কোটার অধিনায়ক বাভুমা ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে করমর্দন
Published: 15th, June 2025 GMT
আর মাত্র এক রান!
লর্ডস তখন থমথমে উত্তেজনায় ঠাসা। গ্যালারির প্রায় সব দক্ষিণ আফ্রিকান দাঁড়িয়ে, যেন নিশ্বাস আটকে রেখেছেন। ব্যালকনিতে সবাই উঠে দাঁড়ালেও একজন তখনো বসে—টেম্বা বাভুমা। গালে হাত, চোখ মাঠের ভেতরে। ঠিক যেন একটা জীবন ধরে যে স্বপ্নটা দেখে এসেছেন, সেই মুহূর্তটা এখন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে।
মিচেল স্টার্কের ফুলটস বলটা কাইল ভেরেইনার ব্যাটে লেগে ফাঁকা জায়গায় ছুটতেই কী যেন হলো। কেউ চিৎকার দিলেন, কেউ দিলেন লাফ, কেউ পাশের জনকে জড়িয়ে ধরলেন, কারও–বা চোখে জল। সেই উন্মাদনার কেন্দ্রে, ঠিক মাঝখানে, বাভুমা মাথাটা নিচু করে ফেললেন। যেন আড়াল করতে চাইলেন কিছু। জয় এসেছে। অবশেষে। একের পর ‘কাছে তবু কত দূরের’ যন্ত্রণা, ‘চোকার্স’ তকমার গ্লানি, আর একজন কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়কের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া মৌন সংশয়—সবকিছুই যেন সেই নত মাথার আড়ালে লুকিয়ে। চারপাশের হইচইয়ের মধ্যে ওই নিঃশব্দতায় তখন দুনিয়া–কাঁপানো চিৎকারও যেন নগণ্য।
কয়েক সেকেন্ড পর বাভুমা মাথা তুললেন। হয়তো আরেকটু সময় নীরবেই কাটিয়ে দিতেন। কিন্তু তাঁর চারপাশে তখন জড়ো হয়েছেন দলের অন্যরা। কেউ কাঁধে হাত রাখছেন, কেউ জড়িয়ে ধরছেন। লর্ডসের ব্যালকনিতে তখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের উদ্যাপন শুধু নয়, একটি জাতির আর একটি মানুষের জয়ের গল্পও লেখা হচ্ছিল।
বাভুমার গল্পে অনেক অধ্যায়। একটি কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান পরিবারে এমন এক সময়ে তাঁর জন্ম, যখন বর্ণবাদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্ধকারে মানুষ আলো খোঁজে, হতাশায় খোঁজে আশা। সে কারণেই কি না দাদি তাঁর নাম রেখেছিলেন টেম্বা। সোজা বাংলায় বললে ‘আশা’ বা ‘বিশ্বাস’।
পরিবারের বাইরে, নিজের পাড়ার বাইরে আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বাভুমাকে নিয়ে সবচেয়ে বড় আশাবাদের শুরুটা ২০১৪ সালে। সে বছরের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট অভিষেক তাঁর। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দলে সেটিই ছিল কোনো কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানের প্রথম ম্যাচ। তখন থেকেই বাভুমার বড় চ্যালেঞ্জটা হয়ে পড়ে দুটি।
প্রথমত, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো করা। খুব বিশেষ কিছু নয়, জাতীয় দলের হয়ে খেলা সব ক্রিকেটারের জন্যই এমন চ্যালেঞ্জ থাকে। কিন্তু বাভুমার জন্য এর চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানরাও যে ক্রিকেট খেলতে পারে, ব্যাটিং করতে পারে, দলের জন্য কিছু এনে দিতে পারে, সেটি প্রমাণ করা। আরও স্পষ্ট করে বললে দক্ষিণ আফ্রিকার জটিল সমাজব্যবস্থায় সেই চ্যালেঞ্জ জেতা, যেখানে প্রতিনিয়ত অনুচ্চারে প্রশ্ন ওঠে—কে খেলতে পারে আর কে পারে না, কে ব্যাট করতে পারে আর কে পারে না, কে অধিনায়ক হতে পারে আর কে পারে না, কে জিততে পারে আর কে পারে না।
দক্ষিণ আফ্রিকা দলের চাপের মধ্যে ভেঙে পড়া, নকআউট ম্যাচে হেরে যাওয়ার ঘটনা ১৯৯২ বিশ্বকাপ থেকেই ঘটে আসছে। বিভিন্ন ম্যাচে বিভিন্ন ধরনের কারণ। কোথাও নিজেদের ভুল, কোথাও আবহাওয়া–দুর্ভাগ্য। এর মধ্যে ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হার নিয়ে আলোচনা কিছুটা ব্যতিক্রম। বলা হয়ে থাকে, সেদিন কোটাপ্রথার কারণেই নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
ফাইনালে জায়গা করার ম্যাচটিতে কাইল অ্যাবোটকে বসিয়ে ভারনন ফিলান্ডারকে খেলিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। একাদশে অশ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়াতেই বোর্ড কর্তারা টিম ম্যানেজমেন্টকে চাপ দিয়ে তা করিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এটি অস্বীকার করলেও ২০১৬ সালে রীতিমতো ঘোষণা দিয়েই কোটাপ্রথা প্রবর্তনের ঘোষণা দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড সিএসএ। দলের মধ্যে ন্যূনতম ৫৪ শতাংশ অশ্বেতাঙ্গ রাখতে হবে, যার মধ্যে ১৮ শতাংশ হবে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান (এ সিদ্ধান্ত পরে পর্যালোচনা করা হয়)।
