ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সেতুর পিলারে ধাক্কা খেয়ে মেঘনা নদীতে তলিয়ে গেছে একটি বালুবাহী বাল্কহেড। গতকাল শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দুর্ঘটনার শিকার হয় এমভি রিফাত-২ নামের বাল্কহেডটি। ঘটনার পরপরই শ্রমিকরা তীরে উঠে যান। বাল্কহেডের এক অংশীদার জানিয়েছেন, এটি তাদের নৌযানের দ্বিতীয় যাত্রা (ট্রিপ) ছিল।
এ দুর্ঘটনার বিষয়ে কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন, অন্য একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এমভি রিফাত-২ শুরুতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুতে ধাক্কা খায়। পরে দুটি রেলসেতু পার হয়ে মাঝখানে ভেঙে ডুবে যায়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বিকট শব্দ পেয়ে তারা সড়ক সেতুতে বাল্কহেডটি ধাক্কা খেতে দেখেন। 
দুর্ঘটনার সময় আশুগঞ্জ প্রান্তে নোঙর করা এমভি মেঘনা-২৫ জাহাজে ছিলেন শ্রমিক মো.

মোজাম্মেল হাওলাদার। তিনি বলেন, ভোরে সেতুর পিলারে ধাক্কা লেগে বাল্কহেডটি ডুবতে ডুবতে তাদের জাহাজের দিকে আসছিল। এ সময় জাহাজের মাস্টার জরুরি ঘণ্টা বাজিয়ে সবাইকে জাগিয়ে তোলেন। তারা দেখতে পান, বাল্কহেডটি তাদের জাহাজের পেছনে নদীতে ডুবে যাচ্ছে। এ সময় সেখান থেকে কয়েকজন শ্রমিক তাদের জাহাজে উঠে প্রাণ বাঁচান। এর আগে আরও তিন-চারজন শ্রমিককে ওই বাল্কহেড থেকে রেলসেতুর পিলারে উঠতে দেখেন। পরে অন্য নৌযান তাদের উদ্ধার করে। 
একই জাহাজের মাস্টার মো. নুরুন্নবী জানান, ফজরের নামাজ পড়তে অজু করার সময় বিকট শব্দ পান। তখন তিনি বাল্কহেডটিকে সেতুর পিলারে 
ধাক্কা খেয়ে প্রায় ডুবতে ডুবতে তাদের জাহাজের দিকে আসতে দেখেন। তখন জরুরি ভিত্তিতে সবার ঘুম ভাঙান। 
আশুগঞ্জ প্রান্ত থেকেই দুর্ঘটনা দেখেন সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাকের চালক স্বপন মিয়া। তাঁর ভাষ্য, পাথরবোঝাই একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় ওই বাল্কহেডটি চলতে থাকে। সেটি সেতুর নিচে দিয়ে যাওয়ার সময় পুরোনো রেলসেতুর ৩ নম্বর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা খায়। পরে সেটির মাঝখানে ফাটল দেখা দেয়। এ সময় বাল্কহেডের চালকসহ তিনজনকে নতুন রেলসেতুর পিলারে উঠতে দেখেন। 
ভৈরব নৌ থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা কাউকে পাইনি। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের খবর দেওয়ার পর পুলিশ নিয়ে তারা সেখানে গেছেন। 
বাল্কহেডের এক অংশীদার শনিবার সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, অপর এক আত্মীয়কে নিয়ে কিছুদিন আগেই ১ কোটি ৫ লাখ টাকায় সেটি কিনেছেন। এটি ছিল তাদের দ্বিতীয় যাত্রা (ট্রিপ)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল বাজার থেকে সিলেকশন বালু নিয়ে যাচ্ছিল সেটি। ডুবে যাওয়ার পর থেকে চালক বা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তাই বালুর গন্তব্য জানাতে পারছেন না। অপর অংশীদারের ভাষ্য, কেনার পর একজনের কাছে বাল্কহেডটি ভাড়া দিয়েছেন তারা। তাই কোথায় যাচ্ছিল, তা জানেন না। 
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ও ভৈরববাজার-আশুগঞ্জ নদীবন্দরের কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আহম্মেদ জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাল্কহেডের ডুবে যাওয়া জায়গা চিহ্নিত করেছেন। এটি নদীর প্রায় কিনারে। তাই নৌযান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে না। বাল্কহেডের মালিক বা তাদের কোনো প্রতিনিধি বিকেল পর্যন্ত 
যোগাযোগ করেননি। তিনি আরও বলেন, ঈদের পর সাত দিন নদীতে এসব নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ 
করা হয়েছিল। শনিবার ছিল এ নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন। ওই বাল্কহেডটি রাতের বেলায় পণ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ দ র ঘটন র লস ত ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

দৌলতদিয়ায় ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে পন্টুনের কবজা, যানবাহন পারাপার ব্যাহত

তীব্র স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ৩ নম্বর পন্টুনের কবজা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ঘাটটি। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

বর্তমানে দৌলতদিয়ায় শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু আছে। এতে যানবাহন পারাপারে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে এবং সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় ও ঘাট-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে পদ্মায় তীব্র স্রোত দেখা দেয়। সন্ধ্যার পর এর তীব্রতা আরও বাড়ে। রাত ১১টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা রো রো ফেরি শাহ পরান দৌলতদিয়ায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারায় ফেরিটি প্রচণ্ড বেগে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুনে ধাক্কা দিলে কবজা ভেঙে যায়। এর পর থেকে ঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর আগে ২৩ আগস্ট থেকে তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটও বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চারটি ঘাটের মধ্যে কেবল ৪ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী পরিবহন এবং জরুরি কিছু পণ্যবাহী গাড়ি পার করা হচ্ছে। তবে সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে।

দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্টে (৩ নম্বর ঘাট) দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিসির নিরাপত্তা পরিদর্শক ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া বলেন, গতকাল রাতে ফেরি শাহ পরান ঘাটে ভেড়ার সময় প্রচণ্ড ধাক্কায় পন্টুনের কবজা ভেঙে যায়। তখন থেকে ঘাটটি বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কয়েক দিন ধরে সড়ক অবরোধ করা হচ্ছে। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে অনেক গাড়ি দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এ কারণেও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় গাড়ির চাপ পড়ছে। আজ মঙ্গলবার সকালে দৌলতদিয়া প্রান্তে প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা গাড়ির লাইন তৈরি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির লাইন আরও লম্বা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় চালকসহ যাত্রীদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সৌহার্দ্য পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন বলেন, ‘শুধু একটি ঘাট চালু থাকায় যানবাহন স্বাভাবিকভাবে পার হতে পারছে না। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী গাড়ি আটকে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে। আমাদের চারটি যাত্রীবাহী বাস চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে আছে। বাসগুলো ফেরিতে উঠতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লাগছে।’

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে অনেক বেশি সময় লাগছে। গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন শুধু ৪ নম্বর ঘাট চালু রয়েছে। যাত্রীবাহী বাস ও কিছু জরুরি গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হচ্ছে। সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি আপাতত পার করা যাচ্ছে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৭ জনকে বেলার চিঠি, বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধের অনুরোধ
  • ভাঙ্গায় আন্দোলন: দৌলতদিয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি
  • দৌলতদিয়ায় ফেরির ধাক্কায় ভেঙে গেছে পন্টুনের কবজা, যানবাহন পারাপার ব্যাহত