নিরাপত্তাঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের অপরিহার্য নয়, এমন কর্মী ও তাঁদের স্বজনদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গতকাল বুধবার মার্কিন সরকারের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

ঠিক কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা স্পষ্ট করেননি। তবে সম্প্রতি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ায় এ অঞ্চলের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিটি দূতাবাসের কর্মীসংখ্যা নিয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা করি। সর্বশেষ বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আমরা ইরাকে আমাদের মিশনের পরিসর সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

গতকাল এক পডকাস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কোনো সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।

গতকাল মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া সাক্ষ্যে হেগসেথ বলেন, তিনি এমন ‘অনেক ইঙ্গিত’ পেয়েছেন, যা থেকে তাঁর মনে হয়েছে, ইরান ‘পারমাণবিক অস্ত্রের মতো’ কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্র চায়, ইরান যেন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করে। কারণ, তা পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহার করা হতে পারে, এমন আশঙ্কা তাদের। এদিকে সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধের বিনিময়ে তেহরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াশিংটন।

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ বলেছেন, আলোচনা ব্যর্থ হলে ও ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে হামলার আদেশ দিলে এই অঞ্চলে (মধ্যপ্রাচ্যে) অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলার মাধ্যমে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

রয়টার্সের খবরে জানা গেছে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশে মোতায়েন মার্কিন সামরিক কর্মীদের পরিবারকে স্বেচ্ছায় প্রস্থানের অনুমতি দিয়েছেন।

গতকাল মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া সাক্ষ্যে হেগসেথ বলেন, তিনি এমন ‘অনেক ইঙ্গিত’ পেয়েছেন, যা থেকে তাঁর মনে হয়েছে, ইরান ‘পারমাণবিক অস্ত্রের মতো’ কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করছে।

এদিকে ইরানের দাবি, বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এবং কোনো পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করছে না।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কোনো সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

একই দিন যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার কারণে সমুদ্রপথে জাহাজের চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের খবর প্রকাশ হতে না হতেই তেলের দাম প্রাথমিকভাবে ৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কারণ, আঞ্চলিক নিরাপত্তাহীনতা সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইরাকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘আরও দ্রুত মুছে ফেলব’, ইরানকে আবার হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে আবারও হামলার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ইরানের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে এত দ্রুত মুছে ফেলার হুমকি দিয়েছেন যে কেউ আঙুল তোলার আগে সেটা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

গতকাল সোমবার স্কটল্যান্ডে এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তেহরান বলেছে, তারা বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে এ বছর তেহরানের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনা চলছিল। জুনে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর ওই আলোচনা ভেস্তে যায়।

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি আলোচনার আগে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে।

এ প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ইরান খুব খারাপ সংকেত দিচ্ছে, খুবই বাজে বার্তা পাঠাচ্ছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও উপস্থিত ছিলেন।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তাদের (ইরান) এটা করা উচিত নয়। আমরা তাদের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি। তারা আবার এটা শুরু করতে পারে। যদি তারা করে, আপনি আঙুল তোলার আগেই আমরা সেটা নিশ্চিহ্ন করে দেব। আমরা এটা আনন্দের সঙ্গেই করব—খোলাখুলিভাবে ও নির্দ্বিধায়।’

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে একটি আলোচনার আগে দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার আছে। এ আলোচনাকে ইরানি কর্মকর্তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ, খোলামেলা ও বিস্তারিত’ বলে বর্ণনা করেছেন।

আমি এখান থেকে ‘স্বৈরশাসক’ খামেনিকে স্পষ্ট করে বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।ইসরায়েল কাৎজ, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

গত জুনে ইরানের তিনটি বড় পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এটা ছিল পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তেহরানের প্রথম বড় কোনো কূটনৈতিক আলোচনা। তবে আলোচনা থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি বা সাফল্যের ঘোষণা আসেনি।

ট্রাম্পের গতকালের বক্তব্যের পর আরাগচি বলেন, ইরান কখনোই হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো ভাষায় সাড়া দেবে না। তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, চিকিৎসা ও বেসামরিক কারণে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রয়োজন। যদি ইরান আবারও হামলার শিকার হয়, তাহলে আরও দৃঢ়ভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে তেহরান দ্বিধা করবে না।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আবার যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

গত সপ্তাহে আল–জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও বলেছিলেন, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করবে না। তবে আলোচনার দরজা খোলা রাখবে। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে, সেটি স্থায়ী হওয়া নিয়ে তিনি খুব বেশি আশাবাদী নন বলেও জানান তিনি।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ইরানে আবারও হামলা শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। এর মধ্যে দেশটির নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে হামলার পরিকল্পনাও রয়েছে।

আরও পড়ুনইসরায়েল কি ইরানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে২৫ জুলাই ২০২৫

গত রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে একটি বার্তা পাঠাতে চান। তাঁর বরাত দিয়ে ইসরায়েলের একটি পত্রিকায় বলা হয়, ‘আমি এখান থেকে “স্বৈরশাসক” খামেনিকে স্পষ্ট করে একটি বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আবার যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

আরও পড়ুনখামেনিকে হত্যার হুমকি দিলেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী: আনাদোলু২৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আরও দ্রুত মুছে ফেলব’, ইরানকে আবার হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প