ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের যাত্রা শুরু হয়েছে সাত বছর আগে, কিন্তু আজও নগরীর নাগরিকেরা, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের প্রায় দেড় লাখ মানুষ সুপেয় পানির মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলেও ওয়াসার মতো পানি সরবরাহের কোনো প্রতিষ্ঠানই গড়ে ওঠেনি। নগরবাসীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও পুরোনো পৌরসভার সেবাই চালু আছে। আর কত বছর পার হলে সিটি করপোরেশনের প্রকৃত সেবা পাবেন নগরবাসী? 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ময়মনসিংহ শহরে ১৩৬ বছর আগে মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী যান্ত্রিক উপায়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি শোধন করে সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই শহরে আজ মানুষ টাকায় কিনে পাচ্ছেন দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানি। প্রতি মাসে সিটি করপোরেশনকে টাকা দেওয়ার পরও লাইনে যে পানি আসে, তা ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত এবং তাতে পোকা ও শামুক পর্যন্ত পাওয়া যায়। এই পচা পানি ব্যবহার করে অনেকের শরীরে চুলকানির মতো নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

সিটি করপোরেশন হওয়ার পর নগরের পরিসর বেড়েছে, নগরবাসীর সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু পানির সংযোগ পৌরসভা আমলের। ফলে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয়ে পানি সরবরাহ করতে হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে। চাহিদা, ঘাটতি ও সামর্থ্যহীনতার কারণে শহরটিতে পানি সরবরাহ নিয়ে চরম অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে, কোনো সন্দেহ নেই। আবার আয়ের তুলনায় ব্যয়ের যে হিসাব দেখা যাচ্ছে, তাতে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, সেটিও অনুসন্ধানের বিষয়।

ময়মনসিংহে পানির সরকারি সংযোগ আছে মাত্র সাত হাজার পরিবারের। অন্যদিকে প্রায় দেড় লাখ নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা মেটাতে সিটি করপোরেশন অনুমোদনের মাধ্যমে বা গোপনে সাড়ে ২২ হাজারের বেশি সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনকে উৎসাহ জুগিয়েছে। এই অনিয়ন্ত্রিত পাম্প স্থাপন ও ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদেরা।

সিটি করপোরেশনের বক্তব্য, সিটি করপোরেশন হওয়ার পর জনসংখ্যা বাড়লেও পানি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়েনি এবং রাজস্ব আয় সামান্য হওয়ায় সরকার থেকে বিশেষ প্রকল্প না পেলে বড় কোনো উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষমতা নেই।

 জানা যাচ্ছে, সিটি করপোরেশন হলেও এর নিজস্ব জনবল কাঠামোই এখনো ঠিক হয়নি। পৌরসভার জনবল দিয়েই চলছে সিটি করপোরেশন। প্রশ্ন হচ্ছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন কত দিন ‘নামকাওয়াস্তে’ সিটি করপোরেশন হয়ে থাকবে। নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আমরা জোরালো আহ্বান জানাই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরবর হ নগরব স প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

কমেছে মাছ মুরগি ও সবজির দাম

সরবরাহ ভালো থাকায় কমেছে মাছ মুরগি ও সবজির দাম। বিক্রেতারা বলছে গত সপ্তাহে তুলনায় এ সপ্তাহে প্রায় সবজি ও চাষের মাছের দাম কমেছে গড়ে বিশ থেকে ত্রিশ টাকা পর্যন্ত। 

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সপ্তাহে সবজি বাজারে সরবরাহ ভালো থাকা দাম কমেছে। গত সপ্তাহে যে বেগুন বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায়, সেই বেগুন এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে সিম বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে মূলা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায় এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।

এছাড়াও এখন বাজারে প্রতি কেজি দেশি শশা ৮০টাকা, করলা ১০০ টাকা, গাজর (দেশি) ৮০ থেকে ১০০টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, কাঁচমরিচ ১০০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ও লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, নতুন আলু ১০০ টাকা এবং জলপাই ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কমেছে মাছ ও মুরগির দাম 
বাজারে চাষের মাছের সরবরাহ বাড়ার কারণে মাছের দাম কমেছে। বিক্রেতারা বলছে গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে চাষের মাছে কেজি প্রতি গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এ সপ্তাহে বাজারে মাঝারি আকারের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০টাকায়। চাষের পাঙাস আকার অনুযায়ী কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, মাঝারি আকারের কৈ মাছ ২০০ থেকে ২২০, দেশি শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, দেশি পাঁচমেশালি ছোট মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ও ৪০০ গ্রাম ওজনের পদ্মার ইলিশ ১২০০টাকা এবং চট্টগ্রামের ইলিশ ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে কমেছে মুরগির দাম। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়। গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায় এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।

এ সপ্তাহেও মুদি পণ্য উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। এ সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। রসুন (দেশি)১০০ টাকা ও আদা ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করছে সাধারণ ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করেছেন। অর্থাৎ, প্রতি লিটারে দাম বাড়ানো হয়েছে ৯ টাকা। একইভাবে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গত বুধবার সাংবাদিকদের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “ব্যবসায়ীরা যে প্রক্রিয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছেন, এর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকার কিছুই জানত না। কোম্পানিগুলো সামগ্রিকভাবে একত্র হয়ে এ কাজটি (ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো) করেছে। এই কাজটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।”

কী বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা
রাজধানীর রায়েরবাজারে কেনাকাটা করছিলেন শিক্ষার্থী হান্নান শাহ। তিনি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “সবজির দাম কমছে ঠিক আছে। কিন্তু মুদিবাজারে ও সয়াবিন তেলের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটরা মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। কারণ মানুষ কিনতে বাধ্য। তাদের প্রতি সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ করা উচিত।”

কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা আলম বেপারী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “গত সপ্তাহে তুলনায় এ সপ্তাহে মাছের দাম কমেছে। সামনে আরো কমতে পারে। কারণ এখন চাষের মাছের সরবরাহ বেড়েছে।”

ঢাকা/রায়হান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্পের শুল্কের আঘাতে বড় সংকটে ভারত
  • ভারতকে ‘নিরবচ্ছিন্নভাবে’ জ্বালানি সরবরাহ দিতে প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন
  • কমেছে মাছ মুরগি ও সবজির দাম
  • কোরআন ও সুন্নাহর আইন চালু করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি: জামায়াত নেতা মুজিবুর
  • জাতীয় ক্রিকেট লিগ: শেষ রাউন্ডে শিরোপার ফয়সালা
  • মমেক হাসপাতালে ২ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু
  • দিনভর আনন্দ উৎসবে ‘সোনার মানুষ’ হওয়ার প্রত্যয়
  • শেষ রাউন্ডেই শিরোপার নিষ্পত্তি, প্রিতম–সোহাগের সেঞ্চুরি
  • ময়মনসিংহে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি–প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব
  • ময়মনসিংহে ভোরের কুয়াশা মাড়িয়ে স্বপ্নবাজদের ভিড়