হঠাৎ অবসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ
Published: 10th, June 2025 GMT
বয়স এখনো ৩০-ও হয়নি। দলে তাঁর গুরুত্বও কমেনি। তবে সামনে লম্বা সময় পড়ে থাকলেও ২৯ বছর বয়সেই থামার কথা বললেন নিকোলাস পুরান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান আজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নেতৃত্ব দেওয়া পুরান এমন সময়ে জাতীয় দল ছাড়লেন, যখন তিনিই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ও সবচেয়ে বেশি রানের মালিক।
২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন পুরান। গত ৯ বছরে কোনো টেস্ট খেলেননি, খেলেছেন শুধু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। ৬১ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটিও ২০২৩ সালের। এরপর থেকে শুধু টি-টোয়েন্টিই খেলে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টও খেলে যাচ্ছিলেন সমান তালে। সর্বশেষ ২০২৪ সালেই যেমন টি-টোয়েন্টি সংস্করণে সর্বোচ্চ ১৭০টি ছক্কা মেরেছেন তিনি।
পুরান সর্বশেষ খেলেছেন সদ্য সমাপ্ত আইপিএলে। এই টুর্নামেন্টে লক্ষ্ণৌর হয়ে ৫০০ রান করার পথে মেরেছেন আসরের সর্বোচ্চ ৪০ ছক্কা। আইপিএল শেষ হওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ইংল্যান্ড সিরিজ থাকলেও পুরান সেটিতে অংশ নেননি। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে এবার সিরিজ থেকে নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভবিষ্যতের সব খেলা থেকেও নাম সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।
এক ইনস্টাগ্রাম বার্তায় পুরান লিখেছেন, ‘মেরুন জার্সি গায়ে জড়ানো, জাতীয় সংগীতের সময় দাঁড়িয়ে থাকা, আর মাঠে নামলে প্রতিবার নিজের সবটুকু উজাড় করে দেওয়া.
পরে ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সিডব্লিউআই) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘নিকোলাস আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন, যা তার ক্যারিয়ারের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাল। একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় এবং ম্যাচের মোড় ঘোরানো তারকা হিসেবে, নিকোলাস ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা (১০৬টি) এবং সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (২,২৭৫ রান) হিসেবে বিদায় নিচ্ছেন। মাঠে তার পারফরম্যান্স এবং দলের ভেতরে তার প্রভাব ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলেছে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ক্লাসেনের অবসরের কারণ তাহলে এই
বয়স ৩৩, আছেন দারুণ ফর্মে, চাইলে আরও অনেক দিন দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারতেন। কিন্তু ২ জুন আচমকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন হাইনরিখ ক্লাসেন।
অবসরের কারণ জানাতে গিয়ে বেশির ভাগ ক্রিকেটার পরিবারকে আরও বেশি সময় দেওয়ার কথা বলেন। ক্লাসেনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে ‘পরিবারের ভালোর জন্য’ কথাটি উল্লেখ করেছেন।
এরপরও ক্লাসেনের আচমকা অবসর নিয়ে সমর্থকদের মনে খচখচানি ছিল। অনেকের ধারণা ছিল, ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা (সিএসএ) কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ দেওয়াতেই অভিমান করে দেশের হয়ে আর না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কিন্তু আসল কারণ উঠে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সাপ্তাহিক পত্রিকা রাপোর্টে। সংবাদমাধ্যমটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্লাসেন জানিয়েছেন, বেশ কিছু ধরে জাতীয় দলের হয়ে খেলা আর উপভোগ করছিলেন না। তাই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে আমি রব ওয়াল্টারের (দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক এবং নিউজিল্যান্ডের বর্তমান কোচ) সঙ্গে লম্বা সময় ধরে আলোচনা করেছি। আমি তাঁকে বলেছি যেভাবে চলছে, তাতে আমার ভালো লাগছে না। আমি খুব একটা উপভোগ করছি না...আমরা ভালোভাবেই আলোচনা করেছি এবং পরিকল্পনা ছিল ২০২৭ (ওয়ানডে) বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলব।’
ক্লাসেনের এই সিদ্ধান্তে কোচ ওয়াল্টার রাজি ছিলেন এবং তাঁকে আইপিএল, এসএ২০, দ্য হান্ড্রেড, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল), মেজর লিগ ক্রিকেটের (এমএলসি) মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় খেলতে দিতে চেয়েছিলেন।
এ বছর দ্য হান্ড্রেড হওয়ার কথা আগস্টে আর সিপিএল আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। ১০০ বলের টুর্নামেন্টে খেলার জন্য ম্যানচেস্টার অরিজিনালসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ক্লাসেন। ৩৩ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যানের সিপিএলেও দল পাওয়ার বড় সম্ভাবনা আছে।
সেই সময়েই দক্ষিণ আফ্রিকার দলের অস্ট্রেলিয়া সফর আছে। তাই দ্য হান্ড্রেড বা সিপিএলে খেললে ক্লাসেনকে রেখেই অস্ট্রেলিয়ায় যেতে হতো প্রোটিয়াদের। এ নিয়ে বোর্ড কর্মকর্তারা তাঁর ওপর নাখোশ ছিলেন।
শেষমেশ সাদা বলের প্রধান কোচ রব ওয়াল্টারই এপ্রিলের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের দায়িত্ব ছেড়েছেন। সম্প্রতি তাঁকে সব সংস্করণের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি)। ওয়াল্টারের চলে যাওয়াই নাকি ক্লাসেনের অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তকে সহজ করে দিয়েছে।
ওয়াল্টারের পদত্যাগের পর দক্ষিণ আফ্রিকার লাল বলের কোচ শুকরি কনরাডকে সব সংস্করণের দায়িত্ব দিয়েছে সিএসএ। অনেকে ভাবতে পারেন, ক্লাসেন যেহেতু টেস্ট দলের অংশ নন, তাই কনরাডের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো নয়। তাই তাঁকে সাদা বলেরও দায়িত্ব দেওয়ায় ক্লাসেন টি–টোয়েন্টি ও ওয়ানডে থেকেও সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন।
তবে ক্লাসেন নিজেই এই ভুল ভেঙে দিয়েছেন, ‘শুকরি কনরাড প্রোটিয়াদের সব সংস্করণের কোচ হওয়ার আগেই আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম। আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক খুবই ভালো।’
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান এনোচ এনকেওয়ের দাবি, সমাধান খুঁজতে তাঁরা ক্লাসেনের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু সমঝোতা হয়নি, ‘আমরা আলোচনার টেবিলে বসেছিলাম। উভয় পক্ষই সন্তুষ্ট হয়, আমরা এমন একটি জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলাম। এ ধরনের চেষ্টা আসলে দুই দিক থেকেই করতে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা হয়নি।’
আগামী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ এমএলসির তৃতীয় আসর শুরু হচ্ছে। টুর্নামেন্টে সিয়াটল ওরকাসের হয়ে খেলবেন ক্লাসেন।