যে বাংলাদেশি অ্যাপ নেপালে জনপ্রিয়
Published: 12th, June 2025 GMT
ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ততক্ষণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি ফ্লাইট ৩৭১ আকাশে উঠে গেছে। গন্তব্য ‘ফেলুদার যত কাণ্ড’ কাঠমান্ডুতে। ১০০ মিনিটের বিমানভ্রমণ শেষে বিমান কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে গন্তব্য হোটেলে। নতুন শহরে ট্যাক্সি কীভাবে খোঁজ পাব, তা চিন্তার সময় বিনা মূল্যের ওয়াই–ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মুঠোফোনে পাঠাও অ্যাপের নোটিফিকেশন চলে আসে। নেপালে ২০১৮ সাল থেকে কাজ করছে বাংলাদেশের রাইডশেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও। সেই পাঠাও অ্যাপে ভরসা করে কল দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে সঞ্জয় সঞ্জু নামের এক চালক আমার অর্ডার রিসিভ করে চলে আসেন বিমানবন্দরের পার্কিংয়ে।
বাংলাদেশি রাইড-শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নেপালে বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছে। আমাদের পাঠাও রাইডার সঞ্জয়কে বিভিন্ন প্রশ্ন করি। চালকের নেপালি ভাষা ছাড়া কোনো ভাষা জানা নেই। সামান্য হিন্দি আর ইংরেজি ভাষা পুঁজি করে চলে আলাপ। সঞ্জয় জানান, কাঠমান্ডুর ব্যস্ত সড়ক থেকে শুরু করে পর্যটনকেন্দ্র নাগরকোট পর্যন্ত পাঠাও সেবা পাওয়া যায়। নেপালে আগত পর্যটকদের কাছেও পাঠাও একটি নির্ভরযোগ্য নাম। স্থানীয় লোকজন নিজেদের জন্য বিভিন্ন বাইক ও ছোট ছোট ট্যাক্সি ব্যবহার করে। পাঠাও অ্যাপ পর্যটক বা কাঠমান্ডু শহরে যাঁরা নতুন, তাঁদের যাতায়াত সহজ ও সাশ্রয়ী করেছে।
কাঠমান্ডুর রাস্তায় পাঠাওয়ের মোটরবাইক ও ট্যাক্সি দেখা যায়। পাঠাও অ্যাপ ব্যবহার করে নেপালিরা এখন খুব সহজেই চলাচল করতে পারছেন। সঞ্জয় সঞ্জু বলেন, ‘আমি কয়েক মাস ধরে পাঠাওয়ের মাধ্যমে ট্যাক্সি চালাই। প্রতিদিন ১০০০-১৫০০ নেপালি রুপি আয় করি। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় পর্যটকেরা পাঠাও অ্যাপের নিয়মিত ব্যবহারকারী। নিয়মিত বিমানবন্দর থেকে পর্যটকদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাই। বাইক ও কার সুবিধার পাশাপাশি কাঠমান্ডুতে ফুড ডেলিভারি ও পার্সেল সার্ভিসও চালু আছে।
নেপালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন লাখো পর্যটক। বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় ট্যাক্সি বা গাড়ি ভাড়া করা বিদেশি পর্যটকদের জন্য বেশ হ্যাপা। সেই সমস্যা দূর করছে বাংলাদেশি অ্যাপ পাঠাও। কাঠমান্ডু থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাগরকোট শহরে আমরা কথা বলি পূর্ণ লামা নামের এক চালকের সঙ্গে। তিনি সেখানকার কাবরে নামের এলাকায় থাকেন।
নেপালের ট্যাক্সিতে পাঠাওয়ের লোগো.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নাফ নদী আর সীমান্ত দেখতে কক্সবাজারের যে দুটি স্থানে পর্যটকের ভিড়
ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে এসেছেন কয়েক লাখ পর্যটক। সাগর, নদী, পাহাড় আর ঝরনা ঘুরে দেখার পর অনেকে ৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ হয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন নাফ নদীর তীরে। পাঁচ কিলোমিটার চওড়া নাফ নদীর ওপারে (পূর্ব দিকে) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। বর্তমানে এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির হাতে।
