কক্সবাজারে কোটি টাকার দিঘির সংস্কার যেভাবে জলে গেল
Published: 12th, June 2025 GMT
প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের ছয় বছরের মাথায় কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী তিনটি দিঘি আবারও বেহাল হয়ে পড়েছে। অত্যাধুনিক ফোয়ারা, আলোকায়ন, ওয়াকওয়ের মাধ্যমে নগরের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল লালদীঘি, গোলদীঘি ও বাজারঘাটা দীঘিকে। তবে এখন এসব দিঘির আশপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। দুর্গন্ধের জন্য কাছে যাওয়া দায়। পানি না থাকায় পাবলিক টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুকিয়ে গেছে দিঘিগুলোর পানিও।
শহরের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন দিঘির উন্নয়ন করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। ২০২০ সালের জুন মাসে দিঘি তিনটি উদ্বোধন করা হয়। এরপর দৃষ্টিনন্দন তিন দিঘিতে পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজনের সমাগম বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত দিঘির জলক্রীড়া (ওয়াটার শো) দর্শকদের বিমোহিত করত। তবে বর্তমানে সন্ধ্যার পর দিঘিগুলোতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। বখাটে, ছিনতাইকারী ও মাদকাসক্তদের আড্ডার জায়গা হয়ে উঠছে ওই এলাকাগুলো। চুরি হয়ে গেছে ওয়াটার লাইট শোর যন্ত্রপাতি ও সাউন্ড সিস্টেম, বৈদ্যুতিক বাতিসহ নানা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা জানান, দুই যুগ ধরে দিঘি তিনটি বেহাল পড়ে ছিল। প্রকল্পের আওতায় কউক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দিঘি তিনটি খনন করে আয়তন বাড়ায়। দিঘির চারপাশে নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন সীমানাদেয়াল, ওয়াকওয়ে, পাবলিক টয়লেট, ওয়াটার শো, সবুজায়ন ও আলোকসজ্জা।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জুনাঈদ বলেন, উদ্বোধনের পর দুই বছর দিঘিগুলোর কার্যক্রম ঠিকভাবে চললেও ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে অযত্ন–অবহেলায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে নানা অবকাঠামো। ইতিমধ্যে দিঘির সৌন্দর্যবর্ধনের নানা অবকাঠামো চুরি হয়ে গেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর দিঘি তিনটির অবকাঠামোর বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরির হিড়িক পড়ে। তদারকি না থাকায় দিঘিগুলো পরিণত হয় ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে।
কয়েক মাস আগে কউকের নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো.
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা বলেন, সম্প্রতি শহরের তিনটি দিঘি পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করে কউক। হস্তান্তরের আগেই দিঘির মূল্যবান যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে অনেক কিছু। দিঘিগুলো সংস্কারের জন্য প্রকৌশলী নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, নিরাপত্তা এবং মালামাল চুরি ঠেকাতে সম্প্রতি চারজন আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দিঘিগুলো সংস্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।
কক্সবাজার শহরের লালদীঘির অবস্থাও এখন এমন বেহাল। সম্প্রতি তোলাউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীতে ছিনতাইকারীর ছুরিতে দু’জন আহত
রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে দু’জন আহত হয়েছেন। তারা হলেন– মুরগি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ও রিকশাচালক মো. মিঠু। শুক্রবার ভোরে ওয়ারী ও বৃহস্পতিবার রাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, আহতদের মধ্যে ওয়ারী থেকে আসা সিরাজুল ইসলামের হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। আর মোহাম্মদপুরের মিঠুর পেটে গুরুতর জখম রয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সিরাজুলের ছেলে আবু বক্কর হাসপাতালে জানান, তাঁর বাবা ভোর ৫টার দিকে যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের বাসা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কাপ্তান বাজারে যাওয়ার পথে টিকাটুলী রেলগেট এলাকায় তিন ছিনতাইকারী তাঁর গতিরোধ করে। টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাকালে সিরাজুল বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা তাঁর হাতে-পায়ে ছুরিকাঘাত করে সঙ্গে থাকা ৭০ হাজার টাকা কেড়ে নেয়। খবর পেয়ে স্বজন ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
অপর ঘটনায় আহত রিকশাচালক মিঠুকে হাসপাতালে নিয়ে যান নিরাপত্তাকর্মী মো. ফখরুদ্দিন। তিনি জানান, মোহাম্মদপুরে থাকেন মিঠু। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তাজমহল রোডে রিকশা চালিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন ছিনতাইকারী তাঁর অটোরিকশা থামিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়। বাধা দিলে মিঠুর পেটে ও পায়ে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। এর পর তাঁর কাছে থাকা ২ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। মিঠুর চিৎকার শুনে ফখরুদ্দিন এগিয়ে যান। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় ঢামেক হাসপাতালে।