ইসি রেফারির ভূমিকায়, যারা খেলবে খেলুক, জিতবে জিতুক: সিইসি
Published: 15th, June 2025 GMT
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, ইসি নির্বাচনে রেফারির ভূমিকায় থাকবে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ইসি বদ্ধপরিকর।
আজ রোববার সকালে নির্বাচন ভবনে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদ–পরবর্তী মতমিনিময় সভায় সিইসি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আমরা রেফারির ভূমিকায়, আমরা রেফারির মতো কাজ করব। যারা খেলবে খেলুক, যারা জিতবে জিতুক। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব হবে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেওয়া। সেটা করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।’
ইসির শপথ হবে সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া—এমনটা উল্লেখ করে কর্মকর্তাদের সিইসি বলেন, ‘আজকের শপথ হবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার, কোনো দলের জন্য লেজুড়বৃত্তি না করার, আইন অনুযায়ী ও ন্যায়সংগতভাবে কাজ করার।’
সিইসি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বনেতাদের বলছেন, ‘আমরা একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চাই।’ সিইসি বলেন, ইসির ওপর আস্থা আছে বলেই প্রধান উপদেষ্টা এমন ঘোষণা দিচ্ছেন।
নির্বাচনসংক্রান্ত প্রস্তুতি এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘অনেকগুলো আমরা এগিয়ে নিয়ে গেছি, যত কাজ বাকি আছে, তা সবাইকে মিলে করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
১০ দিন ছুটির পরও কর্মস্থলে অনুপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারী
রোববার সকাল ১০টা ৩২ মিনিট। ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে এমন সময়ে সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক কাজে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর কক্ষে ঝুলছে তালা। দপ্তরের অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর বজলুর রুশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি যেখানে নিজে উপস্থিত আছেন, দেখতে পাচ্ছেন। আমার বক্তব্য দেওয়ার কী আছে?’
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে গিয়ে পাওয়া যায় একই চিত্র। নির্বাহী প্রকৌশলী বসেননি তাঁর চেয়ারে। সেখানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এলেও তারা ‘স্যারদের’ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে নারাজ। নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইল ফোনে কল করলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কুড়িগ্রামে ঈদুল আজহার ১০ দিন ছুটি শেষে এভাবে সময়মতো উপস্থিত হননি বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
কোনো কোনো দপ্তরে দুই-চারজন কর্মচারী উপস্থিত হলেও অনেক সরকারি দপ্তর ছিল ফাঁকা। পাওয়া যায়নি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। রোববার জেলা শহরের সরকারি দপ্তর ঘুরে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আহসান হাবীব নীলু বলেন, এই প্রথম দীর্ঘ ছুটি পেয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তার পরও প্রথম দিনে তাদের অনুপস্থিতি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে অযোগ্যতার শামিল।
১০টা ৩০ মিনিটে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, তালা ঝুলছে। প্রকৌশল কক্ষে ততক্ষণে উপস্থিত হননি একজনও। দুই-একজন কর্মচারীর দেখা মিললেও তারা খোশগল্পে মেতে ছিলেন। এর পর গন্তব্য মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১০টা ৩৮ মিনিট। সেখানেও কক্ষে তালা ঝুলতে দেখা যায়।
সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে প্রথমে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে ১০টা ৪২ মিনিটে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষে ঝুলছে তালা। যখন বেলা ১১টা ২০ মিনিট, গণপূর্ত অধিদপ্তরে ঢুকতেই পাওয়া গেল সুনসান নীরবতা। এসও, এসডির কক্ষ ছিল তালাবদ্ধ। গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে গিয়ে কথা বললে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘এসওরা সম্ভবত সাইটে থাকতে পারেন। খোঁজ নিলে সঠিক তথ্য জানা যাবে।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে গেলে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ হামিদুল হককে পাওয়া যায়। কিন্তু অন্য কর্মচারীরা ছিলেন অনুপস্থিত। এ বিষয়ে হামিদুল হক বলেন, ‘আমি হিসাবরক্ষক ইউসুফকে একটু বাইরে পাঠিয়েছি। অন্যরা আসছেন।’ উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরে ১০টা ৪৪ মিনিটে গিয়ে দেখা যায় একই অবস্থা। দপ্তরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে কয়েক কর্মচারী তড়িঘড়ি করে নিজের আসনে বসেন। কেউ বলেন, ‘স্যার ছুটিতে আছেন’। আবার কেউ বলেন, ‘স্যার সরকারি শিশু পরিবারে গেছেন, একটু পরে আসবেন।’ পরে সমাজসেবা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি বলেন, ‘জেলা অফিসে আছি’।
কুড়িগ্রাম উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক খ ম আতাউর রহমান বিপ্লব বলেন, দেশ পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে। কিন্তু বিগত সময়ে যারা আয়েশ-আমেজ করে লুটপাট করেছেন, তারা এখনও বহাল। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে নতুন রাষ্ট্রের দাবিদার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সততা ও নিষ্ঠার জন্যই জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে উল্লেখ করে গণঅধিকার পরিষদ সদস্য এস এম নুরে এরশাদ সিদ্দিকী বলেন, এসব অনিয়ম নতুন যুগে দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। আমলাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে গণঅধিকার পরিষদ সব সময় সোচ্চার।’
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে আমরা তাড়িয়েছি। আমলাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আমরা ফুঁসে উঠেছি, সফলতা পেয়েছি। তারপরও এসব অনিয়ম আমরা মানতে পারি না। যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে এনসিপি রাজপথে দাঁড়াবে। নতুন বাংলাদেশে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম পেলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা দিয়েও সাড়া মেলেনি।