টেকনাফ সীমান্তের অন্তত ৮০ কিলোমিটারজুড়ে যেকোনো জায়গা থেকে নাফ নদী ও মিয়ানমার সীমান্ত দেখা যায়। তবে সবচেয়ে ভালো দেখা যায় চারটি পয়েন্ট থেকে—হ্নীলা ইউনিয়নের পাহাড়চূড়ার জাদিমুরা, টেকনাফ পৌরসভার নেটং বা দেবতার পাহাড়, চৌধুরীপাড়ার ট্রানজিট জেটি এবং শাহপরীর দ্বীপ জেটি। এর মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ এবং ট্রানজিট জেটিতে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও সেখানে ভিড় করছেন। জেটিতে উঠে নাফ নদী, প্যারা বন, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য এবং ওপারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর দেখার সুযোগ মিলছে।
গত সোমবার বিকেলে শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক শ নারী-পুরুষের ভিড়। বেশির ভাগই পর্যটক। তাঁরা ৫৫০ মিটার দীর্ঘ জেটির শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে রাখাইন রাজ্যের ছবি তুলছেন। জেটির এক-তৃতীয়াংশ নদীর পানিতে বিস্তৃত। সেখানে দাঁড়ালে মনে হয় সাগরের বুকে দাঁড়িয়ে আছেন।
কেউ সিঁড়িতে, কেউবা রেলিংয়ের পাশে বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এই জেটি দিয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা ট্রলার ও স্পিডবোটে সেন্ট মার্টিন যাতায়াত করেন।
জেটিতে কথা হয় ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ী আকমল হোসেনের সঙ্গে। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ছয়জন সদস্য নিয়ে এসেছেন তিনি। ঢাকায় একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। শুক্রবার ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছে শাহপরীর দ্বীপ ঘুরতে এসে জেটির খোঁজ পান।
আকমল হোসেন (৫২) বলেন, ‘নাফ নদীর এই সীমান্তটা এতই সুন্দর যে না এলে বুঝতাম না। পাশাপাশি শাহপরীর দ্বীপের ইতিহাসটাও জানা হলো। সম্রাট শাহ সুজা ও তাঁর স্ত্রী পরীবানুর নামের সঙ্গে মিলিয়ে দ্বীপের নামকরণ—বেশ চমকপ্রদ।’
কুমিল্লার মতিউল ইসলাম বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দেখতে চেয়েছিলাম; কিন্তু পর্যটকদের এখন ট্রলার ও স্পিডবোটে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। পত্রপত্রিকায় এত দিন রাখাইন রাজ্য দখল, মর্টার শেল পড়ার খবর পড়েছি। আজ সীমান্তটা চোখে দেখলাম।’
ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে জেটিতে আসেন আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘২৫ বছর আগে টেকনাফ এসেছিলাম। তখন এই জেটি ছিল না। এখন জেটিতে দাঁড়িয়ে মিয়ানমারের জলসীমা আর নাফ নদীর সৌন্দর্য দেখা যায়।’
কয়েকজন পর্যটক অভিযোগ করেন, জেটিতে উঠতে ১০ টাকার টিকিট কাটতে হলেও শৌচাগার নেই। এতে নারী ও শিশুদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
জেটির ইজারাদারের পক্ষে আদায়কারী নুরুল ইসলাম বলেন, জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে জেটি পরিচালনা করা হচ্ছে। সেন্ট মার্টিনগামী যাত্রী ও পর্যটকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা, ইজিবাইক, টমটম, মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার জন্য ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে ভিড় বাড়ছে। প্রথম দিন ৮০০ দর্শনার্থীর কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় হয়েছে। এখন দ্বিগুণ আদায় হচ্ছে।
টেকনাফের নাফনদীর শাহপরীর দ্বীপ জেটি। নাফনদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। সোমবার দুপুরে