ওই কোটাব্যবস্থাই বাভুমার জন্য হয়ে ওঠে হিতে বিপরীত। দলে জায়গা করার মতো যথেষ্ট পারফরম্যান্স করলেও অনেকের চোখেই তিনি হয়ে ওঠেন ‘কোটার খেলোয়াড়’। ধারণাটা তীব্রতর হয়ে ওঠে ২০২১ সালের মার্চে বাভুমা অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর। শুরুতে ছিলেন টি–টোয়েন্টি ও ওয়ানডের অধিনায়ক, ২০২২ বিশ্বকাপের পর টি–টোয়েন্টি ছেড়ে দিয়ে টেস্টের দায়িত্ব নেন। বাভুমার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা
২০২১, ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোনোটিতে ভালো করেনি। দুই আসরেই বাদ পড়ে সুপার টুয়েলভ থেকে। ভালো খেলেননি বাভুমা নিজেও। তবে এ ধরনের ঘটনায় অন্যদের সমালোচনাটা সামর্থ্যকেন্দ্রিক হলেও বাভুমার জন্য তা ‘কোটা’র দিকে মোড় নেয়। এত কিছুর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড তাঁর ওপর আস্থা রেখেছে ভালোমতোই। ‘কোটার অধিনায়ক’ নামে ফিসফাস থাকলেও বাভুমাই থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দলের নেতৃত্বে। বিশেষ করে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে কুইন্টন ডি ককের হাঁটু মুড়ে সংহতি না জানানোর ঘটনায় ভূমিকা এবং দলের মধ্যে ঐক্য রক্ষার জন্য প্রশংসা কুড়ান একজন নেতার মতোই।
এরপর ২০২৩ সালে রানের মধ্যে থেকেই ভারতে বিশ্বকাপে খেলতে যান বাভুমা। এই আসরে দক্ষিণ আফ্রিকা লিগ পর্বে ৯ ম্যাচের ৭টিতে জিতে সেমিফাইনালে ওঠে। তবে বাভুমা ব্যাট হাতে রান না পাওয়ায় আর টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন ‘ক্যাপ্টেনস ডে’ অনুষ্ঠানে ঘুমিয়ে পড়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়ে ওঠেন ‘মিম ক্যারেক্টার’।
তবে সেসব ট্রল, ব্যর্থতা আর সংশয়—সব পেছনে ফেলে বাভুমা এখন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গর্বিত মুহূর্তের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ২০২৪ সালের ১৪ জুন, লর্ডসের মাঠে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট—একটি মুহূর্ত, যা এনে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত আইসিসি ট্রফি। ১২টি সেমিফাইনাল ও ১টি ফাইনালে হারের পর শেষমেশ আইসিসির শিরোপা জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা।
তবে বাভুমার জন্য মুহূর্তটি দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়িয়েও কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের জয়ে নিহিত। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথমবার যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, সেখানে বলেছিলেন, ‘প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান হিসেবে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার গভীর তাৎপর্য আমি বুঝি।’ সেদিন খেলার দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে একজন ‘লিগ্যাসি তৈরি করা’ অধিনায়ক হিসেবে পরিচিত করতে চাওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন বাভুমা। সেই লিগ্যাসিই তৈরি করেছেন লর্ডসে।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে কেপটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন বাভুমা। এর কয়েক দিন পর নিউল্যান্ডসের এসএসি জুনিয়র স্কুলে বছরের প্রথম টার্মের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের জন্য একটা লেখা নিয়ে আসেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। লেখাটি এই স্কুলের পুরোনো এক ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া। ২০০১ সালে নিউল্যান্ডসের এসএসি জুনিয়র স্কুলে গ্রেড সিক্সের শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছিল, ১৫ বছর পর তুমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাও, লেখো। একটি ছেলে লিখেছে, ১৫ বছর পর আমি নিজেকে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে দেখি, এ জন্য মিস্টার এমবেকির (দক্ষিণ আফ্রিকার তখনকার প্রেসিডেন্ট) সঙ্গে করমর্দন করছি।’
দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখা সেই ছেলেটার নাম টেম্বা বাভুমা। সেই বাভুমা দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন এত দিন। এবার জিতেছেন ট্রফি, যে ট্রফির জন্য দেশের অপেক্ষা দশকের পর দশকের। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা নিশ্চয়ই করমর্দন করবেন তাঁর সঙ্গে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার দিনই প্রেসিডেন্ট একটা টুইট করেছেন। সেই টুইটে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের পাশাপাশি বিশেষভাবে আছে বাভুমার নামও, ‘আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় প্রোটিয়াদের অভিনন্দন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে নিয়ে আমরা গর্বিত। এই জয় তোমার, এই জয় গোটা জাতির।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ভ ম র জন য ব শ বক প র প রথম ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
ডেঙ্গু-করোনায় দুই মৃত্যু, আক্রান্ত ২৭৫ জন
ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭৫ জন। তাদের মধ্যে ডেঙ্গুতে ২৪৯ ও করোনা নিয়ে ভর্তি ২৬ জন।
রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ ৩০০ শয্যার হাসপাতাল ডেঙ্গু ও করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্রস্তুত। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত ১০ ও ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ১৫ রোগী চিকিৎসাধীন। কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীদের ৬০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরে থেকে আসা। করোনা আক্রান্ত তিনজনকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে রোববার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন একজনসহ চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৩০ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৮৮ জনে। মারা যাওয়া ব্যক্তি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৩, ঢাকা বিভাগে ৯, চট্টগ্রামে ৩৯, ময়মনসিংহে ৭, খুলনায় ৮, রাজশাহীতে ৫, রংপুরে ৩ ও সিলেট বিভাগে একজন ভর্তি হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৬৫৯ জন।
আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে নতুন করে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা বিভাগের ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষ এ রোগী একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে চলতি বছর করোনায় চারজনের মৃত্যু হলো। নতুন করে ২৬ জনসহ এ বছর আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ২৪৬ জনে। গত এক দিনে ২৯১ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ রোগী পজিটিভ হয়েছেন।
ঢাকায় বাড়ছে বাইরের রোগী
ডেঙ্গু ও করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ হাসপাতালের ৩০০ শয্যা প্রস্তুত করেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এখানে ২৫ রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা তিনজনের অবস্থা জটিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চিকিৎসাধীন রোগীর বড় অংশ ঢাকার বাইরের। প্রকোপ বাড়লে আগের মতো ধাপে ধাপে লোকবলের পাশাপাশি শয্যা বৃদ্ধি করা হবে।
সরেজমিন হাসপাতালটির বহির্বিভাগে ২০ থেকে ৩০ রোগী ও তাদের স্বজনের ভিড় দেখা যায়। জ্বর-সর্দি নিয়ে এসেছেন। লক্ষণ দেখে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিলেও, অনেকেই তা না করে ফিরে যান। প্রায় আধা ঘণ্টার অপেক্ষায় অ্যাম্বুলেন্সে গাজীপুর থেকে এক রোগীকে পাওয়া যায়। স্বজন জানান, চার দিন ধরে শরীর ব্যথা, জ্বর। পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত না হওয়ায় এ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
