পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিকে ঘিরে দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে উপচে পড়েছে পর্যটকদের ঢল। ৫ জুন থেকে ঈদের ছুটি শুরু হলেও মূলত ৮ জুন থেকে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। 

গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুন) সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলী, ইনানী, হিমছড়ি ও মেরিন ড্রাইভজুড়ে ছিল হাজারো মানুষের সরব উপস্থিতি।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, আগামী শুক্রবার (১৩ জুন) পর্যন্ত এমন জনসমাগম অব্যাহত থাকবে।

ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে আসা পর্যটক মাহবুব হাসান বলেন, ‘‘ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না। এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে এই সুযোগে কক্সবাজার এসেছি। সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সূর্যাস্ত আমাদের মুগ্ধ করেছে।’’

বনানী থেকে আসা আরেক পর্যটক রুমানা ফেরদৌস বলেন, ‘‘প্রচণ্ড গরমের মধ্যে একটু সাগরের ঠাণ্ডা বাতাস ও ঢেউয়ের শব্দ মনকে শান্ত করে। ভাবিনি এত ভিড় হবে, তবে আনন্দটাও অন্যরকম।’’

মিরপুরের বাসিন্দা চৌহান ইসলাম বলেন, ‘‘এত মানুষ দেখে শুরুতে একটু অস্বস্তি লেগেছিল। তবে সৈকতের সৌন্দর্য, বিচ বাইক, ঘোড়ার সওয়ারি, সব মিলিয়ে অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে।’’

সমুদ্রস্নান, বালিয়াড়িতে ছবি তোলা, বিচ বাইকে ঘোরাফেরা কিংবা রোদেলা বিকেলে সাগরের পাড়ে বসে সূর্যাস্ত উপভোগে মেতে আছেন হাজারো পর্যটক।

কক্সবাজারের তারকা হোটেলগুলোতে ৭০-৮৫ শতাংশ কক্ষ ইতোমধ্যেই বুকড রয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। সাধারণ গেস্ট হাউজ, কটেজ ও অ্যাপার্টমেন্টগুলোতেও পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) নিত্যানন্দ দাস বলেন, ‘‘অতীতের মতো এবারও পর্যটকদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন, ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে চলছে নজরদারি।’’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো.

শাহিদুল আলম বলেন, “পর্যটকদের নিরাপদ ও আনন্দদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে একাধিক মোবাইল টিম মাঠে কাজ করছে।”

এদিকে, মঙ্গলবার কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোন ও সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফাতেমা রহিম ভীনা।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, “ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫-৬ লাখ পর্যটকের আগমন হতে পারে, যার ফলে কয়েকশ কোটি টাকার পর্যটন বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”

ঢাকা/তারেক/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স কত র

এছাড়াও পড়ুন:

নাফ নদী আর সীমান্ত দেখতে কক্সবাজারের যে দুটি স্থানে পর্যটকের ভিড়

ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে এসেছেন কয়েক লাখ পর্যটক। সাগর, নদী, পাহাড় আর ঝরনা ঘুরে দেখার পর অনেকে ৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ হয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন নাফ নদীর তীরে। পাঁচ কিলোমিটার চওড়া নাফ নদীর ওপারে (পূর্ব দিকে) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। বর্তমানে এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির হাতে।

টেকনাফ সীমান্তের অন্তত ৮০ কিলোমিটারজুড়ে যেকোনো জায়গা থেকে নাফ নদী ও মিয়ানমার সীমান্ত দেখা যায়। তবে সবচেয়ে ভালো দেখা যায় চারটি পয়েন্ট থেকে—হ্নীলা ইউনিয়নের পাহাড়চূড়ার জাদিমুরা, টেকনাফ পৌরসভার নেটং বা দেবতার পাহাড়, চৌধুরীপাড়ার ট্রানজিট জেটি এবং শাহপরীর দ্বীপ জেটি। এর মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ এবং ট্রানজিট জেটিতে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও সেখানে ভিড় করছেন। জেটিতে উঠে নাফ নদী, প্যারা বন, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য এবং ওপারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর দেখার সুযোগ মিলছে।

