধে হারারে মেট্রোপলিটন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জিম্বাবুয়ের তারকা অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বড় ধরনের শাস্তি হতে পারে মাফুওয়ার। আপাতত তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ওল্ড হারারিয়ানস স্পোর্টস ক্লাব মাঠে গত ১ জুনের ঘটনা সেটি। ভিগনে কাপের ম্যাচে রেইনবো ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ওল্ড হারারিয়ানসের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন রাজা। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ৩৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের অভিযোগ, সেদিন ম্যাচ শেষে মাঠে ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে উদ্দেশ্য করে বর্ণবাদী ও অবমাননাকর মন্তব্য করেন রেইনবো ক্রিকেট ক্লাবের কোচ মাফুওয়া।
ঘটনার পূর্ণ তদন্ত দাবি করে রাজা ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে বলেন, ‘দোষী প্রমাণিত হলে তাঁকে দিয়ে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক, যেন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কারও এমন অভিজ্ঞতার শিকার হতে না হয়।’
সেই কোচের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সিকান্দার রাজা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আমেরিকানরা কেন ইসরায়েলিদের চেয়ে বেশি ইসরায়েলি
১৯৭১ সালে প্রকাশিত ফ্রেডারিক ফর্সাইথের দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল উপন্যাসটি শুরু হয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গলকে হত্যার ষড়যন্ত্রের কাহিনি দিয়ে। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁরা ‘পিয়ে-নোয়া’ (পিয়ে অর্থ কালো, নোয়া অর্থ পা) নামে পরিচিত। আলজেরিয়া যখন ফ্রান্সের উপনিবেশ, তখন দেশটিতে জন্ম নেওয়া ফরাসিদের এই নামে ডাকা হতো।
পিয়ে-নোয়ারা চাইতেন না, শার্ল দ্য গল আলজেরিয়া ছেড়ে যাক। তাঁরা এটিকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করতেন। সাবেক উপনিবেশে থাকতে না পেরে তাঁরা হতাশ, হীনবল ও চরম সহিংস হয়ে ফ্রান্সে ফেরত এসেছিলেন। পিয়ে-নোয়ারা নিজেদের ফরাসিদের চেয়ে বেশি ফরাসি বলে ভাবতেন।
এই উপন্যাসের আকর্ষণীয় জায়গা হলো, বাস্তব ইতিহাসের সঙ্গে কাহিনির মিল আছে। ষাটের দশকে দ্য গলকে অন্তত ছয়বার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছিল। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন ফরাসি রেভানচিস্টরা (হারানো দেশ ফিরে পেতে আগ্রহী জাতীয়তাবাদী)। ১৯৯৪ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনকে হত্যা করেছিলেন ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ইয়িগাল আমির। বলা হয় যে তিনি উপন্যাসটি পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
আরও পড়ুনইসরায়েল এখনো বুঝতে পারছে না, তারা যুদ্ধে হেরে গেছে১৯ মে ২০২৫সেই উপন্যাসের কথা আবার মনে পড়ল হামাস ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তির খবর পড়ে। এদান আলেক্সান্ডার নামের একজন আমেরিকান-ইসরায়েলি সেনাকে হামাস দেড় বছর ধরে বন্দী করে রেখেছিল। তাঁর মুক্তির জন্য বন্দী বিনিময় চুক্তি। নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যচ্ছে, এদান নিউ জার্সিতে বড় হয়েছিলেন। উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে ইসরায়েলে গিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
লাইনটি পড়ে আমার মনে প্রশ্ন জাগল—একজন আমেরিকান কিশোর এমন চরম পন্থার দিকে কেন ঝুঁকে পড়ল? কেন একজন আমেরিকান কিশোর নিজের দেশ ছেড়ে এমন একটা দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দিল, যাদের মূল কাজ হলো, দখলদারি ও বর্ণবাদ।
এই প্রশ্ন নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এটি আরেকটি বিস্তৃত প্রবণতাকেও তুলে ধরে। সেটি হলো, আলেকজান্ডার এই পথে একেবারেই অনন্য কেউ নন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট–এর এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ‘প্রায় ২৩ হাজার ৩৮০ জন আমেরিকান নাগরিক বর্তমানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে কর্মরত।’
ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিলে, আমরা এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াই, যেখানে হাজার হাজার আমেরিকান সক্রিয়ভাবে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা এমন এক সেনাবাহিনীর অংশ, যেটি গাজায় ২০ হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা করেছে। দ্য ইকোনমিস্ট-এর তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ইসরায়েলি সেনারা গাজায় ৭৭ হাজার থেকে ১ লাখ ৯ হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করেছে। এই সংখ্যা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ।তবে তাঁরা সেই পথটাতেই হাঁটছেন, যেটি আগে থেকেই রক্তস্নাত। ১৯৯৪ সালে বারুচ গোল্ডস্টেইন নামের একজন আমেরিকান জায়নবাদী হেবরনের একটি মসজিদে গুলি চালিয়ে ২৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছিলেন।
