ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে
Published: 12th, June 2025 GMT
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। যদি দেশের ভালো চান তাহলে লন্ডন থেকে ফিরে এসে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।”
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) খুলনা প্রেসক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’ এ তিনি এ কথা বলেন।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “জাপান সফরকালে ড.
আরো পড়ুন:
শরীয়তপুরে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৫
নিয়ম রক্ষার বাজেট: এবি পার্টি
আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ আমরা চাই না। কিন্তু তারা যে ধরনের গণহত্যা চালিয়েছে, এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কথা বলার নৈতিক অধিকার তারা হারিয়েছে। দ্রুত নির্বাচন না হলে পতিত শক্তি সামনে আসার সুযোগ পাবে।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। দেশে ভয়ের রাজত্ব তৈরি করেছিল। দলীয়করণ এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যে মানুষ কথা বলতেও ভয় পেত।”
লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বল এখন সরকারের কোর্টে। সরকারই ঠিক করবে কবে নির্বাচন দিবেন। তবে, দু-একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া সব দলই চায় ডিসেম্বেরের মধ্যে নির্বাচন হোক।”
এপ্রিলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এপ্রিলে রোজা, পরীক্ষা, আবহাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় রয়েছে। ফলে নির্বাচন আরো দূরে চলে যাবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগের থেকে নির্বাচন খরচ বাড়িয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।”
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “২৪ এর আন্দোলনে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ভোটাধিকার প্রয়োগ ও বৈষম্য দূর করা। কাজেই সংস্কার কাজে রাজনৈতিক দলগুলো যতটুকু ঐক্যমত হয়েছে-সেগুলোকে ঠিক রেখে বাকিটা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। জনগণের রায়ে নির্বাচিত সরকারই বাকি সংস্কার এগিয়ে নেবে।”
তিনি বলেন, “আমরা রাখাইনদের করিডোর, বন্দর বিদেশিদের লিজ দেব না। ভূ-রাজনৈতিক কারণে আধিপত্যবাদীরা এটি করতে চাইলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কথা বলব।”
করিডর প্রদান প্রিন্স আরো বলেন, “আপনি নতুন যে সংকট তৈরি করছেন তা নিরসন আপনাকেই করতে হবে। করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার প্রতিবাদে আগামী ২৭ ও ২৮ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচির পরিকল্পনার কথা,” জানান তিনি।
এ সময় সিপিবি নেতা এস এ রশীদ, খুলনা মহানগর সিপিবির সভাপতি এইচ এম শাহাদাত, সাধারণ সম্পাদক নিত্যানন্দ ঢালী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দল র জন ত ক ন স বল অন ষ ঠ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।