গত সোমবার বিকেলে শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক শ নারী-পুরুষের ভিড়। বেশির ভাগই পর্যটক। তাঁরা ৫৫০ মিটার দীর্ঘ জেটির শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে রাখাইন রাজ্যের ছবি তুলছেন। জেটির এক-তৃতীয়াংশ নদীর পানিতে বিস্তৃত। সেখানে দাঁড়ালে মনে হয় সাগরের বুকে দাঁড়িয়ে আছেন।

কেউ সিঁড়িতে, কেউবা রেলিংয়ের পাশে বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এই জেটি দিয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা ট্রলার ও স্পিডবোটে সেন্ট মার্টিন যাতায়াত করেন।

জেটিতে কথা হয় ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ী আকমল হোসেনের সঙ্গে। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ছয়জন সদস্য নিয়ে এসেছেন তিনি। ঢাকায় একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। শুক্রবার ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছে শাহপরীর দ্বীপ ঘুরতে এসে জেটির খোঁজ পান।

আকমল হোসেন (৫২) বলেন, ‘নাফ নদীর এই সীমান্তটা এতই সুন্দর যে না এলে বুঝতাম না। পাশাপাশি শাহপরীর দ্বীপের ইতিহাসটাও জানা হলো। সম্রাট শাহ সুজা ও তাঁর স্ত্রী পরীবানুর নামের সঙ্গে মিলিয়ে দ্বীপের নামকরণ—বেশ চমকপ্রদ।’

কুমিল্লার মতিউল ইসলাম বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দেখতে চেয়েছিলাম; কিন্তু পর্যটকদের এখন ট্রলার ও স্পিডবোটে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। পত্রপত্রিকায় এত দিন রাখাইন রাজ্য দখল, মর্টার শেল পড়ার খবর পড়েছি। আজ সীমান্তটা চোখে দেখলাম।’

ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে জেটিতে আসেন আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘২৫ বছর আগে টেকনাফ এসেছিলাম। তখন এই জেটি ছিল না। এখন জেটিতে দাঁড়িয়ে মিয়ানমারের জলসীমা আর নাফ নদীর সৌন্দর্য দেখা যায়।’

কয়েকজন পর্যটক অভিযোগ করেন, জেটিতে উঠতে ১০ টাকার টিকিট কাটতে হলেও শৌচাগার নেই। এতে নারী ও শিশুদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

জেটির ইজারাদারের পক্ষে আদায়কারী নুরুল ইসলাম বলেন, জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে জেটি পরিচালনা করা হচ্ছে। সেন্ট মার্টিনগামী যাত্রী ও পর্যটকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা, ইজিবাইক, টমটম, মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার জন্য ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে ভিড় বাড়ছে। প্রথম দিন ৮০০ দর্শনার্থীর কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় হয়েছে। এখন দ্বিগুণ আদায় হচ্ছে।

টেকনাফের নাফনদীর শাহপরীর দ্বীপ জেটি। নাফনদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। সোমবার দুপুরে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে বাংলাদেশি অ্যাপ নেপালে জনপ্রিয়
  • মব সহিংসতা বন্ধ করুন
  • পাথর রানী বিচে মেঘ-বৃষ্টির খেলা
  • দেড় বছর পর পর্যটকে মুখর বগালেক 
  • ঈদের পঞ্চম দিনে পর্যটকে পূর্ণ কুয়াকাটা
  • সিলেটে প্রশাসনের ভূমিকা চাই
  • নাফ নদী আর সীমান্ত দেখতে কক্সবাজারের যে দুটি স্থানে পর্যটকের ভিড়
  • জাফলংয়ে এবার পর্যটকদের ওপর চোরাকারবারিদের হামলা
  • টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউসবোটে ‘হয়রানি’, পর্যটকদের সতর্ক থাকার আহ্বান প্রশাসনের