দেশে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে গুগল পে
Published: 17th, June 2025 GMT
দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে গুগলের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা—গুগল ওয়ালেট, যা ‘গুগল পে’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে নতুন যুগের নিরবচ্ছিন্ন ডিজিটাল লেনদেনের দ্বার উন্মোচিত হবে।
গুগল, মাস্টারকার্ড ও ভিসার সহযোগিতায় বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক এই নগদবিহীন লেনদেন সেবা চালু করছে। ২৪ জুন ঢাকার একটি হোটেলে গুগল পে সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স—সিডিএ) ট্র্যাসি এন জ্যাকবসন, সিটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হোসেন খালেদ উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
জানা যায়, গুগল পের সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রথম স্থানীয় ব্যাংক হতে যাচ্ছে সিটি ব্যাংক। যার মাধ্যমে গ্রাহকেরা পণ্য কেনাকাটায় অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহার করে যেকোনো পয়েন্ট-অব-সেল (পিওএস) টার্মিনালে অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে শুধু সিটি ব্যাংকের গ্রাহকেরা তাঁদের মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ড গুগল ওয়ালেটে যুক্ত করে গুগল পে ব্যবহার করতে পারবেন। ভবিষ্যতে অন্যান্য ব্যাংক গুগল পের সঙ্গে যুক্ত হলে তাদের কার্ডও যুক্ত করার সুযোগ আসবে।
দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন, গ্রাহকেরা তাঁদের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের মাধ্যমে গুগল পে দিয়ে দ্রুত, নিরাপদ এবং স্পর্শবিহীন লেনদেন করতে পারবেন। এমন তথ্য দিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি পেমেন্ট গেটওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গুগল পের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখনকার মতো কার্ড আর বহন করতে হবে না। শুধু সঙ্গে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন থাকলেই লেনদেন করা যাবে।
গুগল পে সেবাটি ব্যবহারের জন্য গ্রাহকদের একটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন থাকতে হবে। প্রথমেই প্লে স্টোর থেকে গুগল পে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। তারপর সেই অ্যাপে সিটি ব্যাংকের কার্ডের তথ্য দিয়ে সেটি যুক্ত করতে হবে। কার্ড যুক্ত করার পর গ্রাহকেরা শুধু স্মার্টফোন ট্যাপ করেই বিভিন্ন দোকান ও রেস্তোরাঁয় অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন, যেখানে মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ড গ্রহণযোগ্য। এ লেনদেনের জন্য ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে কোনো ফি বা মাশুল নেয় না গুগল।
জানা যায়, এ সেবায় টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এতে মূল কার্ডের তথ্যের পরিবর্তে একটি ইউনিক টোকেন ব্যবহৃত হয়। ফলে লেনদেনের সময় প্রকৃত কার্ড বা গ্রাহকের তথ্য কারও সঙ্গে শেয়ার হয় না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক ত কর গ র হক র ব যবহ র প রব ন গ গল প ল নদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।