গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় অবস্থিত বৈদ্যুতিক তার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিবিএস কেব্‌লস লিমিটেডের শ্রমিকেরা ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে তিন শতাধিক শ্রমিক কারখানার সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের দাবিগুলো উপস্থাপন করেন।

শ্রমিকদের অভিযোগ, গত পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর ১৮ জন ও ঈদুল আজহার পর ১২ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। ছুটিতে থাকার সময় তাঁরা চাকরিচ্যুত হওয়ার খবর পান। শ্রমিকদের দাবি, শ্রম আইন লঙ্ঘন করে এই ছাঁটাই করা হয়েছে। ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে অন্য শ্রমিকেরাও আন্দোলনে অংশ নেন। শ্রমিকেরা জানান, ছাঁটাইয়ের ঘটনায় শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

আন্দোলনরত শ্রমিক মো.

কাউসার প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা ওই কারখানায় চাকরি করছেন। তাঁদের বেতন বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফা অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পরে তাঁরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি জানতে পেরে কারখানার কর্তৃপক্ষ শ্রম আইন লঙ্ঘন করে হঠাৎ তাঁদের বরখাস্ত করে। এরপর তাঁরা আন্দোলন শুরু করলে কারখানার অন্য শ্রমিকেরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।

মো. আকরাম হোসেন নামের অপর শ্রমিক বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করে দাবি পূরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। তাঁরা অনতিবিলম্বে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে সমাধান চান।

শ্রমিকদের ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের অনুমতি, নিয়োগপত্র প্রদান, স্থায়ী আইডি কার্ড প্রদান, প্রতিবছর ইনক্রিমেন্ট, প্রোডাকশন বোনাস, হাজিরা বোনাস, প্রতিবছরের অবশিষ্ট ছুটির অর্থ প্রদান, শ্রম আইন লঙ্ঘন করে কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই না করা, নাইট বিল প্রদান, মেডিকেল ছুটি, শ্রমিকের সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ।

এ বিষয়ে কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্ল্যান্ট) মো. আমিনুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন কেটে দেন।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল বারিক বলেন, ‘মালিক পক্ষকে ডাকা হয়েছে। তারা এলে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