উত্ত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ জরুরি
Published: 13th, June 2025 GMT
আমরা এ কোন সমাজে বাস করছি? নারীদের হেনস্তা করার প্রতিবাদ করার কারণে সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনা ঘটছে। কোথাও কন্যার নিরাপত্তা রক্ষা করতে গিয়ে বাবাকে খুন হতে হচ্ছে, আবার কোথাও মেয়েকে রক্ষা করতে গিয়ে বাবা–মা দুজনকেই গুরুতর আহত হতে হচ্ছে।
নিকট অতীতে প্রথম আলোয় নেত্রকোনা, রাজশাহী ও বগুড়ার যে তিনটি সহিংসতার খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা খুবই আতঙ্কের। মঙ্গলবার রাতে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় নারীদের উদ্দেশে অশ্লীল গান গাওয়াসহ উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় হামলা করা হয়েছে। এতে একজন নিহত ও ছয়জন আহত হন।
গত ১৬ মে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় স্নাতকের (সম্মান) এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তাঁর মা-বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছেন ধুনট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল মুনছুর আহম্মেদের ছেলে নাফিজ ফয়সাল (আকাশ)। এর প্রতিবাদ করলে নাফিস দলবল নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেন।
রাজশাহীতে নিহত আকরাম আলীর স্ত্রী মুক্তি বেগমের ভাষ্য অনুযায়ী, নান্টু নামের এক প্রতিবেশী স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর করতেন। একদিন তাঁর স্বামী ওই গৃহবধূকে রক্ষা করতে গেলে নান্টুর গায়ে সামান্য আঘাত লাগে। এর পর থেকে নান্টু তাঁর মেয়েকে উক্ত্যক্ত করতেন। এর প্রতিবাদ করায় তাঁর স্বামীকে খুন করা হয়েছে।
১২ মে মুন্সিগঞ্জে যাত্রীদের বিরুদ্ধে অনৈতিক আচরণের অভিযোগে মুন্সিগঞ্জ ঘাটে একটি লঞ্চে ভাঙচুর চালান স্থানীয় লোকজন। ওই সময় লঞ্চের দুই তরুণীকে শত শত মানুষের সামনে মারধর করেন নেহাল আহমেদ ওরফে জিহাদ নামের এক যুবক। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে তিনি জামিনও পেয়ে যান।
বিগত কয়েক মাসে নারীর প্রতি সহিংসতার আরও বহু ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শুধু গত এপ্রিলে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৮৯টি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর ৩২ মাসের মধ্যে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। এ ছাড়া ২০২৪ সালের শেষ চার মাসের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে ১ হাজার ২১৮টি। ২০২৪ সালের শেষ চার মাসে ৫ হাজার ৭৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৩-তে।
যেসব ঘটনায় মামলা হয়, থানা–পুলিশের কাছে কেবল সেই তথ্য থাকে। এর বাইরেও অনেক অঘটন ঘটে এবং অনেক ভুক্তভোগী ভয়ে থানা–পুলিশের কাছেও যেতে চান না। এসব অপরাধ যাঁরা ঘটান, তাঁদের বেশির ভাগই সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া বা শাস্তি পাওয়ার উদাহরণ খুবই কম। ফলে তাঁরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
দেশে আইন রক্ষায় এতগুলো বাহিনী আছে। চলছে যৌথ বাহিনীর অভিযানও। তারপরও নারীর প্রতি নির্যাতন–হেনস্তার ঘটনা মহামারি আকার নিল কীভাবে? নারীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও সক্রিয় ভূমিকা নেবে, কোনো অপরাধী আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যাতে বের না হতে পারে, সেটাই প্রত্যাশিত। আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্ত সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও সময়ের দাবি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
আজ শ্রাবণের ১৬ তারিখ। প্রকৃতির নিয়মে এ মাসে বৃষ্টি বেশি ঝরে। আজও ঢাকার আকাশ মেঘলা। বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ঝুম বৃষ্টি কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। তবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রয়েছে ভূমিধসের ঝুঁকি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অতিভারী বৃষ্টির কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ বাস, রিকশা ও সাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী ও সমুদ্রবন্দর এলাকায় অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শনিবারও সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অধিকাংশ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগে অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রবিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার ৬৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা/ইভা