বিএনপি নেতার হামলায় সনাতনীদের অনুষ্ঠান পণ্ডের অভিযোগ
Published: 14th, June 2025 GMT
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলীতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী খেতুরী ধামে হিন্দু ও আদিবাসী সনাতনী সম্প্রদায়ের মিলনমেলা ও আলোচনা সভা স্থানীয় বিএনপির এক নেতার হামলায় পণ্ড হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে বলে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উপজেলা কমিটি।
রাজশাহী মহানগর ও জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান কমিটির আহ্বায়ক উপেন্দ্রনাথ মণ্ডল।
তিনি জানান, শুক্রবার প্রায় ১২ হাজার ভক্তের জন্য মহাপ্রসাদ বিতরণের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি থাকার কথা ছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের। কিন্তু অনুষ্ঠানের আগের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এহসানুল কবির টুকু তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সেখানে হামলা করেন। তারা মন্দিরে তালা মেরে অনুষ্ঠান আয়োজনের কাজ বন্ধ করে দেন। তারা খেতুরী ধামের ব্যবস্থাপক গোবিন্দ চন্দ্র পাল ও হিন্দু আদিবাসী সনাতনের সদস্য সহদেব কুমার পান্নাকে মারধর করে তাঁকে মন্দির থেকে বের করে দেন। এ সময় ভয়ে মন্দির থেকে চলে যান ভক্তরা। ফলে নিরাপত্তাজনিত কারণে হিন্দু ও আদিবাসী সনাতনী সম্প্রদায়ের মিলনমেলা অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়।
উপেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, এ ঘটনার পর তারা ভীত হয়ে পড়েন। ঝামেলার ভয়ে থানায় মামলা করেননি। তবে জেলা বিএনপির কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা এহসানুল কবির টুকু সমকালকে বলেন, ‘হামলার মতো কোনো ঘটনাই সেখানে ঘটেনি। আমার বিরুদ্ধে তারা এমন অভিযোগ করছেন জানি না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট রাজশাহী জেলার সভাপতি প্রণয় কুমার দাস (আলোক মাস্টার), বৈষ্ণব সৎ সংঘ গোদাগাড়ী উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সহদেব কুমার পান্না, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উপজেলা কমিটির সদস্য মলিন সরদার প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ অন ষ ঠ ন ব এনপ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।