প্রতিবেদনে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় মারা যাওয়া আমেরিকান পরিবারগুলো সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। পরিবারগুলো ‘ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের প্রতি তীব্র অঙ্গীকার’ ব্যক্ত করেন। তিনটি পরিবারের মধ্যে দুটি পরিবার বসতিতে (পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের তৈরি করা বর্ণবাদী স্থাপনা) বাস করছে অথবা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ নিচ্ছে।
গাজায় গণহত্যামূলক অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত একজন সৈনিকের মা নিজেকে ‘ইসরায়েলিদের চেয়েও বেশি ইসরায়েলি বলে বর্ণনা করেছেন’। একজনের বাবা তাঁর পরিবারের আমেরিকা থেকে ইসরায়েলে যাত্রার কারণ হিসেবে বলেছেন, ‘আমরা জায়নবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছিলাম।’
আরও পড়ুনইসরায়েল এখন শেষ সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো১২ এপ্রিল ২০২৫প্রতিবেদনটিতে বিস্তৃতভাবে দেখানো হয়েছে সামাজিক সংস্থার মাধ্যমে কীভাবে আমেরিকান তরুণেরা চরম পন্থার দিকে হাঁটছেন। গাজায় নিহত একজন সেনা প্রতিবছর পেনসিলভানিয়ার জায়নবাদীদের গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে গিয়ে কাজ করতেন।
নিবন্ধটি পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে একটা শক্তিশালী মগজধোলাইয়ের প্রক্রিয়া এখানে আছে। সে কারণেই এসব পরিবার তাদের নিজেদের এবং সন্তানদের সিদ্ধান্তকে স্বাভাবিক, এমনকি বীরোচিত বলেই মনে করে।
এটা ঠিক যে বিদেশি সেনাবাহিনীতে আমেরিকানদের যোগদানের ঘটনাটি শুধু ইসরায়েলের ক্ষেত্রেই ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেতারমাধ্যম এনপিআর জানাচ্ছে, রাশিয়ার দখলদারির বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের যুদ্ধে শত শত আমেরিকান লড়ছে। তবে ‘শত শত’ আর ‘হাজার হাজার’ এক জিনিস নয়। আর দখলদারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আর দখলদারি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করা এক বিষয় নয়।
ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিলে, আমরা এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াই, যেখানে হাজার হাজার আমেরিকান সক্রিয়ভাবে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা এমন এক সেনাবাহিনীর অংশ, যেটি গাজায় ২০ হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা করেছে। দ্য ইকোনমিস্ট-এর তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ইসরায়েলি সেনারা গাজায় ৭৭ হাজার থেকে ১ লাখ ৯ হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করেছে। এই সংখ্যা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ।
ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সম্প্রসারণ হিসাবে দেখার একটা প্রবণতা আমেরিকান গণমাধ্যমে দেখা যায়। সম্প্রতি লেখক ও সংবাদিক তা-নাহিসি কোটসকে ফিলিস্তিন নিয়ে তাঁর লেখালেখির জন্য সিবিএস টেলিভিশনের উপস্থাপক ‘চরমপন্থী’ বলে উল্লেখ করেন। অবশ্য টেলিভিশনটি পরে জানিয়েছে, উপস্থাপকের বক্তব্য ও আচরণের সঙ্গে তারা একমত নয়।
মে মাসের আরেকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা দরকার। এসএসএনবিসিকে দেওয়া এক উত্তেজনাপূর্ণ সাক্ষাৎকারে পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি মোসাব আবু তাহা বলেন যে ইসরায়েলি সেনারা (নারী ও পুরুষ উভয়ই) গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছেন। এ সময় আবু তাহা নিজের পরিবারের নিহত সদস্যদের গল্প বলেন। ইসরায়েলি পাইলটরা তাঁদের হত্যা করে। সেই মানুষগুলোর মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। ৫০০ দিনের বেশি সময় ধরে সেই মরদেহগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির নিচে চাপা পড়ে আছে।
আবু তাহা, ইসরায়েলি সেনাদের বর্বরতার যে সুস্পষ্ট বিবরণ দিয়েছেন, এটি আমাদের সামনে একটি পথের কথাই বলে। আমরা আশা করতেই পারি যে আমেরিকান মা-বাবারা এই সাক্ষাৎকার দেখেছেন। হয়তো এ রকম আরও সাক্ষাৎকার তাঁরা দেখে থাকবেন। নিশ্চয়ই তাঁরা এর পর থেকে বলবেন, ‘না, আমরা চাই না, আমাদের সন্তানেরা চরম পন্থায় দীক্ষিত হয়ে নৃশংসতায় অংশ নিক।’
আহমেদ মুর লেখক এবং ফাউন্ডেশন ফর মিডল ইস্ট পিস-এর ফেলো
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত