শিশুশ্রম প্রতিরোধ গ্রাম থেকে শুরু হোক
Published: 17th, June 2025 GMT
শিশুশ্রম বলতে সাধারণত এমন কাজকে বোঝায়, যা শিশুদের শৈশব, সম্ভাবনা ও আত্মসম্মান কেড়ে নেয় এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। এমনই এক শিশুশ্রমিক পাভেল। এক হাতে শক্ত করে ধরা লেগুনার হ্যান্ডেল, আরেক হাতে খুচরো টাকার নোটে ভাড়ার হিসাব মিলাতে মিলাতে জীবনযুদ্ধের গল্প শোনায় বেড়িবাঁধের ভাঙাচোরা রাস্তায় চলন্ত লেগুনার পেছনে ঝুলে থাকা ১২ বছরের কিশোর পাভেল।
গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের কাছেই ট্রাফিক বক্সের পেছন থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০ লেগুনা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যাওয়া-আসা করে, যার প্রায় প্রতিটিতেই ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী পাভেলের মতো শিশু-কিশোরদের চোখে পড়ে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় দুই বছর আগে আর্থিক সংকটে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় পাভেলের পরিবার। পাভেলের মতো আরও অসংখ্য শিশু অর্থনৈতিক সংকট, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং দারিদ্র্যের কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেছে নিয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পেশা। তাদের প্রত্যেকেরই জীবনের কোনো না কোনো এমন গল্প আছে, যা হয়তো আপনার মনে দাগ কেটে যাবে।
বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, নিয়োগকর্তার সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে শিশুদের কর্মসংস্থানে প্রবেশের বয়স নির্ধারণের জন্য জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২ অনুযায়ী বয়সসীমা বিবেচনা করা হয়েছে। এ জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার । ২০১৩ সালের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কিছুটা কমলেও শিশুশ্রমিকের সার্বিক সংখ্যা এখনও বেশ উদ্বেগজনক। তবে এই জরিপে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হ্রাসের যে প্রবণতা দেখা গেছে, তাতে আশা করা যায়, ভবিষ্যতে শিশুশ্রম হয়তো আরও কমবে। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এসডিজি লক্ষ্য ৮.
বাংলাদেশে শিশুশ্রমের কারণগুলো আমরা সবাই কম-বেশি জানি। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ হলো– অর্থনৈতিক কষ্ট ও দারিদ্র্য, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, শিক্ষা ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ও প্রথা, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, দুর্যোগ ও জরুরি অবস্থা, বাজারের চাহিদা এবং নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবসা পরিবারের অসচেতনতা ইত্যাদি। সুতরাং উল্লিখিত কারণগুলো নিরসন করতে না পারলে শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
সরাসরি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে স্থানীয় কিছু সংস্থার সফলতা দেখে আমি কিছুটা আশার আলো দেখতে পাই। শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গড়া অবশ্যই সম্ভব যদি কার্যক্রম বাস্তবায়নের কৌশল পরিবর্তন করে বাস্তবতার নিরিখে স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করা যায়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে স্থানীয় জনসাধারণ, প্রশাসন, শিশুকল্যাণ সংস্থা, মিডিয়া, শিশু সংস্থা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে হাতে হাত রেখে কাজ করা। শুরুটা করতে হবে গ্রাম, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা পর্যায় থেকে। এ জন্য উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থাকে শিশুশ্রমমুক্ত এলাকা নির্ধারণে একমত হতে হবে; নির্ধারিত এলাকায় কর্মরত ১০০% ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রমিকের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে; সে তালিকা ধরে বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা করতে হবে। শিশু ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে পরিকল্পনা প্রণয়ন; স্কুলে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা; প্রয়োজনে অর্থনৈতিক সহায়তা ও পারিবারিক কাউন্সেলিং নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারের সদিচ্ছা, বাস্তবসম্মত কার্যকরী পদক্ষেপ, উন্নয়ন সহযোগীদের সম্পৃক্ততা থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমমু্ক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। গ্রাম, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলার মতো স্থানীয় পর্যায় থেকে ধীরে ধীরে জেলা এবং জাতীয় পর্যায়ে শিশুশ্রমমুক্ত আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে দিতে হবে। দুই দশকের বেশি সময় বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, জাতীয় পর্যায়ে যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে চাইলে গ্রাম থেকেই শুরু করা উচিত। সরকার ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা স্থানীয় পর্যায়ে শিশুশ্রমমু্ক্ত এলাকা ঘোষণা করতে সফল সংস্থাগুলোর গাইডলাইনও চাইলে অনুসরণ করতে পারে।
মো. জামাল উদ্দিন: ন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি কো-অর্ডিনেটর, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ
jamaluddin@wvi.org
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য় পর য য়
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের বেতন বাড়াল বিসিবি
জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটারদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আজ মিরপুরে বিসিবি পরিচালকদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এত দিন ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা মেয়েরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেতেন। তাঁদের বেতন ৪০ হাজার টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটাররা পেতেন ১ লাখ টাকা করে বেতন। তাঁরা এখন থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বেতন পাবেন।
‘সি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটারদের বেতন ৭০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে আর ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ৬০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া জাতীয় দলের অধিনায়কদের জন্য ৩০ হাজার ও সহ-অধিনায়কদের জন্য ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া নারী ক্রিকেটারদের নতুন চুক্তিতে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আছেন তিন ক্রিকেটার—নিগার সুলতানা, নাহিদা আক্তার ও শারমিন আক্তার। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আছেন ফারাজনা হক, রিতু মনি, ফাহিমা খাতুন, মারুফা আক্তার, রাবেয়া খান ও সোবহানা মোস্তারি। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আছেন স্বর্ণা আক্তার।
‘ডি’ ক্যাটাগরিতে আছেন সুমাইয়া আক্তারর, ফারিহা ইসলাম, রুবাইয়া হায়দার, সানজিদা আক্তার, নিশিতা আক্তার। এই চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের কেউ জাতীয় দলে এলে মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন পাবেন।