প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের ছয় বছরের মাথায় কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী তিনটি দিঘি আবারও বেহাল হয়ে পড়েছে। অত্যাধুনিক ফোয়ারা, আলোকায়ন, ওয়াকওয়ের মাধ্যমে নগরের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল লালদীঘি, গোলদীঘি ও বাজারঘাটা দীঘিকে। তবে এখন এসব দিঘির আশপাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। দুর্গন্ধের জন্য কাছে যাওয়া দায়। পানি না থাকায় পাবলিক টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুকিয়ে গেছে দিঘিগুলোর পানিও।

শহরের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন দিঘির উন্নয়ন করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। ২০২০ সালের জুন মাসে দিঘি তিনটি উদ্বোধন করা হয়। এরপর দৃষ্টিনন্দন তিন দিঘিতে পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজনের সমাগম বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত দিঘির জলক্রীড়া (ওয়াটার শো) দর্শকদের বিমোহিত করত। তবে বর্তমানে সন্ধ্যার পর দিঘিগুলোতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। বখাটে, ছিনতাইকারী ও মাদকাসক্তদের আড্ডার জায়গা হয়ে উঠছে ওই এলাকাগুলো। চুরি হয়ে গেছে ওয়াটার লাইট শোর যন্ত্রপাতি ও সাউন্ড সিস্টেম, বৈদ্যুতিক বাতিসহ নানা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা জানান, দুই যুগ ধরে দিঘি তিনটি বেহাল পড়ে ছিল। প্রকল্পের আওতায় কউক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দিঘি তিনটি খনন করে আয়তন বাড়ায়। দিঘির চারপাশে নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন সীমানাদেয়াল, ওয়াকওয়ে, পাবলিক টয়লেট, ওয়াটার শো, সবুজায়ন ও আলোকসজ্জা।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জুনাঈদ বলেন, উদ্বোধনের পর দুই বছর দিঘিগুলোর কার্যক্রম ঠিকভাবে চললেও ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে অযত্ন–অবহেলায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে নানা অবকাঠামো। ইতিমধ্যে দিঘির সৌন্দর্যবর্ধনের নানা অবকাঠামো চুরি হয়ে গেছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর দিঘি তিনটির অবকাঠামোর বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরির হিড়িক পড়ে। তদারকি না থাকায় দিঘিগুলো পরিণত হয় ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে।

কয়েক মাস আগে কউকের নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো.

সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, কউকের অর্থায়নে সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন করা দিঘি তিনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু ৯ মাস ধরে পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা (অপসারণ) দায়িত্বে না থাকায় দিঘিগুলো অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা বলেন, সম্প্রতি শহরের তিনটি দিঘি পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করে কউক। হস্তান্তরের আগেই দিঘির মূল্যবান যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে অনেক কিছু। দিঘিগুলো সংস্কারের জন্য প্রকৌশলী নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, নিরাপত্তা এবং মালামাল চুরি ঠেকাতে সম্প্রতি চারজন আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দিঘিগুলো সংস্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।

কক্সবাজার শহরের লালদীঘির অবস্থাও এখন এমন বেহাল। সম্প্রতি তোলা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শহর র প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

সেই আছিয়ার পরিবারকে গরু ও ঘর দিল জামায়াত

মাগুরায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে মারা যাওয়া আলোচিত শিশু আছিয়ার পরিবারকে দুটি গরু ও একটি গোয়ালঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে আছিয়ার পরিবারকে এ উপহার দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামে আছিয়ার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উপহার হস্তান্তর করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।

এ সময় জেলা জামায়াতের আমির এম বি বাকের, সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আব্দুল মতিনসহ স্থানীয় এবং জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 

অপারেশনের পর শিশুর মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন, থানায় মামলা

গত ১৫ মার্চ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আছিয়ার বাড়িতে যান। তিনি শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত বিচার চান। সে সময় আছিয়ার পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে একটি গোয়াল ঘর এবং দুটি গরু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জামায়াতের আমির। 

আট বয়সী আছিয়া মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ ওঠে। গত ৬ মার্চ অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। অবস্থার অবনতি হলে মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেকে সেদিন সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়া হয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দুই দিন পর ৮ মার্চ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আছিয়ার।

ঢাকা/শাহীন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