ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার জনপ্রিয় গন্তব্য মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। বিরল প্রজাতির নানা জাতের গাছ ও প্রাণীতে ভরা সংরক্ষিত বন এটি। তবে পর্যটকের অনিয়ন্ত্রিত ভিড় ও হইহুল্লোড় ‘উৎপাত’ হিসেবে দেখা দেয়।

বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, লাউয়াছড়া সহব্যবস্থাপনা কমিটি, ট্যুর গাইড ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, চা-বাগান, পাহাড়-প্রকৃতি, হাওর-বাঁওড়ের কারণে মৌলভীবাজার একটি পর্যটন জেলা হিসেবে পরিচিত। তবে কিছু এলাকা আছে বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য স্পর্শকাতর। এর মধ্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একটি। এবারের দীর্ঘ ছুটিতে ৭ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সাত দিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৭ হাজার ৫৮১ জন দর্শনার্থী ঘুরতে গেছেন। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৫ টাকা।

বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আয়তন ১ হাজার ২৫০ হেক্টর। সরকার ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। উদ্যানটি ১৬৭ প্রজাতির গাছ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ (৩৯ প্রজাতির সাপ, ১৮ প্রজাতির লিজার্ড, ২ প্রজাতির কচ্ছপ), ২২ প্রজাতির উভচরসহ অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র।

লাউয়াছড়া সহব্যবস্থাপনা কমিটির মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, পর্যটনের ক্ষেত্রে লাউয়াছড়ার বন্য প্রাণী, পরিবেশ-প্রকৃতির এই বাস্তবতাকে অনেকটাই বিবেচনায় রাখা হয় না। পর্যটকেরা অন্য স্থানের মতো এখানেও ঘোরার আনন্দতে হইহুল্লোড় করেন। বেশির ভাগ পর্যটকদের মধ্যে গাইড সঙ্গে নিতে অনীহা আছে। বনের ভেতর করণীয় আচরণ অনুসরণ করেন না অনেকে। অনেক পর্যটক ব্লুটুথ স্পিকারে গান বাজিয়ে বনে ঘুরেন। বন্য প্রাণী বিশেষ করে বানরকে উত্ত্যক্ত করার প্রবণতা দেখা যায় অনেকের মধ্যে। প্লাস্টিক প্যাকেট নির্ধারিত স্থানে না ফেলে যেখানে-সেখানে ফেলে রাখেন। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে গাড়িগুলো উচ্চ গতিতে হর্ন বাজিয়ে চলাচল করে। সব মিলিয়ে বনের নির্জনতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

পর্যটকের ভিড়, হইহল্লোড়ের কারণে যে প্রাণীদের অসুবিধা হয়, সেটা স্বীকার করে নিলেন পর্যটক সুভাষ বড়ুয়া।

পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, মানুষের উপস্থিতি, শব্দ—এসবে আতঙ্কিত বন্য প্রাণী অনেকটাই দিশাহারা হয়ে পড়ে। গভীর বনের মধ্যে আত্মগোপনে চলে যায়। কিছু বানর ছাড়া আর তেমন কোনো প্রাণীর দেখা মিলে না। তাদের স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়।

প্রাণপ্রকৃতি গবেষক পাভেল পার্থ ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের পরবর্তী সময়ের একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর লাউয়াছড়ার আরেক সর্বনাশ করেছে অপরিকল্পিত বাণিজ্যিক পর্যটন। এই বনের পর্যটক ধারণক্ষমতাকে গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণে মানুষ ঢুকেন এখানে। এটি এখানকার বন্য প্রাণীর খাদ্যাভ্যাস, চলাচল ও প্রজননে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। একই সঙ্গে বনের ভেতর রেলপথ, ব্যস্ত সড়কপথ প্রতিদিন বন্য প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাউয়াছড়া কোনো একক বিচ্ছিন্ন বাস্তুতন্ত্র নয়। এর আশপাশের চা-বাগান, জলাভূমি, গ্রাম, বন—সবকিছু মিলিয়েই এর সীমানা নির্ধারণ এবং স্থানীয় বননির্ভর জনগণকে সমন্বয় করে বাস্তুতন্ত্রভিত্তিক বনব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দরকার।

লাউয়াছড়া সহব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও মনিটরিং দলের সদস্য জনক দেববর্মা মনে করেন, বনে গণপর্যটন বন্ধ করলে বনের উপকার হবে। আর পর্যটকদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শ্রীমঙ্গলের রেঞ্জার কাজী নাজমুল হক বলেন, লাউয়াছড়ায় পর্যটক সীমিত করতে টিকিটের ফি বাড়ানো হয়েছে। কীভাবে পর্যটক সীমিত করা যায়, বিকল্প কী তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মধ্যে চিন্তাভাবনা আছে। সড়কে ২০ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ করা, কিন্তু তা কেউ মানতে চান না। এখানে হাইওয়ে পুলিশ নিয়োগ দরকার। বন্য প্রাণী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের বিচরণে বন্য প্রাণীরা একটু আড়ালে থাকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র বন য প র ণ বন য প র ণ র প রক ত স রক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে পিবিআইর হাজতখানা থেকে আসামির লাশ উদ্ধার

মৌলভীবাজারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাজতখানার ভেতর থেকে মোকাদ্দুস (৩২) নামে আসামির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে পিবিআই।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে মৌলভীবাজার জেলা শহরের টিভি হাসপাতাল সড়কে পিবিআইর হাজতখানা থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়। 

মোকাদ্দুস কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের কোনাগাঁও (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে। তিনি আলোচিত লিটন হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ৯ আগস্ট কমলগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর পতনঊষার ইউনিয়নের কোনাগাঁও (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের ধানক্ষেত থেকে লিটন নামের এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে মোকাদ্দুস পলাতক ছিলেন। রবিবার রাত ৮টার দিকে কমলগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন মোকাদ্দুস। পরে তাকে লিটন হত্যার মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করে থানা পুলিশ।

পিবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর খাওয়া-দাওয়া শেষে মোকাদ্দুসকে ৭-৮ জন আসামির সঙ্গে হাজতখানায় রাখা হয়। সোমবার ভোর ৬টার দিকে ডিউটি অফিসার গিয়ে দেখেন, মোকাদ্দুস নিজের লুঙ্গি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও মোকাদ্দুসের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

১১ সেপ্টেম্বর লিটনের বাবা সাত্তার মিয়া অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এ মামলায় শামিম নামের আরেকজনকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। 

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পিবিআইর পুলিশ সুপার মো. জাফর হুসাইন বলেছেন, লিটন হত্যা মামলার তদন্ত আমাদের হাতে। মোকাদ্দুস রবিবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সোমবার সকালে হাজতখানায় আত্মহত্যা করেন তিনি। বিষয়টি আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি।

ঢাকা/আজিজ/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সৈকতে নারী পর্যটকদের গোসলের ভিডিও ধারণ, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কারাদণ্ড
  • মৌলভীবাজারে পিবিআইর হাজতখানা থেকে আসামির লাশ উদ্ধার