মাকে ভর্তি করেছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার ইউনিয়নের বাহার হোসেন। তিনি সমকালকে জানান, স্থানীয় হাসপাতালে অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ডিএনসিসি হাসপাতালে মাকে নিয়ে এসেছেন তিনি। বর্তমানে অবস্থা ভালো। পেটে একটু ব্যথা আছে, আলট্রাসনোগ্রাম করে ছাড়পত্র দেবেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল তানভীর আহমেদ জানান, গত মাস থেকে রোগী বাড়ছে। মে মাসে করোনা নিয়ে ভর্তি হন ২৪ জন। এ মাসের ১৫ দিনে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। ডেঙ্গু নিয়ে মে মাসে ভর্তি হন ৪৭ জন। চলতি মাসে এ পর্যন্ত এসেছেন ২৬ জন। রোববার বহির্বিভাগে পাঁচ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ রোগী আসছেন জ্বর-সর্দি ও গায়ে ব্যথা নিয়ে। গুরুতর রোগীরা অন্য হাসপাতালের রেফারে আসছেন।
বাইরের রোগী বেশি হলেও তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভর্তি রোগীদের ৬০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।
কর্নেল তানভীর আহমেদ বলেন, হাসপাতালে প্রতিটি শয্যার সঙ্গে অক্সিজেন লাইন রয়েছে। বর্তমানে একসঙ্গে ৩০০ শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। ৪৫ আইসিইউ সক্রিয়, ৭৯ চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন ৮৪ জন।
চট্টগ্রামে দুই হাসপাতালে শুরু পরীক্ষা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ৬৫ শয্যা করোনা চিকিৎসায় প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল এখানে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে রোগীদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। দুই হাসপাতালে বর্তমানে তিনজন চিকিৎসাধীন। পাঁচ শয্যার আইসিইউ প্রস্তুত করার কথা থাকলেও পারেনি কর্তৃপক্ষ। আজ তিনজনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের করোনা শনাক্ত হয়।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত হলেও যন্ত্রপাতির অভাবে আইসিইউ শয্যাগুলো সক্রিয় করা সম্ভব হয়নি।’ চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘আপাতত ডেঙ্গু ওয়ার্ডকে করোনা রোগীর জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। আইসিইউ প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করব।’
খুলনার পিসিআর ল্যাব বিকল
খুলনা ব্যুরো জানায়, জেলায় সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষার একমাত্র আরটিপিসিআর ল্যাব খুলনা মেডিকেল কলেজে। মেরামত না করায় দীর্ঘদিন পিসিআর ল্যাবটি বিকল পড়ে আছে। বর্তমানে র্যা পিড অ্যান্টিজেন্ট কিট দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
খুমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান জানান, ৪০ শয্যা করোনা রোগীর জন্য প্রস্তুত করেছেন তারা।
সিলেটের দুই বন্দরে বিকল থার্মাল স্ক্যানার
সিলেট ব্যুরো জানায়, সরকারি নির্দেশে সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এর অধীনে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে এখানে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে। অবশ্য গত শুক্রবার শামসুদ্দিন হাসপাতালে দুই করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্যের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, দুই নারী-পুরুষ চিকিৎসাধীন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
এদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তামাবিল স্থলবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার বিকল হয়ে যাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা মাপা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ওসমানী বিমানবন্দরে বিকল্প পদ্ধতি ইনফারেড থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।